প্রিয়নবীর স্মৃতি বিজড়িত মসজিদে গামামা

মুহাম্মদ মামুনুর রশীদ।।

মুসলিম উম্মাহর ভালোবাসার স্থান রাসুলের রওজা, মসজিদে নববি, সবুজ গম্বুজসহ মদিনায় অবস্থিত মসজিদগুলো। মদিনার মসজিদে নববি ছাড়াও রয়েছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্মৃতি বিজড়িত অনেক মসজিদ, মসজিদের জায়গা।

মসজিদে নববীর সবচেয়ে কাছের মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মসজিদে গামামা। মদিনায় প্রথম ঈদের নামাজও পড়া হয় এ মসজিদের স্থানে। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ জীবনের ঈদের নামাজগুলোও মসজিদে গামামাহর স্থানে আদায় করেছেন।

গামামা আরবি শব্দ যার অর্থ মেঘমালা। একবার অনাবৃষ্টির সময় হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের নিয়ে এই মসজিদের স্থানে খোলা ময়দানে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়েছিলেন। নামাজের পর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। তাই এই মসজিদকে ‘মসজিদে গামামাহ’ বলা হয়।

মসজিদে নববির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত এ মসজিদটি। বর্তমানে মসজিদে নববীর ব্যাপক সম্প্রসারণের প্রেক্ষিতে এটি মসজিদে নববীর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়েছে। মসজিদে নববীর ৬ নম্বর গেইট দিয়ে বের হলেই সামনে পড়ে গামামা মসজিদ। ১৮৬৯ ইংরেজী সালে তূর্কি শাসনামলে মসজিদটির বর্তমান ভবনটির নির্মাণ হয়।

এই মসজিদটি আরও একটি কারণে বিখ্যাত। তাহলো আবিসিনিয়ার নও মুসলিম বাদশাহ নাজ্জাশীর মৃত্যুর পর নবী করিম (সা.) তার জানাজার নামাজ এই স্থানে পড়ান। নাজ্জাশী চিঠির মাধ্যমে হজরত রাসূলুল্লাহ সা.-এর দ্বীনের দাওয়াত পেয়ে খ্রিস্টান ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।

মসজিদে গামামা পূর্ব ও পশ্চিমে লম্বা। একটি গম্বুজ দ্বারা নির্মিত হয়েছে এর ছাদ। উত্তর দিকে ছোট ছোট পাঁচটি গম্বুজ রয়েছে। উত্তর দিকে দু’টি লোহার গম্বুজ দ্বারা প্রবেশদ্বার। মসজিদটির দৈর্ঘ ৩২.৫ মিটার ও প্রস্থ ২৩.৫ মিটার, মোট আয়তন ৭৬৩.৭ বর্গমিটার। উচ্চতা ১২ মিটার। প্রাচীর ১.৫ মিটার প্রস্থ। পূর্বের দিকে পাথর দিয়ে সাজানো ছোট একটি মিনারা মসজিদের সৌর্ন্দয্যকে আরও মনোরম করেছে।

মসজিদে গামামার খুব কাছে মাত্র ৪০ গজের মধ্যে আরও তিনটি ছোট মসজিদ আছে। ওই মসজিদগুলো হলো- মসজিদে হযরতে আবু বকর রা. মসজিদে হযরতে ওমর রা. এবং মসজিদে হজরত আলী রা.।

ইসলামের প্রাথমিক যুগের এসব মসজিদ এখনও নবী করিম (সা.)-এর স্মৃতি ধারণ করে আছে। মসজিদে নববীর আয়তন বিশালতা এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের কারণে এর বাইরের এসব মসজিদে এখন বেশি মানুষকে নামাজ আদায় করতে দেখা যায় না।

মসজিদে গামামার স্থানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে কোনো মসজিদ ছিলো না। পরে ৯১ হিজরির দিকে খলিফা ওয়ালিদ বিন মালেক এখানে মসজিদ তৈরি করেন। ৭৪৮ হিজরি থেকে ৭৫২ হিজরি পর্যন্ত দ্বিতীয়বার হুসাইন বিন কালাউন মসজিদে গামামার সংস্কার কাজ করেন। অতপর ৮৬১ হিজরি আল আশরাফির যুগে পুনরায় এই মসজিদের মেরামত কাজ হয়।

শেষের দিকে ওসমানি খেলাফতের ‘মাজলুম’ খলিফা সুলতান আব্দুল হামিদ এই মসজিদের সংস্কার করেন। এরপর ১৮৬৯ সালে সুলতান আব্দুল মাজিদ খান ওসমানি এই মসজিদ সংস্কার করেন। বর্তমানে যে দালান আমরা দেখতে পাই, তা সুলতান আব্দুল মাজিদ খান ওসমানির যুগের।

সর্বশেষ সৌদি সরকার ওসমানি ইমারত বহাল রেখে সে মোতাবেক মসজিদের সংস্কার করেন। তাতে ব্যায় হয় ২ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল। বর্তমানে মসজিদটি মদিনা আওকাফ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।#

পূর্ববর্তি সংবাদসরকার বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ইরাক, পুলিশের গুলিতে নিহত ৪
পরবর্তি সংবাদনেশা দ্রব্য খাইয়ে স্কুল ছাত্রীকে গণধর্ষণ, গাজীপুরে চার বন্ধু গ্রেফতার