দুর্যোগে জাতির সেবায় ইয়েমেনি নারীরা: প্রতিদিন কয়েক হাজার মাস্ক বানিয়ে করছেন বিতরণ

তারিক মুজিব ।।

ক্ষুধা এবং অনাহারের নগরী ইয়েমেন। সৌদি ইরানের ক্ষমতা বিস্তারের লড়াইয়ে চার বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বিপর্যস্ত দেশটি। তবে সম্প্রতি ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে সেখানে দেখা দিয়েছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। গত ১১ এপ্রিল শনিবার দেশটিতে প্রথমবারের মতো করোনা রোগী শনাক্ত হয়।

চার বছরের যুদ্ধে ইয়েমেনের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে। দেশটির সত্তর ভাগেরও বেশি হাসপাতাল, ক্লিনিক, বিধ্বস্ত। ইয়েমেনে চিকিৎসাহীনতায় মৃত্যুর সংখ্যা পৃথিবীর সর্বাধিক। জাতিসংঘভুক্ত দরিদ্র দেশটির সাধারণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যেখানে এমন ভঙ্গুর সেখানে করোনার মতো প্রাণঘাতী বিপর্যয় থেকে তারা কীভাবে উত্তরণ পাবে সে উদ্বেগ সবারই।

তবে বসে নেই ইয়েমেনবাসী। থেমে নেই ইয়েমেনের পর্দানশীন লাজুক নারীরা। আমাদের মায়েরা। করোনা থেকে উত্তরণের জন্য তারা কোনো দেশের চিকিৎসা সামগ্রী পাঠানোর অপেক্ষায় বসে নেই। নিজেদের সীমিত সামর্থের মধ্যেই তারা গ্রহণ করেছেন আত্মরক্ষার উদ্যোগ। নিজেদের উদ্যোগেই তারা বানাচ্ছেন মাস্ক এবং প্রটেকশন ইকুইমেন্ট।

১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি একটি ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিদিন কয়েক হাজার মাস্ক তৈরি করা হয়। যুদ্ধের কারণে কারখানাটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সপ্তাহ হয় পুনরায় চালু হয়েছে। অল্পদিনেই এক মিলিয়ন তথা দশ লাখ মাস্ক তৈরি করে ফ্রি বিতরণ করেছে কারখানাটি।

কারখানাটিতে দিনরাত কাজ করছেন ষাটজন নারী। এছাড়াও কয়েকজন পুরুষ কর্মী রয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, কারখানাতে কর্মরত প্রত্যেক নারী আগাগেড়া পর্দাবৃত।

ফাতিন মাসউদী নামের একজন নারীকর্মী জানান তার আকুতি ও অনুভূতির কথা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে তিনি বলেন, আমাদের এ দারিদ্র্যপীড়িত যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটি সম্পর্কে আমাদের চেয়ে বেশি তো আর কারো জানা নেই। আমরা জানি, আমরা কত অসহায়। সম্প্রতি আমরা নতুন করে জেনেছি করোনাভাইরাস ভয়াবহ রোগ। আমাদের তো নতুন করে দরিদ্র হওয়ার কিছু নেই। ইয়েমেনবাসীর চিকিৎসা গ্রহণেরও সঙ্গতি নেই। তাই আমরা, কিছু মাস্ক তৈরির চেষ্টা করছি। যেন অন্তত করোনায় আমাদের মরতে না হয়। আর আমাদের ভাইদের অর্থ দিয়ে মাস্ক কেনার সামর্থ যে নাই তাও আমাদের জানা। তাই বিনামূল্যেই মাস্ক বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছি।

আরো পড়ুন: করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে ফিলিস্তিনি তিন তরুণের ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ

ইনসাফ সালিহ নামের আরেক নারী বলেন, আমরা প্রতিজন প্রতিদিন একশোর মতো মাস্ক তৈরি করি। কেউ কেউ দেড়শতোর মতো বানাতে পারে। আমরা সামান্য সময় বিশ্রাম ছাড়া সারাদিনই কাজ করি। এটি নিশ্চয় পরিশ্রমসাধ্য এবং ক্লান্তিকর। তবে আমরা আমাদের জাতির সেবার জন্য এতটুকু পরিশ্রম করতেই পারি। রব ইনশাআল্লাহ এর প্রতিদান দিবেন।

করোনায় প্রতিদিন হাজার হাজার মৃত্যুর সংখ্যা গুণতে গুণতে আমরা যখন ক্লান্ত তখন জাতির সেবায় প্রাণ নিবেদনের এজাতীয় ঘটনা আমাদের কিছুটা হলেও সুখ দেয়।

পূর্ববর্তি সংবাদসাভারে ৫ হাসপাতাল ঘুরে বিনাচিকিৎসায় ব্যবসায়ীর মৃত্যু
পরবর্তি সংবাদভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল সিলেট