কোরআনের পাখিরা কে কোথায়

মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব ।।

রমযানুল মুবারক কোরআন নাযিলের মাস। এ মাসের সাথে কোরআন মাজীদের সম্পর্ক বড় মজবুত। এ মাসের ফরয ইবাদত রোযার সাথে কোরআন তিলাওয়াতের সম্পর্ক সুগভীর।

সাধারণ সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে যতটুকু তিলাওয়াত করা হয়, এ মাসের সুন্নাত তারাবীতেই তারচে অনেক বেশি তিলাওয়াত করা হয়। যারা তারাবীতে কোরআন খতম করেন-অলসতা না করে বাস্তবেই যা সবার করা উচিত-তাতে তিলাওয়াতের পরিমাণ প্রায় বেহিসাব! এছাড়া ইফতারের পর বাদ মাগরিবের আওয়াবীন এবং সাহরীর আগে পরে আদায়কৃত তাহাজ্জুদ, এসব নামাযেও রমযানে কোরআন খতম করা হয়। যারা সাধারণ দ্বীনদার, সারা বছর কোরআন তিলাওয়াতের প্রতি গুরুত্ব দেন না, তারাও এ মাসে খতমের জন্য সময় বরাদ্দ করেন। গভীর আবেগ নিয়ে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় তিলাওয়াত করেন। এ যেন চৌদ্দশ বছর পরেও কোরআন নাযিলের সেই প্রভাব ও প্রবাহ, যা এ মাসে প্রতিটি মুমিন-হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়ে।

কোরআন মাজীদে রমযান মাসের পরিচয়ই দেওয়া হয়েছে এভাবে যে, রমযান মাস-যাতে কোরআন নাযিল করা হয়েছে, যে কোরআন মানব জাতির জন্য পথপ্রদর্শক। এবং সৎপথ প্রদর্শন ও সত্যকে মিথ্যা থেকে পৃথক করার উজ্জ্বল প্রমাণাদি সম্বলিত।-সূরা বাকারা : ১৮৫

হাদীস শরীফে এসেছে- নিশ্চয় যে বক্ষে কোরআনের কোনো অংশ নেই, তা বিরান ঘরের মতো।-সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ২৯১৩

এছাড়া কোরআন মাজীদেই কোরআনকে বলা হয়েছে নূর ও হিদায়াত এবং অন্তকরণের সকল রোগ-ব্যাধির শিফা। আরও বলা হয়েছে, কোরআন সুস্পষ্ট আলো এবং প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত উজ্জ্বল প্রমাণ। বলা হয়েছে কোরআন মুমিনদের জন্য রহমত ও সুসংবাদ।

এসব আয়াত ও হাদীস একথাই প্রমাণ করে যে, কোরআনের মাধ্যমে বিরান হৃদয়গুলো আবাদ হয়। কোরআনের মাধ্যমে হৃদয়জগত আলোকিত হয়। কোরআনের মাধ্যমে মানুষ সকল অন্ধকার ঘুচিয়ে আলোর পরশ লাভ করে। সঠিক পথের দিশা পায়। কোরআনের মাধ্যমেই মানুষ লাভ করে আত্মিক প্রশান্তি ও অন্তরকরণের সব রোগের শিফা।

আর রমযান মাসে অধিক তিলাওয়াতে লাভ করে রমযানের প্রভূত কল্যাণ, সীমাহীন রহমত ও বরকত।

এ মাসে দুনিয়ার লাখো কোটি হাফেযের বক্ষস্থিত কোরআন যেমন উদ্ভাসিত হয়ে উঠে, তেমনি সব মসজিদ ও ঘর-বাড়িগুলো হয় মুখরিত। এ মাসে পুরো দুনিয়ায় যেভাবে কোরআনের সুর ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়, তেমনি ছড়িয়ে পড়ে রহমত, বরকত ও অবারিত কল্যাণের ফল্গুধারা। তিলাওয়াতের মধুময় গুঞ্জনে হৃদয় মনে আসে আল্লাহমুখিতার উপচে পড়া ঢেউ। সে ঢেউয়ে ভেসে যায় পাপ পঙ্কিলতা ও অযাচিত যত কামনা। ধুয়ে মুছে সাফ হয় আদি-অন্ত মনোজগত।

