পেঁয়াজের দাম একশো টাকার ওপরে কোনভাবেই উঠতে পারে না, এটা গাণিতিক সত্য

ইফতেখার জামিল ।।

পেঁয়াজের দাম দুইশ টাকা হয়ে গেছে। এর জন্য সরাসরি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দায়ী। পেঁয়াজের দাম একশো টাকার ওপরে কোনভাবেই উঠতে পারে না, এটা গাণিতিক সত্য। কে কত টাকা লুট করছে, এটা হিসাব করে বের করে দেওয়া যাবে। বিশ্বায়নের সুবাদে পৃথিবীর বাজারটা সংযুক্ত জলাশয়ের মতো হয়ে গেছে। সংযুক্ত জলাশয়ের একদিকে পানি কম আরেকদিকে বেশী, এটা হওয়া যেমন সম্ভব নয়, তেমনি একদিকে পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া আরেকদিকে দাম তলানিতে, এটা সরকারি ব্যর্থতা ছাড়া হওয়া অসম্ভব। টাকাটা কিছু লবি নিয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে না। নইলে বেক্সিমকো ও এস আলমের মতো কোম্পানিগুলো পেঁয়াজ ব্যবসায় নামার কথা না।

এবার দেখুন, কৃষক ধানের দাম পাচ্ছেন না, দাম কম থাকায় বাংলাদেশের কৃষকদের পেটে লাথি মেরে ধান আমদানি করা হচ্ছে। আবার সাধারণ মানুষ দেড়শ-দুইশ টাকায় চামড়া বিক্রি করেছে, আড়তদাররা ট্যানারিতে হস্তান্তর করেছে তেরশ টাকায়। ছয়-সাতগুণ বেশী। কয়েকদিন আগে দেখলাম, সরকার আরও পাঁচ বছরের জন্য চামড়া খাতকে প্রণোদনা দিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রণোদনা যে জনগণের টাকায় দিচ্ছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যাদের ট্যাক্সে চলছে, তারাই আজকে ভালো নেই। তাহলে মানুষ ট্যাক্স দিবে কেন, এটা কি ফ্রি মার্কেট নাকি কতিপয়তন্ত্র? পৃথিবীর অনেক দেশেই গণতন্ত্র নেই, তবে বাজারব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে টিকে আছে। বাংলাদেশে এর কিছু কি বাকি আছে? এভাবে তো কোন দেশ টিকে থাকতে পারে না।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে বড় ধরণের ব্যাংক ক্রাশ হতে যাচ্ছে, বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে। সাথেসাথে বাড়ছে আমলাতন্ত্রের আয়তন। গার্মেন্টস ও বৈদেশিক বাজার পড়ে যেতে পারে, মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক ছাটাই চলছে। বিপর্যয় ঘটলে কীভাবে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হবে, তার কোন আলামত নেই। কয়েকদিন আগে সিপিডি বাংলাদেশের অর্থনীতির বিপর্যয়ের প্রতিবেদন প্রকাশ করলে অর্থমন্ত্রী তাদের হুমকি দিয়ে বলেছেন, সিপিডি টাকা কোথা থেকে পায়, সেটা তিনি দেখে ছাড়বেন, এগুলো কেমন ভাষা, এটা তো একজন মন্ত্রীর ভাষা হতে পারে না।

যে ড্রিম নিয়ে তরুণরা পড়াশোনা ও পরিশ্রম করে, আগামীর স্বপ্ন দেখে, সম্মানজনক চাকরি, ঢাকায় ফ্লাট, নিয়ন্ত্রিত দ্রব্যমূল্য, সন্তানদের পড়াশোনা – এই জরুরি বিষয়গুলো আমাদের প্রজন্মের অধিকাংশ ছেলে অর্জন করতে পারবে না। আপনারা যারা ইন্টালেকচুয়াল বা সাহিত্য-সংস্কৃতি করেন, তাদের অধিকাংশই শহুরে সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণীর সন্তান বা অসাধারণ মেধাবী। এই সঙ্কটে আপনাদের কিছু হবে না সত্য, তবে কোটি কিশোর ও তরুণের ভবিষ্যতটাও আপনার পড়তে জানতে হবে। যে তরুণ এক রুমের মেসে তিনজনের সাথে শেয়ারে থাকে, চারটা টিউশনি ও সারাদিন চাকরির পড়া পড়ে রাতে গরমের মধ্যে ঘুমিয়ে যায়, ঐ তরুণরাও আপনার ভাই ও বন্ধু।

প্রিয়জনের কঠিন রোগ বা মৃত্যুতে পরিবারের পর পরিবার দেওলিয়া হয়ে যায়। সোশ্যাল অয়েলফেয়ারের অবস্থা যাচ্ছেতাই। সরকারি হাসপাতালে সেবা নাই, উপযুক্তরা বয়স্ক ভাতা পায় না। একটা ভয়াবহ সার্কাস চলছে। এ থেকে উত্তরণ দরকার।

[লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া]

পূর্ববর্তি সংবাদরোহিঙ্গা গণহত্যায় জড়িত থাকার দায়ে সুচির বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনায় মামলা
পরবর্তি সংবাদমিশরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ-ইসরায়েল