বিষণ্ণ শহরে যেমন কাটছে খেটে খাওয়া মানুষের জীবন

নুরুদ্দীন তাসলিম ।।

করোনা ভাইরাস। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এক ভীতির নাম। আধুনিক বিশ্বের সব পরাশক্তি, চিকিৎসা খাতের অভাবনীয় উৎকর্ষ, সবাই অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে এ মহামারীর কাছে। সম্প্রতি বাংলাদেশেও পড়েছে এ মহামারীর প্রভাব।

রাষ্ট্রীয় হিসাব মতে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ জন, মারা গেছেন ৩ জন, হোম কোয়ারিন্টিনে আছেন কয়েক হাজার। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস থেকে আত্মরক্ষা পেতে সতর্ক অবস্থানে পুরো বিশ্ব। বাংলাদেশও পূর্ণ মাত্রায় সতর্কতা অবলম্বনের চেষ্টা করছে।

সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই খালি হতে শুরু করেছে ঢাকা। পথঘাট শূন্য, ব্যস্ত ফুটপাতগুলো নিস্তব্ধ। যেখানে এক সপ্তাহ আগেও ছিল পথচারীর উপচে পড়া ভীড়। হকারের হাক ডাক। ‘একশর মাল পঞ্চাশ’, ‘মামা লইয়া যান ‘ বাইচ্ছা লন দেইখ্যা লন ‘ এমন শব্দের বিপরীতে বিষণ্ন বাতাস যেন ছেঁয়ে আছে ঢাকার ব্যস্ত ফুটপাতগুলোতে।রাস্তার পাশের সিঙ্গারা, সমুচা,বিকালের প্রিয় পিঁয়াজু আলুপুরী, ডালপুরীর দোকানগুলোও বন্ধ। সবখানেই বিষন্ন এক নিরবতা।

 

দিন মজুর ঠেলাগাড়ি চালকেরা বসে আছেন কাজের সন্ধানে।  কোঠরে ঢুকে যাওয়া চোখে উদাস দৃষ্টি ফেরাচ্ছেন যদি মিলে যায় কাঙ্ক্ষিত কাজ, পেটে জুটবে দু’বেলার আহার। ঘর থেকে বেরুবার সময় ছোট্ট মামুণির আব্দার করা চিপসের প্যাকেট কেনার টাকাটা জুটাতে পারবেন বুঝি।কিন্তু তার উদাস চাহনী আশার আলো দেখবে কি আদৌ! অবস্থাদৃষ্টে তাতো মনে হয় না। এই শহরে এখন ঠেলাগাড়ি চালকের প্রয়োজন যেন শেষ। শহরের ব্যস্ত মানুষগুলোর সব প্রয়োজন এখন কেনাকাটায়। নিজের পরিবারকে সুখে রাখার সামগ্রী সংগ্রহ করতে।

সতর্কতা অবলম্বনে তোড়জোড় করা শহুরে মানুষগুলোর বিপরীতে ভিন্ন কিছু মানুষের জীবন চিত্র আছে এই শহরে।চাইলেও যাদের সতর্কতা অবলম্বন করা হয়ে ওঠে না।সতর্কতা অবলম্বনে সৌখিন মানুষগুলো যে ধূলোবালি আর ফুটপাত এড়িয়ে আকাশছোঁয়া বিল্ডিং- এ অবস্থান নিবে। সেই অবহেলিত ফুটপাত এদের একমাত্র আশ্রয়। এদের দেখার কেউ নেই। এদের সুখ, দুখের কথা শোনার কেউ নেই। এই শহরের উপর যত ঝড় ঝাপটাই বয়ে যাক, পৃথিবী হাজার সচেতনতা অবলম্বন করুক, এরা থেকে যায় অবহেলিত। কোন প্রতিকূল পরিস্থিতি যেন এদের জন্য নয়।

করোনা থেকে আত্মরক্ষা পেতে জীবাণু  ধূলোবালি এড়িয়ে চলার কথা বলা হলেও এ শহরে শত মানুষের ধূলোবালি মাড়ানো প্লাটফর্মগুলোতেই মলিন মুখে এরা ঘুমিয়ে পড়ে প্রতিদিন। এদের মলিনতা – অসহায়তা দেখে করোনারও বুঝি মায়া হয়। তাইতো এরা বেঁচে যায় অলৌকিকভাবে সব প্রতিকূলতা থেকে।

 

অন্যদিন দুপুর পর্যন্ত যে পরিমাণ আয় হয় আজ তার সিকিভাগও হয়নি, ভার গলায় বলছিলেন দিন মজুর এক রিক্সা চালক। প্রতিদিন গ্যারেজে দিতে হয় নির্দিষ্ট অংকের টাকা, পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে হয় এই রিক্সা অবলম্বন করেই। কিন্তু এখন গ্যারেজের টাকার জোগান দেওয়াই কষ্টসাধ্য। বলছিলেন দেশ লকডাউন হওয়ার আগেই স্থবির হয়ে পড়েছে যেন তার জীবন্। কণ্ঠে ঝরে পড়ছিল যেন কিছুটা শ্লেষ,অনেকটা রাগ, একটু অভিমানও। একজন দিন মজুর রিক্সা চালকের রাগ অভিমান শোনার সময় আছে কি এই শহরে কারো ….

পূর্ববর্তি সংবাদমাস্ক ব্যবহার করতে হলে ব্যবহারবিধি জেনেই করা উচিত
পরবর্তি সংবাদকাল থেকে বন্ধ হচ্ছে খুলনা–ঢাকাসহ দূরপাল্লার বাস চলাচল