সন্তানদের ঈদ আনন্দ: তখন আর এখন

মাওলানা হাসান মুরাদ ।।

এই তো, শাওয়ালের রুপালি বাঁকা চাঁদ উঠলেই ঈদ।বয়সভেদে আমরা বিভিন্ন ভাবে ঈদ উদযাপন করি। তবে ঈদের আনন্দ ছোটরাই  বেশি উপভোগ করে।অভিভাকরাও সন্তানের আনন্দে হয় পুলকিত।আগের ঈদ-আনন্দ ছিল সকালে সালত আদায় করে এবাড়ি ওবাড়ি ছুটোছুটি। দিন শেষে হিসেব করা, কার কত টাকা সালামি হল।সালামির কিছু টাকা দিয়ে পছন্দের কিছু খাওয়া। আর সাদা টিনের তৈরি পিস্তল কেনা।কাগজে মোড়ানো বিন্দু-বারুদে গুলিমারা। আরো কতো কী …।

সময়ের আবর্তনে পরিবর্তন হয়েছে ঈদ উদযাপনেও। এখনকার ছেলেরা ঈদ আনন্দকরে নতুন ধারায়। রাস্তার ধারে সাদা-সবুজ সামিয়ানা টানিয়ে; তাতে লাইটিং ,তার ভেতরে কটা সবুজ চেয়ার আর বড় কালো সাউন্ড বক্স। তারপর শব্দ দূষণ আর শব্দ দূষণ । সকাল থেকে সন্ধা, সন্ধা থেকে ভোর। এগুলো এখন হার হামেশায় হয় আমাদের চোখের সামনে। অভিভাকদের নাকের ডগায়।আমরা নির্বিকার। দেখেও না দেখার ভান যাকে বলে। আর আমাদের মেয়েরা সেজে দলবেধে চলে যায় রাস্তায়, যেন রুপ প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা।এসব মেয়েরা কলেজে পড়লেও বাবা মায়ের কাছে ‘ছোট’। তাই পর্দার বয়স এখনো হয়নি।

ইসলাম তো নামাজের মতই পর্দাকে ফরজ করেছ। তাই আনন্দের ফাঁদে যেন পর্দাহীনতা আমাদের মেয়েদের ধ্বংস না করে। আমরা কিছু বলি বলে আমাদের বলে সেকেলে। নারি স্বাধিনতার অন্তরায়। আসলে আজ মানব জীবনের স্বভাবরুচিবোধ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।শুচি-শুভ্র ও নির্মল-পবিত্র জীবন যাপনের রুচিবোধ হারিয়ে গেছ।অথচ মুসলিম হিসেবে আমাদের সহজাত রুচিবোধ তৈরি হওয়া উচিত।সন্তানদের ভালোবাসব তবে সেটা যেন অন্যায়ের পথ খুলে না দেয়।

 

কোরাআনে ইরশাদ হচ্ছে- জেনে রেখ, নিশ্চয় তোমারেদ ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি তোমাদেরকে দুর্ভোগে ফেলার বস্তু, আর আল্লাহর কাছে আছে মহাপ্রতিদান। ( আনফাল-২৮) এখানে আল্লাহ তায়ালা মাল-সন্তানকে (ফিতনা) পরীক্ষার বস্তু বলেছেন। তাফসীরে তাওযীহুল কুরআনে বলা হয়েছে ,মাল-সন্তানের ভালোবাসা আল্লাহর আনুগত্যের সাথে হলে সেটা সওয়াবের কারণ। পক্ষান্তরে এ ভালোবাসা যদি নাফরমানি ও গুনাহর দিকে নিয়ে যায় তবে এটা মহামুসিবতের কারণ।

হযরত আবুহুরাইরা রা. বর্ণনা করেন, মানুষ মারা গেলে তিন প্রকার আমল ব্যতীত সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়।১.সদকায়ে জারিয়া ২. উপকৃত ইলম ৩. নেক সন্তান যে তার জন্য দুয়া করতে থাকে। (মুসলিম শরীফ-৪০৭৭) সুতরাং নিজের এবং সন্তান উভয়ের কল্যাণে অভিভাকদের সতর্ক হতে হবে।সন্তাদের নেক হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।

আরো পড়ুন: রমযানের শেষ দিনগুলো কীভাবে কাটানো উচিত

আমাদের সন্তান আদর্শ জাতি গঠনের অপার সম্ভাবনাময় বিন্দু। শুধু প্রয়োজন অভিভাবকের স্নিগ্ধ আদর্শের ছায়া, পরিচর্যা। ঈদের আনন্দে কত কিশোরকে দেখেছি  বন্ধুদের সাথে ধোঁয়া টানতে। আজ যদি ধোঁয়া দিয়ে শুরু হয় তবে কাল অন্য নেশা হতে আর কত দেরি? এখন তো নীতি-নৈতিকতা বিসর্জনের বহু উপকরন মওজুদ।সুতরাং অভিভাবদের ভাবতে হবে নির্মল হৃদয়ের অবুঝ সন্তানদের যেন এসব কালো থাবা ধরে না ফেলে।

অপরিণত বয়সের কত সন্তান যে জীবন শেষ করেছে তা বর্ণনাতীত। এর মূল কারণ ছিল অভিভাবকদের অযত্ম আর অবহেলা। অন্তর্দৃষ্টির অভাবে দ্বীন-ইসলামের বিধি-নিষেধকে আমরা সাধারণ ভাবছি,গুরুত্বহীন মনে করছি। অথচ ইসলামি সভ্যতায় মানুষকে শন্তির ঠিকানা দিয়েছে । বিষয়টি নিয়ে বুদ্ধি- বিবেকবান অভিভাবকগণ ভাবতে পারেন।

আরো পড়ুন: রমযানের বাকী সময়টুকু গনিমত মনে করে ইবাদতে কাটান: মুফতি তাকী উসমানী

তাই দ্বীনি স্বার্থে প্রিয় অভিভাকদের স্মরণে কিছু নিবেদন।১. ঈদকে কেন্দ্র করে যেন আমাদের সন্তান-সন্ততিরা উচ্ছৃঙ্খল জীবনের দিকে ঝুকে না যায় ২. আনন্দের ছলে যেন কোন ধরনের নেশায় আসক্ত না হয় ৩. ঘরে এবং বাইরে যেন পর্দা লঙ্ঘন না হয়। ৪. রমযানের মত যেন রমযান পরেও ইবাদতের প্রতি পূর্ণ মনোযোগি থাকে ৫. করোনাকালে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা এবং আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখা। ৬. ঈদ যেন শুধুই উৎসব না হয়। উৎসব যেন হয় ইবাদতের মাধ্যম।

শিক্ষক: জামিয়া ইসলামিয়াদ দারুল উলুম বুজরুগড়গড়ী চুয়াডাঙ্গা

পূর্ববর্তি সংবাদইরাকে নতুন আইএস প্রধান গ্রেফতার
পরবর্তি সংবাদকরোনা ভাইরাস: মহামারিকে যেভাবে দখলদারিত্ব বিস্তারে কাজে লাগাচ্ছে ভারত ও ইসরাইল