জাতীয় ভিডিও কনফারেন্সে আলেম প্রতিনিধি!

ভিডিও কনফারেন্সে আলেম প্রতিনিধি!

শরীফ মুহাম্মদ ।।

করোনা ভাইরাসে যখন গোটা দেশ থেমে আছে, তখন বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ও নির্দেশনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ক’দিন ধরে মাঝে মাঝে ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করছেন। এসব কনফারেন্সে একেকদিন ৭/৮ টি জেলা কভার করা হচ্ছে। এসব কনফারেন্সের কোনো কোনোটাতে স্থানীয় একজন আলেম প্রতিনিধিকে উপস্থিত করা হচ্ছে এবং তাকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কিছু কথা বলার সুযোগও দেওয়া হচ্ছে। সঙ্কট, বাস্তবতা, সামাজিক প্রতিনিধিত্ব ইত্যাদি বিবেচনায় এসব ভিডিও কনফারেন্সে একজন আলেম প্রতিনিধির উপস্থিতির ব্যাপারটাকে আমি ইতিবাচক বলেই মনে করি।

এখানে উপস্থিত আলোচক আলেম প্রতিনিধির দায় ও দায়িত্বের মাত্রাটা অনেক বড়। প্রতিনিধিত্বের সুযোগটা ঠিকঠাকমতো কাজে লাগাতে পারলে এটা বেশ উপকারী, আর উল্টো ব্যাপার ঘটলে এর দ্বারা বরং ক্ষতিই বেশি। গতকাল এবং এক-দেড় সপ্তাহ আগের দুটি ভিডিও ক্লিপ দেখলাম। ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন স্থানীয় দু’জন আলেম প্রতিনিধি। একজনের বক্তব্য বেশ ভাল লেগেছে, একজনের বক্তব্যে অনেক হতাশ হয়েছি। ইচ্ছা করেই এখানে জেলা এবং ওই জেলার প্রতিনিধি আলেমের নাম বললাম না।

দেখুন, আলেমদের প্রতিনিধি মানে প্রতিনিধি, তিনি নিজে আলাদা কেউ না সেখানে। এটা মাথায় এবং মনে রাখা দরকার। সামনেও এজাতীয় কনফারেন্স বা অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ আসতে পারে। তখনো এ দিকগুলোর প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।

প্রতিনিধিত্বের সুযোগে কোনো আলেম যখন গোটা জাতির সামনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন, তখন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ভদ্রতা, সৌজন্য, সম্মান বজায় রেখেই আলেমের আত্মমর্যাদা ও ব্যক্তিত্বের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যটি পুরোপুরি বজায় রাখতে হবে। অল্প সময়ের মধ্যে সমাজ ও মানুষের জন্য দরকারি কথা, সঙ্কট উত্তরণে স্থানীয় আলেমদের ভূমিকা ও অবদান তুলে ধরতে হবে। অতিশয় তেল মারামারি, চাটুকারিতা এবং ব্যক্তিত্বহীন আচরণ এসব ক্ষেত্রে কারো জন্যই কোনো উপকার বয়ে আনে না। প্রধানমন্ত্রী নিজেও একজন আলেমের কাছ থেকে দৃষ্টিকটু চাটুকারিতা পছন্দ করেন বলে মনে হয় না। সাধারণ নাগরিকরাও কোনো আলেমের বাড়াবাড়ি রকম চাটুকারি বক্তব্য ভালো চোখে দেখেন না। তেল মারামারি ও চাটুকারিতার জন্য অন্য লোক বরাদ্দ আছে, একথা আমাদের বুঝতে হবে।

আবারো বলছি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এবং একই সঙ্গে যেকোনো নাগরিকের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রকাশ এটা ভালো, এটা দরকারি। কিন্তু প্রকাশ্যে ব্যক্তিত্বহীন তৈলমর্দন কোনো আলেমের জন্য শোভন তো নয়ই, লাভজনকও হওয়ার কথা নয়। আর গোটা জেলার আলেমসমাজের প্রতিনিধিত্বের বিবেচনায় এটা মারাত্মক ক্ষতিকর। তবে এর সঙ্গে এ কথাও বলতে হবে, এই করোনা সংকট কালে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়ে যেন কোনো আলেম প্রতিনিধি আবার হঠাৎ করে প্রতিবাদী বা বিপ্লবী সেজে না বসেন। বিপ্লব বা প্রতিবাদের মানসিকতা থাকলে অন্য ফোরামে সেটা করা যেতে পারে। এজাতীয় সফট আয়োজনে হঠাৎ বিপ্লব কিংবা হঠকারিতা গ্রহণযোগ্য নয়। এরও ফল ভালো হয় না। অবশ্য এখনো পর্যন্ত এমন কাজ কেউ করেননি।

সংকটকালে এবং স্বাভাবিক সময়ে সমাজে আলেমদের অবদান ও প্রতিনিধিত্ব জোরালো হয়ে উঠুক, দৃশ্যমান ও উজ্জ্বল হয়ে উঠুক, কার্যকর ও কল্যাণকর হয়ে উঠুক, এই প্রত্যাশা ও দোয়া করি।

পূর্ববর্তি সংবাদকারওয়ানবাজারে খুচরা ক্রয় বিক্রয় নিষিদ্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন
পরবর্তি সংবাদচাল চোরদের ক্ষমা নেই: হুঁশিয়ারি ওবায়দুল কাদেরের