রমযানের এ ভরা বসন্তে

মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব ।।

রমযান মাস ইবাদতের বসন্তকাল। ঋতু বসন্তে যেমন পুরো প্রকৃতিজুড়ে স্নিগ্ধ সজীবতা ছড়িয়ে পড়ে, শুকনো জীর্ণ পত্র পল্লবহীন গাছ গাছালিতেও নতুন নতুন পাতা গজায়, বনাঞ্চল থেকে বহু দূরের কংক্রিটময় শহরেও টবের গাছে উঁকি দেয় নতুন কিশলয়। তেমনি রমযানে পুরো প্রকৃতিজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে রহমত ও বরকতের স্নিগ্ধ ধারা। প্রতিটি হৃদয়ে জেগে উঠে ইবাদত ও আল্লাহমুখিতার অসীম আবেগ। দ্বীনহীন জন মানবের শক্ত হৃদয়েও দোলা লাগে এ আবহের। জেগে উঠে তার সুপ্ত ঈমানী চেতনা, লুপ্তপ্রায় হৃদয়-সঞ্জীবনী।

হাদীস শরীফে এসেছে, এ মাসের প্রথম রাতেই জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের সকল দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তান ও দুষ্ট জীনদেরকে বন্দি করা হয় এবং আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে-

يَا بَاغِيَ الخَيْرِأَقْبِلْ، وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ

অর্থ : হে কল্যাণ-অন্বেষী, অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের পথিক, থাম।-সুনানে তিরমিযী, হাদীস ৬৮২

এই ঘোষণাকে যদি কেউ বলে ‘বাসন্তী কোকিলের ডাক’, তাকে সাধুবাদ দেওয়া ছাড়া আর কী বলা যায়! বস্তুত এ ধরনের আয়োজনের ফলেই এ মাসে মানুষ চেতনে এবং অবচেতনে উত্তম ও নেক কাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। মন্দ ও গোনাহর কাজের প্রতি অনীহাভাব তৈরি হয়। এভাবেই সবার হৃদয়ে কল্যাণের বাসন্তী হাওয়া বইতে থাকে। আবেগ-অনুরাগ নিয়ে মানুষ ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হয়।

কোরআন মাজীদে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর সিয়াম (রোযা) ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী (মুত্তাকী) হতে পার।-সূরা বাকারা : ১৮৩

এ আয়াত থেকে বুঝা যায়, বান্দাকে মুত্তাকীরূপে গড়ে তোলাই সিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। অতএব যদি কেউ রমযানের উসিলায় তাকওয়া হাসিল করে, প্রকৃত অর্থেই মুত্তাকী হয়, তাহলেই সে কামিয়াব।

মুত্তাকী হওয়ার সারকথা হলো, হৃদয়-মনে সবসময় আল্লাহ তাআলার স্মরণ জাগরূক থাকা এবং আল্লাহ তাআলার কথা মনে রেখে সকল গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। সেইসঙ্গে আল্লাহ তাআলার ভয় ও ভালোবাসায় তাঁর সকল নির্দেশ মেনে চলার চূড়ান্ত চেষ্টা করা।

রমযানে তাকওয়া অর্জনের প্রাথমিক একটি অনুশীলন হয় এভাবে যে, বান্দা আল্লাহর হুকুম পালন করতে গিয়ে রোযা রাখে। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকে। ফলে মধ্য দুপুরে কিংবা ক্লান্ত সন্ধ্যায় প্রচ- ক্ষুধা লাগে তার। পিপাসায় গলা শুকিয়ে যায়। তখন খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। ফ্রিজে থাকে ঠা-া পানি ও সুস্বাদু নানা পানীয়। সেইসঙ্গে থাকে নিভৃতে একাকী পানাহারের বাধাহীন সুযোগ। তবু সে খায় না। পান করে না। সে আল্লাহর হুকুমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। আল্লাহর হুকুম মানার আন্তরিক সংকল্পকে মজবুতভাবে গ্রহণ করে। এভাবে একটানা একমাস অনুশীলনের ফলে তার ভিতরে আত্মসংবরণ ও ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণের যোগ্যতা তৈরি হয়। আল্লাহর হুকুমকে গুরুত্ব দেওয়ার মানসিকতা দৃঢ় হয়। আল্লাহর হুকুম মানার আন্তরিক সংকল্প শক্তি ও গতি লাভ করে। এভাবে সে দ্বীনের সকল বিধানকে পালন করতে সচেষ্ট হয়। সকল নিষিদ্ধ কাজ থেকে বেঁচে থাকার অভ্যাস গড়ে তোলে।

মূলত এই রমযান ও তাকওয়া অর্জনের অনুশীলন বান্দারই একান্ত প্রয়োজন। সে নির্দেশই এসেছে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে। তাই বান্দা রমযানের রোযা রাখে আনন্দে, উৎসাহে, দৃঢ় প্রতিজ্ঞায়, উদ্যম ও উদ্দীপনায়। আর আল্লাহ তাআলা বান্দার এই রোযার প্রতিদান ঘোষণা করেন বড় আদরে সোহাগে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

الصَّوْمُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ

রোযা আমার জন্য। আর আমি নিজেই এর প্রতিদান কিংবা আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব।-সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৪৯২

সেইসঙ্গে বান্দাকে নিষ্পাপ ও নিষ্কলুষ করার লক্ষ্যে ঘোষণা করেন,

مَنْ صَامَ رَمَضَانَ،إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

যে ব্যক্তি পূর্ণ ঈমান ও বিশ্বাস নিয়ে সওয়াবের আশায় রমযান মাসের রোযা রাখে, তার অতীত জীবনের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।-সহীহ বুখারী, হাদীস ২০১৪

অর্থাৎ রমযানে বান্দা তাকওয়া অর্জন করার ফলে তো ভবিষ্যৎ জীবনকে পাপমুক্ত করার চেষ্টা করবেই। এখন তার পেরেশানী শুধু অতীতের গোনাহ নিয়ে। সে গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন এই রোযা রাখার উসিলায়। সুতরাং ভাগ্যবান হে রোযাদার। ভাগ্যবান এ বসন্তকে সর্বোচ্চ লাভবান হওয়ার কাজে ব্যবহারকারী।

পূর্ববর্তি সংবাদপয়লা মে থেকে দোকান মার্কেট খুলতে চায় মালিক সমিতি
পরবর্তি সংবাদরোগী না থাকায় বন্ধ হচ্ছে উহানের অস্থায়ী হাসপাতালগুলো