প্রাচীন যুগের সীরাত রচনা-৭ : সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ

মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব ।।

বিখ্যাত এবং সুবিস্তৃত একটি সীরাতগ্রন্থের নাম, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদ। লেখক, মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ আস-সালিহী রহ.।

তিনি দামেশকের ‘সালিহিয়াত’এ জন্মগ্রহণ করেন। সে হিসেবেই তাঁর নিসবত ‘আস-সালিহী’। জীবনী গ্রন্থগুলোতে তাঁর জন্মসন ও পারিবারিক পরিচিতির উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে তিনি শৈশব পার করেন দামেশকেই। এরপর মক্কা ও পরে মিসরে চলে যান। মিসরের শহর (বর্তমানের রাজধানী) ‘কায়রো’র ‘বারকুকিয়া’তে তিনি বসবাস করেন। সে অঞ্চলের বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিক হিসাবে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ৯৪২ হিজরীর ১৪ শাবান সেখানেই তিনি ইনতিকাল করেন।

তাঁর বিখ্যাত উস্তাযগণের মধ্যে রয়েছেন- মুহাদ্দিস আলাউদ্দীন সাইরাফী রহ., ইবরাহীম ইবনে শারীফ আল-মাকদিসী রহ., ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ. ও ইমাম আহমদ ইবনে মুহাম্মদ আল-কাসতাল্লানী রহ. প্রমুখ মনীষীগণ। তবে ইমাম সুয়ূতী রহ.-এর কাছেই দীর্ঘদিন থাকেন। তাঁকে ইমাম সুয়ূতী রহ.-এর বিখ্যাত ও প্রিয় শাগরেদদের মধ্যে গণ্য করা হয়।

তাঁর বিখ্যাত ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন, মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ আল-ফীশী রহ. ও মুহাম্মাদ আল-কালবী রহ. প্রমুখ।

তাঁর প্রসিদ্ধ রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে ইমাম আযম আবু হানীফা রহ.-এর জীবনী ‘উকুদুল জুমান ফী মানাকিবি আবী হানীফাতান নুমান’, মওযূ হাদীস বিষয়ক  কিতাব ‘আল-ফাওয়াইদুল মজমূআ ফিল আহাদিসিল মওযূআ’, ও সীরাত বিষয়ক সুবিস্তৃত রচনা ‘সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদ’ ইত্যাদি।

এই কিতাবে তিনি পূর্ববর্তী সকল সীরাতের কিতাব থেকে তথ্য জমা করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি কিতাবটির ভূমিকায় লিখেন, আমি এখানে তিনশরও বেশি কিতাব থেকে (ঘটনা ও বর্ণনা) চয়ন করেছি।-ভূমিকা, পৃষ্ঠা : ১

ফলে এতে সব ধরনের বর্ণনা, প্রাসঙ্গিক কোরআনের আয়াত, মনীষীদের উক্তি এবং প্রচুর কবিতা রয়েছে। কোনো বিষয়ে একাধিক বর্ণনা থাকলে সেগুলোর মাঝে তিনি সমন্বয়ের চেষ্টা করেন। অনেক বর্ণনা জমা হলে বিস্তৃত ও পটভূমি সম্বলিত বর্ণনাটি গ্রহণ করেন। হাদীসের বিভিন্ন শব্দের ব্যাখ্যা উল্লেখ করেন। বর্ণনাকারী কিংবা বিভিন্ন জায়গার নামের সঠিক উচ্চারণ লিখে দেন। মতানৈক্যপূর্ণ মাসআলার ক্ষেত্রে অনেকের বক্তব্য উল্লেখ করেন। সেক্ষেত্রে সাধারণত নিজের পক্ষ থেকে কোনো সমাধান দেন না। মাসআলা ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন জনের বক্তব্য উল্লেখ করে সমন্বয় করতে চান। কোথাও কোনো বক্তব্যকে প্রাধান্য দেন। কোথাও কোথাও হাদীসের সনদ বিষয়েও আলোচনা করেন। এভাবে সুবিশাল ১৩ খণ্ডে কিতাবটি সমাপ্ত করেন। এতে প্রায় এক হাজার অধ্যায় রয়েছে। কিতাবটির শুরুতে চার পাঁচ পৃষ্ঠার খুবই জরুরি একটি ভূমিকা রয়েছে।

বলা যায়, সীরাতের সবচে দীর্ঘ ও বিস্তৃত কিতাবগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। তবে তা আলেমদের জন্যই বেশি উপযোগী। বিশেষ করে যারা হাদীসের সহীহ যয়ীফ তাহকীক করার যোগ্যতা রাখেন তাঁদের জন্য। অবশ্য সীরাত বিষয়ক খুঁটিনাটি তথ্যের সন্ধান করতে যে কেউ এই কিতাবটিকে প্রাথমিক সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে নিতে পারেন।

 

পূর্ববর্তি সংবাদবাবরি মসজিদ রায়ে রিভিউ না করার আহ্বান শতাধিক তারকা ‘প্রগতিশীল’ মুসলিমের
পরবর্তি সংবাদভোট ব্যবস্থাপনায় উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে কর্মকর্তাদের ভারতে পাঠাচ্ছে ইসি