করোনায় মুসলিম বিদ্বেষ: এবার মহারাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হলো উচ্চস্বরে আযান

তারিক মুজিব ।।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ধর্মীয় উদারতার পরিচয় দিয়ে স্পেন, জার্মানি সহ ইউরোপের আরও কিছু দেশ মুসলমানদেরকে মসজিদে লাউডস্পিকারে উচ্চস্বরে আযান দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এর সম্পূর্ণ বিপরিত চিত্র দেখা গেছে ভারতে। দেশটিতে করোনা শনাক্তের পর বিভিন্ন প্রদেশে সম্পূর্ণ অসাংবিধানিকভাবে উচ্চস্বরে আযান দেওয়া নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

উগ্র হিন্দুত্ববাদী শীর্ষ বিজেপি নেতা যোগি আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ, আম আদমির কেজরিওয়ালের দিল্লির পর এবার মহারাষ্ট্রেও লাউডস্পীকারে আযান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।

আযান নিষিদ্ধের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে লাউডস্পীকারে আযান দেওয়া হলে লোক জমায়েত হবে। অথচ দেশটির মুসলিম নেতারা জানাচ্ছেন, করোনা সংক্রমণের পর থেকেই মসজিদে বড় জমায়েত বন্ধ রয়েছে। এতদসত্ত্বেও উচ্চস্বরে আযান নিষিদ্ধ করা সাংবিধানিক ধর্মীয় অধিকার হরণের শামিল বলে মন্তব্য করেন তারা।

এদিকে যোগী রাজ্য উত্তরপ্রদেশে আযান নিষিদ্ধের প্রতিবাদে রাজ্যের এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোর্ট মঙ্গলবারের মধ্যে আযান নিষিদ্ধের কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছে।

ভারতের চলমান মুসলিম বিদ্বেষ বিষয়ে আরব বিশ্বে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিবাদ করা হলে ভারতে কেন্দ্রীয়ভাবে কিছুটা নমনীয় আচরণ করতে দেখা গিয়েছিল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বিজেপির নরেন্দ্র মোদি আরবের বিশাল বাণিজ্য হারানোর ভয়ে সুর নরম করে টুইট করেছিলেন “কোভিড-১৯ ধর্ম দেখে আক্রমণ করে না। সকলে একসঙ্গে এর বিরুদ্ধে লড়াই করা দরকার।

আরব বিশ্বে সম্প্রতি জেগে উঠা প্রতিবাদের প্রতিরোধ করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এমন কৌশলি অবস্থান গ্রহণ করলেও দেশে ইসলামফোবিয়ার চিত্রের সামান্য বদল ঘটেনি। এর নজির আজকে মাহারাষ্ট্রে আযান নিষিদ্ধ করা।

করোনাকে ভারত সরকার মুসলিম নিধন এবং জাতিগত নিগ্রহের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছে। ফেব্রুয়ারীতেই দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়লেও ভারত কোভিড-১৯ বিস্তারের কারণ হিসেবে দেখাতে চেয়েছে দিল্লির নিজামুদ্দীনের তাবলিগের একটি জমায়েতকে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে রাজ্যে তাবলীগের সদস্যদের হেনেস্থা করা হয়েছে। চিকিৎসা দেওয়ার পরিবর্তে যোগী রাজ্যে ৫০ জন তাবলিগি সদস্যকে জেলে পুরা হয়েছে। আরও একধাপ এগিয়ে দিল্লিতে তাবলীগ জামাতের এই ঘটনার দায় দেশটিতে বসবাসরত সমগ্র মুসলিমের ওপর চাপানোর কসরত করা হয়েছে।

দরিদ্র মুসলিমদের রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা প্রদানে আপত্তি জানানো হয়েছে ক্ষমতাসীন সরকারের অনেক কর্তাব্যক্তির পক্ষ থেকে। মুসলমানদের সামাজিকভাবে বয়কটের ঘোষণাও দিয়েছে বিজেপির কোনো কোনো বিধায়ক।

ভারতের রাজনৈতিক এক্টিভিস্ট এবং বিশিষ্ট লেখক অরুন্ধতি রায় দেশের চলমান ঘটনাপ্রবাহের মূল্যায়ন করে বলেছেন, সরকার দেশে থেকে মুসলমান দমনের হাতিয়ার হিসেবে করোনাকে ব্যবহার করছে।

তিনি বলেন, ভারতের জাতীয়তাবাদী সরকার এই কৌশল ব্যবহার করে ‘‘অসৎ উদ্দেশ্যে নিখুঁতভাবে এমন কিছু করতে যাচ্ছে যার প্রতি বিশ্বের নজর রাখা উচিত৷’’ হিন্দুপ্রধান দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি ‘গণহত্যার দিকে ধাবিত হচ্ছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷

আরো পড়ুন: ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা বিপন্ন : ইউএসসিআইআরএফ

পূর্ববর্তি সংবাদমালয়েশিয়া ৪ মে থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে যাচ্ছে: ইয়াসিন
পরবর্তি সংবাদলকডাউন ভেঙে আড্ডা: বাঁধা দেয়ায় পুলিশ সদস্যের উপর হামলা