“নানাজীর পর নানুজানই ছিলেন পুরো শায়েখ-পরিবারের বড় আশ্রয়”

সাঈদ আহমদ বিন গিয়াসুদ্দীন ।।

গত ২৩-০৪-১৪৪১ হি. মোতাবেক ২১- ১২- ০১৯ ঈ. রোয শনিবার ভোর আনুমানিক ৫টার দিকে আমাদের অতি প্রিয়, অতি শ্রদ্ধেয় নানুজান, হযরত শায়খুল হাদীস আল্লামা আযীযুল হক রাহ.-এর সহধর্মিণী ইন্তেকাল করেন-

إِنَّا لِلهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ،إِنَّ لِلهِ مَا أَخَذَ، وَلَهُ مَا أَعْطَى، وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهُ إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى، العَيْنَ تَدْمَعُ، وَالقَلْبَ يَحْزَنُ، وَلاَ نَقُولُ إِلَّا مَا يَرْضَى رَبُّنَا، اَللّهُمّ اؤْجُرْنَا فِيْ مُصِيْبَتِنَا، وَاخْلُفْ لَنَا خَيْرًا مِّنْهَا.

আল্লাহ পাক নানা-নানুকে জান্নাতুল ফিরদাউসে উঁচু মাকাম নসীব করুন। তাঁদের কবরকে নূর দ্বারা ভরে দিন। তাঁদের প্রতি আপন শান মোতাবেক দয়া-রহম করুন। আমীন।

বয়স ৭৩ অতিক্রম করলেও নানুজানের স্বাস্থ্য মোটামুটি ভালোই ছিল। শারীরিক বড় কোনো রোগ-বালাই ছিল না বললেই চলে। কিন্তু হঠাৎই একদিন ডায়াবেটিস খুব নিচে নেমে গেল। হাসপাতালে নেওয়ার পর ফুসফুসে/লাঞ্চে অনবরত পানি আসার জটিল সমস্যা ধরা পড়ল। ফলে শ্বাস-নিঃশ্বাস গ্রহণে অত্যধিক কষ্ট হতে লাগল। ডাক্তারগণ সাধ্যমতো বহু চেষ্টা-তদবির করলেন। কিন্তু না পানি আসার কারণ উদ্ঘাটিত হল, আর না তা বন্ধ করা গেল। অবশেষে আল্লাহ্র ইচ্ছা-আদেশই সবকিছুর উপর প্রবল হল। নানুজান দীর্ঘ তিন সপ্তাহ হাসপাতালে থেকে আপন প্রভুর দরবারে হাজির হয়ে গেলেন।

وَ كَانَ اَمْرُ اللّٰهِ قَدَرًا مَّقْدُوْرَا

নানাজীর ইন্তেকালের পর নানুজানই ছিলেন পুরো শায়েখ-পরিবারের বড় আশ্রয়। গোটা পরিবারের উপর তিনি বিছিয়ে রেখেছিলেন আপন মমতাময়ী কোমল ছায়া। ছিলেন আল্লাহ্র বিশেষ রহমতস্বরূপ। নানাজানের সবচেয়ে বড় স্মৃতি। এ বয়সেও পরিবারের সকলের খোঁজ-খবর রাখতেন। শুধু মেয়েরা নন, নাতী-নাতনীদের বাসায়ও গিয়ে উপস্থিত হতেন। সবাইকে দ্বীনী বিষয়ে নসীহত ও সতর্ক করতেন। নানাজীর কথা খুব স্মরণ করিয়ে দিতেন, তাঁর পথ ও আদর্শের উপর থাকার তাগিদ করতেন। কখনো বলতেন-

‘তোমাদের নানা এক জীবনে এত কাজ করেছেন, জান-প্রাণ উজাড় করে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন উপায়ে আল্লাহ্র দ্বীনের খেদমত করেছেন। তোমরাও তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো। (আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুনÑ আমীন।) নানুকে হারিয়ে আমরা সত্যিই এতীম হয়ে গেলাম। নানাজীর পর আমাদের মাথার উপর থেকে নানুজানের ছায়াও সরে গেল। আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া করুন, রহম করুন। আমাদের উপর তাঁদের ফয়েজ-বরকতকে অব্যাহত রাখুন।

(আমাদের বিবেচনায়) আল্লাহ পাক নানুজানকে বানিয়েছিলেন-

من الخيرات الحسان

দান করেছিলেন বহুবিধ দ্বীনী-দুনিয়াবী সিফাত ও নিআমত। বংশীয় আভিজাত্য, বাহ্যিক শোভা-সৌন্দর্য, অতি নেককার-ইবাদতগুযার মা-বাবার সাথে সাথে আল্লাহ তাঁকে দিয়েছিলেন অনেক ঈমানী ও রূহানী গুণাবলি। খোদ নানাজী নানুজানের তাকওয়া-পরহেযগারী, অত্যধিক ইবাদত-বন্দেগী বিশেষত নামায ও কুরআন তিলাওয়াত এবং গরিব-অসহায় মানুষদের প্রতি তাঁর মমতা ও বদান্যতার খুব প্রশংসা করতেন। এবং নিজের খুশি প্রকাশ করতেন। আমার মা-খালাদের সামনে তাঁকে বলতে শুনেছি- তোদের মা খুব নেককার-ইবাদতগুযার, ওনার ইবাদত-বন্দেগী দেখে আমার মনটা একদম ভরে যায়। এক খালাম্মার কাছে শুনেছি, নানাজী তাঁদের বলতেন- আমি তো বখিল মানুষ! কিন্তু তোদের মা যে মানুষের জন্য এত করে, এতে আমি অনেক খুশি। আল্লাহ পাক নানুজানের সমস্ত নেক আমলসমূহ কবুল করুন, তাঁকে উত্তম বিনিময় দান করুন।

কেরাণীগঞ্জের ঘাটারচরে মসজিদ-মাদরাসার পাশে রয়েছে একটি ছোট্ট পারিবারিক কবরস্থান ‘মাকবারায়ে আযিযী’। সাত মসজিদে নামাযে জানাযা আদায় করার পর এখানেই নানুজানকে নানাজীর পাশে দাফন করা হয়। আল্লাহ পাক আমাদের প্রতি, শায়েখ-পরিবারের প্রতি দয়া করুন, রহম করুন! মাকবারায়ে আযিযীর বাসিন্দাগণের সংখ্যা যে দ্রুত বেড়ে চলেছে, দেখতে দেখতেই একজন থেকে চারজনে উপনীত হয়েছে! আল্লাহ মেহেরবান সকলের প্রতি খাস মেহেরবানি-রহম করুন।

পাঠকগণের কাছে বিনীত আবেদন, তারা যেন আমাদের নানা-নানুর জন্য এবং সকল মুমিনের জন্য মাগফিরাতের দুআ করেন। আল্লাহ পাক সকলকে এর উত্তম বিনিময় ও আজর দান করুন। আমাদের সবরে জামীল দান করুন। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।

লেখক: মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া ঢাকার শিক্ষক

 

পূর্ববর্তি সংবাদআন্তর্জাতিক আদালতে ট্রাম্পের বিচার চাইল ইরান
পরবর্তি সংবাদআজ থেকে মাওলানা সাদ অনুসারীদের ইজতেমা শুরু