করোনায় মৃতদের লাশ দাফনে আল মারকাযুল ইসলামী: ‘এ কাজে শরিক হতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে’

ওলিউর রহমান ।।

দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যে একশো ছড়িয়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। শুরুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু হার কম থাকলেও সময় যাওয়ার সাথে সাথে তা যেন লাফিয়ে বাড়ছে।

মানুষের জীবদ্দশায় তার ব্যাপারে আত্মীয় এবং প্রতিবেশির যেমন কতিপয় দায়-দায়িত্ব থাকে মৃত্যুর পরেও তাদের কিছু হক থাকে। মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া, তার জানাযায় শরিক হওয়া অপরাপর মুসলিমের জন্য অবশ্য কর্তব্য। হাদিসে এক মুসলিমের ওপর আরেক মুসলিমের যে ছয়টি হকের কথা বলা হয়েছে তার একটি হলো ‘ইত্তিবায়ুল জানায়িয’ তথা জানাযায় শরিক হওয়া।

তবে চলমান পরিস্থিতিতে সংক্রমণের আশঙ্কায় করোনায় মৃতদের জানাযা, দাফন নিয়ে ঘটে গেছে নানা ঘটনা। করোনায় মৃত্যু হওয়া অনেকের পরম আত্মীয়কেও জানাযা, দাফনে শরিক হতে অসস্মতি জানাতে দেখা গেছে। অনেককে অবশ্য রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমতিও দেওয়া হয়নি।

করোনায় মৃত্যু হওয়া নাগরিকদের শরিয়তসম্মত পদ্ধতিতে সৎকার যখন রাষ্ট্র এবং জনগণের উদ্বেগের বিষয় ছিল তখন দ্বীনি দায়িত্ব পালন এবং মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসে আল মারকাযুল ইসলামি নামে একটি সামাজিক সেবামূলক সংগঠন।

আল মারকাযুল ইসলামির উদ্যোগে রাজধানীতে গতকাল ২০ এপ্রিল পর্যন্ত পঁচানব্বই জন করোনায় মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হয়েছে বলে জানা যায়। সংগঠনটির পনেরজন সদস্য দু’টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে রাজধানীতে কাজ করছে। মুহাম্মদপুরে আল মারকাযুল ইসলামী নামে একটি হাসপাতাল রয়েছে। তাদের রয়েছে ১৫ টি লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ী। সবগুলো গাড়ী করোনায় মৃতদের লাশ বহনে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইসলাম টাইমসকে এসব তথ্য জানান, আল মারকাযুল ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাওলানা হামযা শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সময় যত যাচ্ছে মৃত্যুর সংখ্যা তত বাড়ছে। আমাদের ১৫ জন সদস্য সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকে। চব্বিশ ঘন্টা আমাদের সদস্যদের প্রস্তুত থাকতে হয়। ঢাকা এবং আশেপাশে করোনায় কারো মৃত্যুর খবর শুনলেই তারা ছুটে যান বলে জানান মাওলানা হামযা শহিদুল ইসলাম।

চলমান লাশ দাফন কার্যক্রমে আল মারকাযুল ইসলামির একজন স্বেচ্ছাসেবী মাওলানা জবাইর আহমদের সাথে তাদের কার্যক্রম বিষয়ে বিস্তারিত কথা হয়। ইসলাম টাইমসকে তিনি বলেন, খিলগাঁও-এর সরকার নির্ধারিত কবরস্থানেই আমরা মৃতদের দাফন করি। আল মারকাযুল ইসলামীর উদ্যোগে নিশ্চিত করোনায় মৃতদের শুধু দাফন করা হয় বলে জানান তিনি।

মাওলানা জুবাইর আহমদ বলেন, প্রথমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মেসেজ করে আমাদের টিমকে মৃত ব্যক্তির অবস্থান এবং পরিচিতি বিস্তারিত জানানো হয়। পরে আমরা গিয়ে ডেথ সার্টিফিকিট দেখে ব্যক্তি শনাক্ত করি। এরপর প্রথমেই ডেটবডিকে স্প্রে করে জীবাণুমুক্ত করা হয়। এরপর বডিটাকে কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে আবার স্প্রে করে পলিথিনের ব্যাগে ভরা হয়। এরপর এম্বুলেন্সে করে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর জানাযা, দাফন সম্পন্ন করা হয়।

আল মারকাযুল ইসলামীর সেক্রেটারী মাওলানা এনামুল হাসান বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা কয়েকজন প্রথমে ডিজি হেলথ-এ গিয়েছি। সেখানে অভিজ্ঞ ডাক্তারেরা আমাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। পরে আমরা নিজেরা আবার ট্রাই করেছি এবং আমাদের অন্য সাথীদেরকেও ট্রেনিং করিয়েছি। এভাবে কাজটি আপাত কঠিন হলেও আমাদের কাছে এখন ইজি হয়ে গেছে।

এদিকে করোনায় মৃত্যু হওয়া দশজন হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে তাদের রীতি অনুযায়ী সৎকার করার জন্য শশ্মান পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার কথা জানান মাওলানা জুবাইর আহমদ।

লাশবহন এবং জানাযা, দাফনের সময় নিজেদের স্বাস্থ্য সচেতনতার কথা জানিয়ে মাওলানা জুবাইর আহমদ বলেন, আল্লাহর রহমতে দীর্ঘ একমাসেও আমাদের কোনো সদস্য অসুস্থ হননি। কাজটি নিঃসন্দেহে ঝুঁকিপূর্ণ। তবে আমরা খুব সতর্ক থাকি। পরিবারের পক্ষ থেকেও শুরুতে আতঙ্ক ছিল। তবে শরিয়তসম্মত পদ্ধতিতে একজন মুসলিমকে জানাযা, দাফন করা তো ফরজে কিফায়া। তাই দ্বীনি দায়িত্ব পালন এবং মানবিকতার দায় থেকে একাজে অংশ নিতে পেরে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।

আল মারকাযুল ইসলামী প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর অতিবাহিত করছে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই চিকিৎসা, লাশ দাফন এবং অন্যান্য সেবামূলক কাজ করে আসছে সংগঠনটি।

পূর্ববর্তি সংবাদসাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়তে পারে আরও এক সপ্তাহ
পরবর্তি সংবাদকরোনা পরিস্থিতির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের অভিবাসন বন্ধের ঘোষণা ট্রাম্পের