করোনা নিয়ন্ত্রণে সমাগম বানচাল করতে পুলিশের লাঠিপেটা: যা বলছেন ইসলামি চিন্তাবিদরা

তারিক মুজিব ।।

বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে মহামারী করোনা ভাইোসের সংক্রমণ। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে – জনের। করোনা সন্দেহে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হোম কোয়ারাইন্টাইনে আছে আরও অনেক মানুষ। করোনা সংক্রমণ দিন দিন বাড়লেও এখনও মানুষের মাঝে তৈরি হয়নি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সচেতনতা। রাস্তাঘাটে, শহরে গ্রামে এখনও দেখা যাচ্ছে জটলা, জনসমাগম।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ২৪ তারিখ থেকেই দেশে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশকেও দেওয়া হয়েছে করোনার বিস্তার রোধে জনসমাগম বানচাল করে দেওয়ার দায়িত্ব। দেরিতে হলেও পুলিশ এবং সেনারা তাদের দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। সেজন্য তাদের প্রশংসাও করা হচ্ছে।

তবে ভিড়, জটলা বানচাল করতে কোথাও কোথাও পুলিশকে বেশ আগ্রাসী দেখা গেছে। সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে পুলিশ এবং সেনাদের কিছু অমানবিক আচরণ। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবি এবং ভিডিওতে দেখা গেছে, মাস্ক না পরার কারণে মানুষকে পেটানো হচ্ছে। জীবিকার প্রয়োজনে রাস্তায় বের হওয়া শ্রমজীবী মানুষও রেহাই পায়নি পুলিশের তাণ্ডব হতে। পুলিশ-সেনার এই আগ্রাসী ভূমিকার জন্য দেশজুড়ে তাদের নিন্দাও হচ্ছে বেশ।

মানুষ পেটানোকে দেশে শুদ্ধ রাজনীতি এবং আইনের শাসনের অনুপস্থিতির খণ্ডচিত্র আখ্যা দিয়ে ইসলামি চিন্তাবিদ এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, এটা চরম অমানবিক এবং বর্বর আচরণ। পুলিশ এবং সেনা মোতায়েন করা হয়েছে সঠিক পন্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে অন্যায় কঠোরতা প্রয়োগ করে তারা পরিস্থিতি আরও উত্তেজিত করে তুলছেন।

করোনা ছড়িয়ে পড়ার তিনমাসেও দেশের মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি না হওয়ার দায় সরকারের মন্তব্য করে খেলাফত মজলিসের এ দায়িত্বশীল বলেন, সরকার যথেষ্ট সময় পাওয়ার পরও করোনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এখন দেশব্যাপী করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশ-সেনা উগ্র আচরণ করছে। শ্রমজীবী মানুষ যারা নিতান্তই জীবীকার জন্য রাস্তায় বেরিয়েছিল তাদের পিটিয়ে কলঙ্কজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অপর ইসলামি চিন্তাবিদ মারকাযুদ্দাওয়া আল ইসলামিয়া ঢাকার শিক্ষক মাওলানা যাকারিয়া আবদুল্লাহ বলেন, পুলিশ-সেনার উচিত ছিল কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। কিন্তু তারা সীমা অতিক্রম করে জনগণকে লাঠিপেটা করেছে। এটা চরম হতাশাজনক ঘটনা। অবশ্য জনসচেতনতা তৈরির জন্য পুলিশ-সেনার সমাগম বানচাল করার মৌলিক কাজের প্রশংসা করেন এ ইসলামি চিন্তাবিদ।

শ্রমজীবী মানুষকে ঘরে অবস্থানের আহ্বান জানানোর আগে তাদের জীবীকা নিশ্চিত করতে হবে মন্তব্য করে মাওলানা যাকিরায়া আবদুল্লাহ বলেন, এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। যেমন ভারতের বিভিন্ন রাজ্য, পাকিস্তান এবং কানাডা সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে। বাংলাদেশ সরকারের এরকম জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। তবে পাশাপাশি মানবিক এই সঙ্কটের মুহূূর্তে যেন দুর্নীতি না হয় সে ব্যাপারেও প্রশাসনের নজরদারি করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে তিনি।

মাওলানা যাকারিয়া আবদুল্লাহ বলেন, সরকারের পাশাপাশি আল্লাহ আমাদের যাদের সামর্থ দিয়েছেন তাদেরও উচিত এই সঙ্কটময় মুহূর্তে দরিদ্র প্রতিবেশীর সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া। তবে অবশ্যই সমাগম এড়িয়ে সচেতনভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

পূর্ববর্তি সংবাদপ্রিন্স চার্লস, বরিস জনসনের পর এবার করোনায় আক্রান্ত হলেন ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী
পরবর্তি সংবাদআলেম দরদী আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়ার ইন্তেকাল