ছোট ছোট মাসুম বাচ্চারাও তিলাওয়াত করে। নিষ্পাপ কণ্ঠের সে তিলাওয়াত যেন হৃদয় মন শীতল করা বাসন্তী হাওয়ায় ঘন সবুজ বনে ফুটে থাকা ফুল কলিদের দোল-দোলা। যেন ঝাঁকবাধা পাখিদের মুগ্ধকরী কলতান। যেন অদৃশ্যালোক থেকে আসা হৃদয়কাড়া কলরব। কিংবা এরচেয়ে সুন্দর কিছু।

এসবই হয়ত কোরআন নাযিলের দূর প্রভাব! এসবই যুগান্তব্যাপী রমযানিক তিলাওয়াতের স্বর্ণধারা! রহমত বরকত ও প্রভূত কল্যাণের গভীর প্রকাশ!

ব্যক্তি হিসাবে জীবনের সব রমযান সবার একরকম যায় না। কোনো রমযান যায় খুব ইবাদতে, প্রচুরতিলাওয়াতে, নফল নামায ও দান সাদকার অবারিত সুযোগে। কোনো রমযান যায় কিছুটা গাফলতে কিংবা ভাটা পড়ে নফল নামাযে। সুযোগ কমে যায় দান সাদাকার। কোনো রমযানে তিলাওয়াত হয় কম। এজন্য প্রত্যেকেরই উচিত- অতীত রমযানগুলোর তুলনায় বর্তমান রমযানকে উত্তমতরভাবে কাটানোর চেষ্টা করা। বর্তমান সুযোগকে ভবিষ্যত সুযোগের আশায় অবহেলা না করা। বিশেষ করে কোরআন নাযিলের এ মাসকে কোরআনময় করে সম্মান জানানো। কোরআনের আলো নিয়ে জীবন আলোকিত করা। সর্বোপরি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই হাদীসকে মনে রাখা-

نِعْمَتَانِمَغْبُونٌفِيهِمَاكَثِيرٌمِنَالنَّاسِ: الصِّحَّةُوَالفَرَاغُ

দুটি নিয়ামতের ক্ষেত্রে বহু মানুষ ধোঁকায় থাকে। এক. সুস্থতা। দুই. অবসর।-সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪১২

কোরআন হিফযের নিয়ামত যারা লাভ করেছে, তাদেররমযান সত্যি ভাগ্যময়। তারাবী ও তারাবীর প্রস্তুতি, সেইসঙ্গে দিন রাতের নফল নামাযেতাদের কোরআন খতমের অপার সুযোগ।ফলে নানা ব্যস্ততায়ও তারা পায় কোরআনের সুধা পানে তৃপ্তির স্বাদ।

কিন্তু এই রমযানে তাদের সতর্ক হওয়ার বিষয় রয়েছে। মসজিদগুলোতে স্বাভাবিক তারাবী না হওয়ায় তাদের তিলাওয়াত কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাদের অনেকেই নিজ নিজ বাড়িতে। কিংবা নিয়মিত তারাবীর সুযোগ না পেয়ে কিছুটা বেখবর। ভাবা উচিত, বেশি পরিমাণে তিলাওয়াত তাদের এই নিয়ামতের শোকরের অন্তর্ভুক্ত। এই শোকর কেবল সুযোগ হিসাবে নয়, সাধ্যের সবটুকু চেষ্টা করে যেকোনো অবস্থায় আদায় করা উচিত।

পূর্ববর্তি সংবাদএক এমপি আক্রান্ত: কোয়ারান্টিনে নওগাঁর আরও দুই এমপি, ডিসি, সিভিল সার্জন
পরবর্তি সংবাদনিখোঁজ ফটোসাংবাদিক শফিকুল বেনাপোল থেকে উদ্ধার