স্বাস্থ্য সচেতনতা : করোনাভাইরাসের জানা-অজানা তথ্য

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: বর্তমান বিশ্বে আতঙ্ক ছড়ানো করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে। ধারণা করা হচ্ছে, উহান শহরে অবস্থিত একটি সামুদ্রিক মাছের বাজার হিসেবে পরিচিত হুয়ানান বাজার থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে।

করোনাভাইরাস কী?

করোনা একটি ল্যাটিন শব্দ, যার অর্থ ‘মুকুট’। অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে তোলা ছবিতে এই ভাইরাসটি দেখতে মুকুটের মতো বলেই এর নামকরণ করা হয়েছে করোনা। প্রকৃত অর্থে ১৯৬০ সালের দিকে মুরগীর সংক্রামক রোগের ভাইরাস হিসেবে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল। তবে এরপর মানবদেহে হওয়া সাধারণ সর্দি কাশিতেও করোনাভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। মানবদেহে পাওয়া সাতটি করোনাভাইরাস হচ্ছে, হিউম্যান করোনাভাইরাস ২২৯ই এবং হিউম্যান করোনাভাইরাস ওসি৪৩, এনএল ৬৩, এইচকিউ ওয়ান, সার্স, মার্স এবং নভেল করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসগুলোর মধ্যে প্রথম তিনটি মারাত্মক না হলেও পরের চারটি মানুষের জন্য গুরুতর পরিণতি বয়ে আনতে পারে।

২০০২ সালে চীনে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া ‘সার্স’ এবং ২০১২ সালে ‘মার্স’ ভাইরাস দুটিও এক ধরনের করোনাভাইরাস। সার্স ভাইরাসটি বাদুড় থেকে খাটাশে সংক্রমিত হয়েছিল। পরে তা খাটাশের সংস্পর্শে যাওয়া ব্যক্তিদের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এসব ব্যক্তির হাঁচি-কাশি যেসব বস্তুতে লেগেছিল, সেসবের সংস্পর্শে অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সার্সে আক্রান্তদের ৯% এবং মার্সে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৩৫% মারা গেছেন।

তবে বর্তমানে চীনসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি আগের ভাইরাসগুলোর তুলনায় নতুন হওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর নামকরণ করেছে নভেল করোনাভাইরাস ২০১৯-এনসিওভি।

এই ভাইরাসের কারণে এখন পর্যন্ত ৮১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একজন হংকং, একজন যুক্তরাষ্ট্র এবং একজন জাপানের নাগরিক। আর বাকিরা সবাই চীনের নাগরিক। বিশেষজ্ঞদের কাছে এই ভাইরাসটি নতুন বলেই এই মৃত্যুর হার বেড়ে চলেছে। এই ভাইরাস নিয়ে ইতোমধ্যেই সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যখাতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ তাদের বিমান বন্দরে চীন থেকে আগতদের বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছে। এসব পদক্ষেপের পরে সারা বিশ্বের প্রায় ২৮টি দেশের মোট ২৪ হাজার ৩২৪ জন আক্রান্ত হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘বিবিসি’ এবং মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘গালফ নিউজ’ এর দুটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত করোনাভাইরাস সম্পর্কে জানা অজানা কিছু বিষয় নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন।

করোনাভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সময়কাল কত?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য মতে, কোনো ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসটি ২ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সুপ্তভাবে থাকতে পারে। কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে কি না তা বুঝতে ন্যূনতম ১০ দিন সময় লাগতে পারে। তবে অনেকক্ষেত্রে এ সময়টা আরও কম হতে পারে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে কী সুস্থ হওয়া সম্ভব?

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও ভয়ের কিছু নেই। কারণ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণত জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো সাধারণ সমস্যা হয়ে থাকে। ফলে সুস্থ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে, হৃদরোগ,  ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের রোগী বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের জন্য এই ভাইরাস বিশেষ ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মাত্র ২ দশমিক ০৯ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

পণ্যের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে?

পণ্যের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে করোনা ও সার্সের মতো ভাইরাসগুলো আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাঁচি-কাশি থেকে ছড়াতে পারে। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি কোনো জিনিসের ওপর কফ ফেলেন বা হাঁচি দিয়ে থাকেন, তাহলে ওই সব বস্তু পরিবহন করা হলে কিছুটা সম্ভাবনা থাকতে পারে। তবে এই সম্ভাবনাও অনেক কম কারণ ঠান্ডার ভাইরাসগুলো মানবদেহের বাইরে ২৪ ঘণ্টার বেশি সক্রিয় থাকে না।

মাস্ক ব্যবহার করলে কী করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়ানো যাবে?

যেকোনো ভাইরাসই এত সূক্ষ্ম হয় যে তা মেডিকেল মাস্কের ভেতর দিয়ে অনায়াসে প্রবেশ করতে পারে। তবে আপনি যদি এন৯৫ নামে বিশেষ এই মাস্ক পড়তে পারেন তবে ঝুঁকি নেই বললেই চলে। এছাড়াও অন্যদের হাঁচি-কাশি থেকে অবশ্যই দূরে থাকা জরুরি।

বাতাসের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানো সম্ভব?

সাধারণত বাতাসের মাধ্যমে জীবাণু ছড়ায় না। জীবাণু ছড়ানোর জন্য হাঁচি-কাশি যেখানে দেওয়া হয় অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি হাতে হাঁচি দিয়ে যদি অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে হাত মেলায় তবে এই জীবাণু স্থানান্তরিত হতে পারে। বাতাসের মাধ্যমে নয় বরং কোনো বস্তুর সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ছড়াতে পারে।

করোনা চিকিৎসায় কোনো এন্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া যাবে?

এন্টিবায়োটিক সাধারণত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। করোনা যেহেতু ভাইরাস তাই করোনা চিকিৎসায় এন্টিবায়োটিক না খাওয়াই উত্তম।

করোনাভাইরাস নিয়ে সারা বিশ্বে আতঙ্ক ছড়ালেও এই ভাইরাসটি খুব বেশি মারাত্মক নয় বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এটি একটি ফ্লু। তাই খুব শিগগিরই এর প্রতিষেধক আবিষ্কার করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

পূর্ববর্তি সংবাদমঙ্গলবার বনশ্রীতে অনুষ্ঠিত হবে ইসলামিক ফিকহ বোর্ড বাংলাদেশের ৩য় ফিকহ সেমিনার
পরবর্তি সংবাদপাকবাহিনীর হামলায় এক ভারতীয় সেনা নিহত, গুরুতর আহত ৩