বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ চত্বর : জমজমাট বইমেলা থেকে যে প্রশ্ন নিয়ে ফিরলাম

এনাম হাসান জুনাইদ ।।

“আপনারা তো আমাদেরকে দরিদ্র বানিয়ে দিলেন।” বইয়ের পর বই পসন্দ করে দাম চুকানোর সময় এভাবেই রসিকতা করছিলেন এক ক্রেতা। জিজ্ঞেস করে জানা গেল, ভদ্র লোকের বাড়ি মাগুড়া। থাকেন যাত্রাবাড়ির দিকে। কাজ করেন ইবনে সীনা ফার্মেসীতে। বইপড়া তার প্রধান শখ। তাই সুযোগ পেয়েই বায়তুল মোকররমে চলে এসেছেন বই কেনার জন্যে।

সীরাতুন্নবী উপলক্ষ্যে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ চত্বরে মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলা ধীরে ধীরে জমে উঠছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গত ১০ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ইসলামী বই প্রেমিকরা ছুটে আসেন পসন্দের বই কেনার জন্যে, কেউ আসেন নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নেওয়ার জন্যে।

শুক্রবার দুপুরে এই প্রতিবেদকও উপস্থিত হয়েছে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নেওয়ার জন্যে।  চত্বর ঘুরে দেখা গেল, মেলায় ছোট বড় অর্ধ শতাধিক বইয়ের স্টল অংশগ্রহণ করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে- এমদাদীয়া লাইব্রেরি, সোলাইমানিয়া বুক হাউস, মুহাম্মদীয়া কুতুবখানা, মিনা বুক হাউস এবং ঐতিহ্যবাহী নতুন পুরাতন আরও অনেক লাইব্রেরি।

Image may contain: 3 people, outdoor

স্টলগুলোতে কুরআন-হাদিস গ্রন্থের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন ইসলামী শিক্ষামূলক বই, ইসলামে হালাল ও হারাম, বিশ্বনবীর জীবনী, তাজকেরাতুল আউলিয়া, নূরানি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ২৪ ঘণ্টায় কুরআন শিক্ষা, রাসূল সা:-এর ২৪ ঘণ্টার আমল, ইমাম গাজ্জালির জীবনী, গিবত ও চোগলখোরির ধ্বংসলীলা, মরণের আগে ও পরে প্রভৃতি গ্রন্থ।

শুক্রবার ছুটির দিন হওয়াতে দোকানে ক্রেতাদের ভিড় একটু বেশীই ছিল।

মনে মনে খুঁজতে লাগলাম পরিচিত কয়েকটা বইয়ের দোকান। মাকতাবাতুল আশরাফ, আযহার, আফনান, রাহনুমা। অবশেষে এক মাথায় খুঁজে পেলাম মাকতাবাতুল হাসান। পাশে আছে হুদহুদ প্রকাশনী, গার্ডিয়ান প্রকাশনী।

Image may contain: 2 people, people sitting and hatদোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মাকতাবাতুল হাসানের মালিক রাকিব হাসান। জনাব রাকিব হাসানের কাছে জানতে চাইলাম, ইসলামী ঘরানার অভিজাত প্রকাশনাগুলো এখানে অনুপস্থিত কেন?

রাকিব হাসান বললেন, ওনারা আসছেন না কেন তা তো আমি জানি না। তবে আমি অনেককেই আসার জন্যে বলেছি।

“একুশে বইমেলা হয় একবার । তাও আমাদেরকে সেখানে যেতে দেয় না। কিন্তু এখানে বায়তুল মোকাররমে বইমেলা হয় দুবার। যদি আমরা এখানে দুবারই অংশ গ্রহণ করতে পারি তাহলে দেখা যাবে, বই মেলার চেয়েও আমাদের প্রচার প্রসার কম হবে না।”

রাকিব হাসান আরও বলেন, “ এখানে আমরা যদি না আসি, ইসলামী অভিজাত প্রকাশনাগুলো যদি না এখানে না আসে তাহলে দেখা যাবে কিতাবমেলায় কিতাবের তুলনায় আতর তসবিহ টুপির দোকানই থাকবে বেশী। আমি এগুলো না থাকার কথা বলছি না। কিন্তু বইমেলায় এগুলোর প্রাধান্য কেমন দেখায়?” যোগ করেন রাকিব হাসান।

কথা হল প্যারাডক্সিকেল সাজিদ বইয়ের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গার্ডিয়ানের প্রুফ রিডিং বিভাগের দায়িত্বশীল নাজমুল হুদার সাথে। তিনি জানালেন, তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের শুরু থেকেই এখানে অংশ গ্রহণ করছেন।

এর আগে গার্ডিয়ানের প্রকাশক জনাব নূর মুহাম্মদ সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের কিতাব মেলার জন্যে ব্যাপক প্রচার অভিযান চালিয়েছিলেন। এবারের মেলায় বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি তারা শায়খ ইউসুফ কারযাবী রচিত ‘মুমিন জীবনে সময়’, ‘মুমিন জীবনে পরিবার’ নামে দুটি বইও প্রকাশ করেছেন বলে জানালেন।

ইসলামী অভিজাত প্রকাশনাগুলো এই বইমেলায় কেন আসছেন না? এমন প্রশ্নের উত্তর এখনো খুঁজে পেলাম না। তবে অভিযোগ রয়েছে, ইসলামী প্রকাশনারগুলোর সাথে ফাউন্ডেশনের এক ধরনের বিমাতাসুলভ আচরণ কারণে প্রকাশকরা বায়তুল মোকাররমের চত্বরে আসার আগ্রহ পান না।

তাছাড়া বইমেলার আয়োজনটি যেমনভাবে জমার কথা ছিল, তেমনভাবে জমে না ওঠার কারণ হিসাবে অনেকে ফাউন্ডেশনের অবহেলাকেই দায়ী করেন।

 

পূর্ববর্তি সংবাদচট্টগ্রামে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ৭, আহত ৭
পরবর্তি সংবাদসিরিয়ায় গাড়ি বোমা হামলা, নিহত ১৮