এনাম হাসান জুনাইদ ।।
বছরের ৩৬৫ দিনের একটি দিনকে প্রেম ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট করার মন্দ একটি সংস্কৃতি আমাদের দেশে প্রচলন পেয়ে গেছে। চিন্তাশীল অভিভাবকরা এ দিবসটিকে সর্বনাশা দিবস বা বিপথগামীতার দিবস হিসাবে অভিহিত করছেন।
মুসলমান হিসেবে হোক অথবা যুক্তিবাদী সাধারণ মানুষ হিসেবে, বিবাহের পূর্বে যুবক-যুবতী তরুণ-তরুণীদের ভালোবাসা মন দেয়া নেয়ার কখনো মেনে নেওয়া যায় না। এই দিনে এই অবৈধ প্রেম ভালোবাসা ও মন দেয়া নেয়ার অনুশীলন এবং এ দিনকে কেন্দ্র করে এর আগে এবং পরে যা চলে এটাকে কোন দিক থেকে স্বীকৃতি দেয়া যায় না।
বাংলাদেশে এই দিনটির প্রথম আমদানি কারক ‘প্রগতিশীল’ একজন লেখক-সাংবাদিক। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে তিনি তার সাপ্তাহিক পত্রিকাটির মাধ্যমে আমাদের দেশে এ দিনটির আমদানি করেন। এরপর এদিনটিকে পরিচিত করতে প্রত্যেক বছর তিনি এ দিবসকে কেন্দ্র করে পত্রিকার একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেন, যাতে তরুণ ও যুবক যুবতীদের অনৈতিক প্রেমকাহিনীতে ভরপুর থাকতো। এরপর পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণপ্রবণতার ফলে আমাদের দেশের অন্য মিডিয়াগুলো দিনটির এই মন্দ সংস্কৃতিটাকে লুফে নেয়।
দিনটির প্রচলন যেভাবেই হোক, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে নারী-পুরুষের বিবাহপূর্ব সম্পর্ক একটি অনৈতিক সম্পর্ক। এটি নিজেই একটি অপরাধ। এই অনৈতিক সম্পর্ক মানুষকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।
এ ছাড়া দিনটিকে কেন্দ্র করে সমাজে যে অশ্লীলতার বন্যা বয়ে যায়, তা তো আছেই। তরুণ-তরুণীদের সস্তা যৌন আবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও ফাসাদ সৃষ্টি করা হয় এদিনে। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে যুবক যুবতিরা যে সব কর্মকাণ্ড ঘটায় এর ফলগুলো তাদেরকে আখেরাতে তো ভোগ করতে হবেই, দুনিয়াতেও তাদেরকে এর মন্দ পরিণতি ভোগ করতে হয়। এ গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়া তরুণ তরুণীদেরকে দেখা যায়, তারা দাম্পত্য জীবনে নানা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পরবর্তীতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। মাদকের পথ বেছে নিয়ে নিজের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়।
এই জন্যই এই দিনটিকে দুনিয়াবী দিক থেকে বলুন কিংবা আখেরাতের দিক থেকে কোনভাবেই সমর্থন করা যায় না।
তাছাড়া এ দিবসটির উদযাপন মানে অনেক গোনাহের সমষ্টি। গোড়াতে এটি পৌত্তলিক ও খ্রিস্টান ধর্মের উৎসব। এ উৎসব পালনের মাধ্যমে কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনেরও গোনাহ হয়ে থাকে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি কোন কওমের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের দলভুক্ত”।
তাই আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মুসলমানের জন্য এ দিবস পালন করা, এটাকে সমর্থন করা অথবা এ উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করা কখনো উচিত নয়। বরং মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে- আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আহ্বানে সাড়া দেওয়া এবং আল্লাহর গজব ও শাস্তির কারণসমূহ থেকে দূরে থাকা। এ গর্হিত দিবস উদযাপনে কোন ধরনের সহযোগিতা করাও একজন মুমিনের জন্যে শোভা পায় না। তাই এ দিবস উপলক্ষে যে কোনো ধরণের সহযোগিতা যেমন-পানাহার, বেচাবিক্রি, কেনাকাটা, পণ্যপ্রস্তুত, উপহার বিনিময়, পত্র বিনিময়, বিজ্ঞাপন প্রদান ইত্যাদি সব থেকে বেঁচে থাকা উচিত।
(১৪ ফেব্রুয়ারি সংক্রান্ত একটি ভিডিও-আলোচনা অবলম্বনে)
