মুহাম্মাদ আদম আলী।।
১। মানুষ বাঁচতে চায়। অনেকে একা বাঁচতে চায় না। অন্য কাউকে নিয়ে বাঁচতে চায়; বলেও―তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না। এটা সেই কবির কথা : ‘মিথ্যা করে হলে বলো, ভালোবাসি!’ এমনিতে আমরা যা বলি, এর বেশিরভাগই মনের কথা নয়। ভালোবাসি―এটাও।
আমরা আসলে কাকে ভালোবাসি, এই করোনা এসে সেটা বের করে ফেলেছে! বেশ কয়েকদিন ধরেই হযরত হাসপাতালে। যাই যাই করে আর যাওয়া হয়নি। প্রথমে দক্ষিণ বনশ্রীতে ইয়ামাগাতা হাসপাতালে ছিলেন। সেখানে নতুন একটি উপসর্গ দেখা দেওয়ায় ধানমন্ডীর আরেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। যাওয়ার জন্য মনে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
গাড়িওয়ালা কয়েক বন্ধুকে বললাম। কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছে না। একজন তো হযরতকে খুব মহব্বত করে। ভাবলাম, তিনি তো যাবেনই। না, তিনি খুব কায়দা করে না করে দিলেন। আরেকজন রাজি হয়েও বলল, ‘দোস্ত, হাসপাতাল! না গেলেই ভালো।’ সবাই এক নয়। আজ দুপুরে আরেক বন্ধু সত্যিই গাড়ি নিয়ে হাজির হলো। উত্তরা থেকে ধানমন্ডী। আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। গাড়ি পার্ক করে হাসপাতালের গেইটে ঢুকতেই দারোয়ান বলল, ‘কোথায় যেতে চান?’ ‘রোগী দেখতে।’ ‘আরে এ বিল্ডিং তো করোনা ইউনিট।’ ‘কারোনা….!’ ‘ভয়ের কিছু নেই। এখনো রোগি ভর্তি শুরু হয়নি। আপনারা পাশের বিল্ডিং-এ যান।’ গেলাম।
আলীশান হাসপাতাল। হযরতের রুম নম্বর জানি না। বন্ধুকে ফোন করতে বললাম। ফোনে কথা শেষ করে সে কিছু না বলে হাসতে লাগল। ‘কিরে, কয় তালায় যাব?’ ‘কই যাবি? হুযুর তো বাসায়।’ এবার আমিও না হেসে পারলাম না। আমরা তো উত্তরা থেকেই এসেছি। তিন-চার বাসা পরেই হযরতের বাসা। এখন অনেক খবর এলেও হাসপাতালের মানুষ বাসায় ফিরেছে, এ খবর বেশি আসে না। হযরতের খবরও আসেনি।
২। আবার সেই উত্তরা। তিন আঠারো চুয়ান্ন। হযরত এ নামতা যে কতজনকে বলেছেন! তিন নম্বর সেক্টর, আঠারো নম্বর রাস্তা, চুয়ান্ন নম্বর বাড়ি। হাসপাতাল ঘুরে এসেছি বলে হযরতকে একটু দেখার সুযোগ পেলাম। শুধু দেখা, কোনো কথা বলা যাবে না। তিনি ঘুমুচ্ছেন। একটা প্রশ্বস্ত খাটে হযরত চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। এভাবে তিনি সাধারণত ঘুমান না। এখন ঘুমাতে বাধ্য হচ্ছেন। নাকে নল লাগানো―অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। খাবার সেলাইনও পুশ করা হচ্ছে। নতুন সব যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। ঘরটা যেন হাসাপাতাল!
ডাক্তার বলেছে, ‘হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না। বাসায় নিয়ে যান।’ এজন্য আজ সকালেই নিয়ে আসা হয়েছে। গভীর ঘুম।। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। বারো দিন পর মানুষটাকে দেখলাম। সেই প্রথম রমযানের পর আর দেখা হয়নি। একটু ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল। সেই সুযোগ নেই। আমাদের বের হওয়ার ডাক পড়েছে।