সাবালকত্ব নিয়ে বিতর্ক : বয়স পিছিয়ে তো সমাজই পিছিয়ে পড়ছে

এনাম হাসান জুনাইদ।।

ঢাকার বংশালে প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ১২ বছরের এক বালকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই বালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার শুনানি শেষে আদালত তাকে টঙ্গীতে জাতীয় কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে গত রবিবার শরীয়তপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র দাউদ ইব্রাহীমকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দিয়েছে একই কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির কতিপয় ছাত্র।

ঢাকার একটি অনলাইন দৈনিকে প্রকাশিত এই সংবাদের নীচে  একজন পাঠক মন্তব্য করেছেন, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করা উচিত। যারা এই বয়সেই একজনকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দিতে পারে, তাদেরকে কোন ভাবেই অপ্রাপ্ত বয়স্ক হিসাবে গণ্য করা উচিত নয়। আইনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এই কিশোররা বিরামহীন অপরাধ করে যাচ্ছে। আর ছাড় পাওয়ার সুযোগে এরা বড় হয়ে আরো বড় সন্ত্রাসী হচ্ছে।

সম্প্রতি কিশোরদের দ্বারা সংঘটিত  অপরাধ দেশে ও দেশের বাইরে সাবালকত্বের ইস্যুটি আবার সামনে নিয়ে এসেছে। কখন একজন শিশু আর শিশু থাকে না? কখন একজন শিশু সাবালকে পরিণত হয়? কখন থেকে একজন শিশুকে তার কর্মের জন্যে দায়ী করা হবে? এবং শাস্তির মুখোমুখি করা হবে?

সাবালকত্ব নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আইন রয়েছে। এসব আইনই রচিত হয়েছে ফরাসি বিপ্লবের পর। তবে  এক্ষেত্রে ইসলামের যে বিধান রয়েছে পূর্ণাঙ্গ আইন হিসাবে তা-ই পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বাধিক প্রাচীন।

মিসরের খ্যাতনামা আইন বিশারদ আবদুল কাদির আওদা বলেছেন,পৃথিবীর ইতিহাসে সাবালকত্ব আইন সর্বপ্রথম ইসলামেই পাওয়া যায়। ইসলামের সাবালকত্ব আইন এমনই পূর্ণাঙ্গ ও আধুনিক যে  আজ চৌদ্দশ বছরও তাতে পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দেয়নি।

“শিল্প বিপ্লবের পর পশ্চিমা বিশ্ব সাবালকত্ব আইন নামে যা তৈরি করেছে, তাতে এমন কোনো নতুনত্ব ছিল না, যা ইসলামের সাবলকত্ব আইনে নেই।” বলছিলেন আবদুল কাদের আওদা।

আমাদের দেশীয় আইনে সাবালকত্ব শুরু হয় ১৮ বছর থেকে। ভারতেও এধরণের আইনের কথাই জানা গেছে। তবে আঠার বছর বয়সকে সাবালকত্বের সূচনা ধরাকে অনেকে অনেক বিলম্বিত মনে করেন, যা শিশুদেরকে দায়িত্বশীল করে গড়ে তুলতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

ঢাকার আনওয়ারুল উলুম মাদরাসার সাবেক মুহতামিম মাওলানা মাসউদুজ্জামান বলেছেন, আঠার বছর বয়স সীমা নির্ধারণ করার ক্ষতি হচ্ছে, দেখা যায়, বড় হওয়ার পরও সন্তানদের সাথে আচরণ করা হয় শিশুদের মত। তাদেরকে বিভিন্ন দায়িত্ব নিতে শেখানো হয় না। এর নেতিবাচক প্রভাব শুধু বাচ্চার উপরই নয় গোটা সমাজের উপর পড়ে-যোগ করেন মাওলানা মাসউদুজ্জামান।

এদিকে পশ্চিমা বিশ্বের কয়েকটি দেশে এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে বয়স ১০ হলেই কাউকে অপরাধের জন্য দায়ী করা হয়৷ স্কটল্যান্ডে কিছু ক্ষেত্রে বয়স আট হলেও দায় এড়ানো যায় না৷ যুক্তরাষ্ট্র্রে অভিযুক্ত করার ন্যূনতম বয়স ১১৷ তবে সেখানে ৫০টি রাজ্যের অনেকগুলোতেই আবার ন্যূনতম কোনো বয়স নির্ধারণ করা নেই, যার অর্থ, চাইলে যে কোনো বয়সের কিশোরকেই শাস্তি দেয়া সম্ভব৷

জার্মানির আইন অনুযায়ী, বয়স ১৪ বছরের কম হলে কাউকে কোনো অপরাধের জন্য দায়ী করা যায় না,  দায় নিতে হয় সংশ্লিষ্ট কিশোরের বাবা-মা, আইনি অভিভাবক বা স্থানীয় যুব উন্নয়ন কার্যালয়কে৷ তবে সরকারের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ইতিমধ্যে কিশোরদের অভিযুক্ত করার ন্যূনতম বয়স ১৪ থেকে কমিয়ে ১২ বছর করার দাবি জানিয়েছে৷ কিন্তু জার্মানির বিচারকদের সংগঠন এর বিরোধিতা করেছে৷

তবে যুক্তিবান বোদ্ধা মহলের কাছে  এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ বয়স সীমা সেটাই যা ইসলাম নির্ধারণ করেছে। সাবালক হওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামের বয়স সীমা কী?

এ প্রশ্নের জবাবে ঢাকার বিশিষ্ট মুফতি আবু সায়েম বলেছেন, ইসলামে একজন কিশোরী সাবালক হয় তার ‘মাসিক পিরীয়ডের’-এর মাধ্যমে। আর একজন কিশোর সাবালক হয় স্বপ্নদোষের মাধ্যমে। যদি এ লক্ষণ কারো মধ্যে প্রকাশ না হয়, তাহলে তাকে ১৫ বছর বয়স থেকে সাবালক ধরা হবে। এ বয়স থেকেই তার উপর শরীয়তের সকল বিধি বিধান আরোপিত হবে- জানান মাওলানা আবু সায়েম।

পূর্ববর্তি সংবাদচুয়াডাঙ্গায় বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার
পরবর্তি সংবাদকরোনাভাইরাস সম্পর্কে কী জানেন