ক্ষমার মাস : আসুন ক্ষমার অভ্যাস করি এবং ক্ষমা প্রার্থনা করি

মাওলানা হাসান মুরাদ ।।

ক্ষমা একটি মহৎ গুণ। ক্ষমা আল্লাহ তায়ালার সিফাত। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অভ্যাস। মুুুুমিনের ভূষণ। আমরা মানুষ সামাজিক জীব। একে অপরের সাথে মিলেমিশে বসবাস করি। তাই আমরা চলা ও বলার সময় অনেক ভুল করে থাকি। এ ভুল থেকে ফিরতে আমরা কখনো ক্ষমা করি আবার কখনো ক্ষমা প্রার্থনা করি।

রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কী জীবনে কাফেরদের পক্ষ থেকে অবর্ণনীয় কষ্ট-যাতনা সহ্য করেছেন। এক পর্যায়ে মক্কা থেকে মদিনাতে হিজরত করলেন। আবার সেই মক্কা ৮ম হিজরিতে ১০হাজার সাহাবাদের নিয়ে বিনা রক্তপাতে জয় করলেন। মক্কাবাসী ভেবেছিল আমরা মুহাম্মদকে যত কষ্ট দিয়েছে আজ হয়ত আমাদের আর রক্ষা নেই। কিন্তু না! মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকলকে সাধারণ ক্ষমা করলেন।

আল্লামা তাকি উছমানি বলেন, জিহাদের ৪টিস্তর। প্রথম স্তর হল ধৈর্য ধারণ এবং ক্ষমা করা।(তাকমিলাতু ফতহিল মুলহিম ৫/৫) ইরশাদ হচ্ছে- আর আপনি ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন, সৎ কাজের নির্দেশ দনি এবং মুর্খ জাহেলদের থেকে দুরে সরে থাকুন। ( আল-আরাফ ১৯৯) । ব্যক্তি জীবনেও রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপরাধীর অপরাধ ক্ষমা করে দিতেন।

হযরত জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রা. বর্ণনা করেন, আমরা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে নাজদ এর দিক  একটি জিহাদে গেলাম। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি কাটাবনযুক্ত উপত্যকায় আমাদের পেলেন। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি গাছের নিচে অবরতণ করলেন এবং তরবারিটি গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখলেন। আর মানুষজনও বিভিন্ন গাছের ছায়ায় বিশ্রামে গেল।

পরে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এক ব্যত্তি আমার কাছে এল। তখন আমি ঘুমন্ত।সে তরবারিটি হাতে নিল। আমি জেগে উঠলাম, আর সে আমার শিয়রে দাঁড়ানো। আমি কিছু বুঝে না উঠতেই দেখি তরবারি তার হাতে উন্মুক্ত। সে আমাকে বলল, কে তোমাকে আমার হাত থেকে রক্ষা করবে? তিনি বলেন, আমি বললাম , আল্লাহ। সে দ্বিতীয়বার বলল তোমাকে আমার হাত থেকে কে রক্ষা করবে। তিনি বলেন, আমি বল্লাম আল্লাহ। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সে তখন তরবারিটি কোষবদ্ধ করল। আর ওই যে সে বসে আছে। তারপর রাসুল স. তাকে কিছুই বললেন না।(মুসলিম শরীফ হা.নং ৫৭৫১)

এমন কঠিন অবস্থাতেও রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ক্ষমা করে দিলেন। অথচ আমরা অতি সামান্য বিষয় নিয়েও বাড়াবাড়ি করি। মানুষকে ক্ষমা করতে পারি না। আর যদি ধনবল বা জনবলে সমৃদ্ধ হয় তাহলে তো লঘু পাপে গুরু শাস্তি দিয়ে থাকি। আমরা প্রতিনিয়ত আল্লাহর সাথে কত নাফরমানি করছি এবং নামাজান্তে হাত তুলে কৃত নাফরমানির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। কিন্তু অন্যকে ক্ষমা করার অভ্যাস করছি না। বিশেষত স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা স্বজন ও প্রতিবেশিদের সাথে আমাদের সামান্য কারণেই নিয়মিত সংকট তৈরি হচ্ছে,বাড়ছে দূরত্ব । আমরা যদি পরস্পরে ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তুলি তাহলে এ সংকট দ্রুতই নিরসন সম্ভব।সুতরাং আমরা মানুষকে ক্ষমা করব এবং আল্লাহর কছে ক্ষমা প্রর্থনা করব। আশা করি আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দিবেন।

ক্ষমার আরেকটি দিক হল কারো কাছে অপরাধ করে থাকলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়া। কারণ আল্লাহ নিজের হক ক্ষমা করে দিবেনে। কিন্তু বান্দার হক ক্ষমা করবেন না। যদি বান্দা ক্ষমা না করে।হাদীস শরীফে এসেছে,হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি বলতে পার দরিদ্র কে? তারা বললেন, আমাদের মধ্যে যার টাকা-কড়ি, ধন-সম্পদ নেই সেই তো দরিদ্র। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সেই প্রকৃত দরিদ্র, অভাবগ্রস্ত যে কিয়ামতের দিন নামাজ, রোজা, যাকাত (সাওয়াব) নিয়ে আসবে অথচ সে এই অবস্থায় আসবে যে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, এর সম্পদ ভোগ করেছে, একে হত্যা করেছে, একে মেরেছে। এরপর প্রত্যেককে তার নেক আমল থেকে দেয়া হবে। এভাবে তার নেক আমল শেষ হয়ে যাবে। তারপরও পাওনাদার থেকে যাবে। তখন পাওনাদারদেরও গোনাহ ঐরব্যক্তিকে চাপিয়ে দিয়ে প্রাপ্য পূরণ করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।(মুসলিম শরীফ হা.নং ৬৩৪৩)

অর্থাৎ সেই প্রকৃত দরিদ্র যে অনেক নেকি নিয়ে হাশরের মাঠে উঠবে কিন্তু বান্দার হক নষ্ট করার কারণে সে জাহান্নামী হবে। রমযান ক্ষমার মাস। বিশেষত মাগফিরাতের দশকে আমরা বড় আশা নিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আল্লাহ মাফ করে দিবেন বলে ঘোষণাও দিয়েছেন। কিন্তু আমরা যারা অন্যের হক নষ্ট করেছি,সে জন্য কি নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি? কতজনকে গালি দিয়েছি, গীবত করেছি, আঘাত করেছি,সম্পদ লুট করেছি আরো কতো হক নষ্ট করেছি। সুতরাং আমরা অন্যকে ক্ষমা করার অভ্যাস করব। আল্লাহর হকের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করব। বান্দার হকের ব্যাপারে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিব। যদি নির্দিষ্ট ব্যক্তির সন্ধান না পাই অথবা ভুলে যাই তাহলে তার জন্য ক্ষমা চাইব। পাওনা থাকলে তার পক্ষ থেকে ছদকা করে তার জন্য মাগফিরাত কামনা করব। পরে সাক্ষাত হলে তার পাওনা পরিশোধ করব। আশা করি অতি দয়াময় সদা দয়ালু আল্লাহ আমাদরে ক্ষমা করে দিবেন।

 

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম বুজরুকগড়গড়ী,  চুয়াডাঙ্গা

পূর্ববর্তি সংবাদকার্বাইড দিয়ে পাকানো হচ্ছে আম
পরবর্তি সংবাদকরোনা ভাইরাস : দেশে মৃত্যুর হার কমছে