কষ্টের দিনলিপি : “গাড়ির দরজা খোল, মহিলা আর বয়স্কদের একটু নিয়ে যাও”

আলী হাসান তৈয়্যব ।।

আমরা হলাম দুর্ভোগের রাজধানীর গর্বিত বাসিন্দা। ত্রিপল সেঞ্চুরিমুখী পেঁয়াজের পর লবণের গুজব। তারপর আজ শুরু গজবের পরিবহণ সন্ত্রাস।

রাতে বাসায় মেহমান এলো ছোটবোন আর জামাই। আজ বেলা ১টায় বনলতা সেনের টিকেট নিয়ে এসেছে বাসায়। সকাল নটায় বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি কারবালা। দুপাশে নানা বয়সী হাজার হাজার নারী-পুরুষ। পাবলিক পরিবহন নেই। অনেকক্ষণ পর পর আসছে বিআরটিসি দোতলা বাস। যাতে নতুন করে একজন দূরের কথা একটি হাতও ঢুকাবার সুযোগ নেই। এসব দুর্ভোগ অবশ্য অচেনা নয়। পরে এক মুসল্লি ভাইয়ের গাড়ি ভাড়া করে ওদের পৌঁছে দিয়ে অফিস গেলাম। যাবার পথে ভাবছিলাম, টাকা অতিরিক্ত গেলেও সময় তো কম লাগবে। টাকার চেয়ে সময়ই বেশি দামি। আমার সে আশার গুঁড়েও বালি। নিত্যদিনের চেয়েও বেশি জ্যামে ভুগতে হলো প্রাইভেট কারের অভাবিত ভিড়ে।

অফিস থেকে বের হবার কথা মনে হতেই ভয় করছিল। কীভাবে বাসায় ফিরব। বিকেল থেকে সংবাদ শিরোনামগুলো ভয় বাড়িয়ে দিল ক্রমশ। মাগরিব পড়ে আল্লাহকে শরণ নিয়ে মন শান্ত হলো। শান্ত মনে অশান্ত পথে বের হলাম বাসার উদ্দেশে। আল্লাহ তাঁর বান্দাকে কখনো ভোলেন না। বরং আমরা অধমরাই ভুলে যাই তাঁকে স্মরণ করতে।

ফেরার সময় পথে অযুত দুর্ভোগের মধ্যেই বিনা ক্লেশে মহাখালী পর্যন্ত এলাম। মহাখালী সিগনালে নামতেই দুর্ভোগ্রস্ত মানুষের ঢল। ঢলের মধ্যে দাঁড়িয়ে তাঁকে স্মরণ করছি। হঠাৎ দেখি রেলগেট মাদ্রাসার সামনে সিগনালে কয়েকজন ট্রাফিক একটা বলাকা পরিবহন থামিয়ে দিচ্ছে। ওয়ারলেস হাতে অফিসার ট্রাফিকদের বলছেন থামাও থামাও। বামে নাও বামে নাও।

মনে মনে বিরক্তি নিয়ে স্বগতোক্তি করলাম, কী ঘৃণ্য ব্যাপার! এমন কঠিন অবস্থায়ও বাস আটকে বুঝি টাকা খাবে! কিন্তু বাসটির একটু কাছে যেতেই লজ্জিত হলাম। অফিসার বলছেন, গাড়ির দরজা খুলে মহিলা আর বয়স্কদের উঠিয়ে দাও।

বাসে গেটের দিকে দমবন্ধ করা ভিড়। তবে পেছনে খালি জায়গা আছে কিছুটা। বাস থেমে দরজা খুলতে রাজি হচ্ছিল না। হেলপার জানালা দিয়ে বলছে, লোক আর ঢুকানো সম্ভব না। হঠাৎ দেখলাম এক ট্রাফিক নিজে বাইর থেকে হাতের আলোর ছড়ি দিয়ে যাত্রীদের ইশারা করতে লাগলেন। এক অভাবিত মুগ্ধকর দৃশ্য— এক ট্রাফিক সামনে ড্রাইভারকে বলছেন হেলপারকে গেট খোলার আদেশ দিতে। আরেক ট্রাফিক পেছনের যাত্রীদের অনুরোধ করছেন পেছনে গিয়ে লোকগুলোকে ঢোকার সুযোগ করে দিতে!

কষ্টের মধ্যে দৃশ্যটি দেখে মন ভালো হয়ে গেল। শুধু খারাপ কেন এখনও সবখানে কিছু ভালো ব্যাপারও আছে। সব সেক্টরে খারাপ নয় শুধু, ভালোও আছে।

লেখকের ফেইসবুক থেকে নেয়া

পূর্ববর্তি সংবাদসশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বিশেষ মোনাজাত
পরবর্তি সংবাদইবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১০