সামনাসামনি: ‘নতুন বছরের কিতাবগুলোর প্রাথমিক আলোচনা অবসর সময়টুকুতেই হল করে ফেলা উচিত’

প্রায় তিনমাস চলে মাদরাসায় চালু নেই পাঠ কার্যক্রম। ছাত্ররা কাটাচ্ছেন বাড়িতে অবসর সময়। এরই মধ্যে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়ে গেছে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায়। নতুন বছরের চলছে ভর্তি কার্যক্রম। তবে কবে নাগাদ দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং মাদরাসায় আবার পাঠ কার্যক্রম শুরু হবে তার ঠিক নেই। অবসর এই সময়টি মাদরাসার ছাত্রদের জন্য খুবই যন্ত্রণার। ছাত্ররা বাড়িতে অবসর এই সময়ের কীভাবে সঠিক মূল্যায়ন করতে পারে; এ বিষয়ে পরামর্শ চেয়ে যোগাযোগ করা হয় দেশের বরেণ্য আলেম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া দারুল আরকাম আল ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল এবং ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়ার শায়খুল হাদিস আল্লামা সাজিদুর রহমানের সাথে। ইসলাম টাইমসের পক্ষে তার সামনাসামনি হন- ওলিউর রহমান


 

ইসলাম টাইমস: দীর্ঘদিন যাবত ছাত্ররা মাদরাসায় নেই। পরীক্ষা ছাড়াই অসমাপ্ত অবস্থায় কওমি মাদরাসায় একটি বর্ষের সমাপ্তি হয়েছে। এ অবস্থায় পরীক্ষা, ছাত্রদের পড়াশোনা বিষয়ে আপনার কী পরামর্শ?

আল্লামা সাজিদুর রহমান: আমরা সবাই একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। তবে সময় থেমে নেই। তালেবে ইলমের কাছে সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণভাবে সবার সময়ের মূল্যায়ন করতে হবে।

অনেক মাদরাসায় বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। মাদরাসার দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে পরবর্তী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে বিভিন্ন বোর্ডের পরীক্ষা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। বাতিলের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এর মধ্যে হাইআতুল উলয়ার অধীনে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষাও রয়েছে। যা বাতিল করা সম্ভব নয়।

তাই যাদের পরীক্ষা রয়ে গেছে তাদের সময়কে হেলায় না কাটিয়ে পড়াশোনায় যত্নবান হওয়া উচিত। সময়মত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়া যন্ত্রণার বিষয়। তবে আদর্শ ছাত্রের জন্য পরীক্ষার সময় বিলম্ব হওয়া কিতাব পোক্ত ইয়াদ করার একটি মাধ্যমও। তাই বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখে পড়ালেখায় আরও বেশি মনোযোগী হওয়া কর্তব্য।

ইসলাম টাইমস: আপনি আগে যেমন বললেন, সময় থেমে নেই। এদিকে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়ে গেছে। বেফাকের পক্ষ থেকে নতুন বছরের জন্য মাদরাসায় ছাত্র ভর্তি করতে বলা হয়েছে। ভর্তির সাথে সাথে ছাত্রদের শুরু হয়েছে নতুন পড়াশোনা। নতুন পড়াশোনা বিষয়ে ছাত্রদের উদ্দেশে কি পরামর্শ দিবেন।

আল্লামা সাজিদুর রহমান: আমাদের দরসে নিজামির পাঠ্যক্রমে প্রতিবছরই নতুন কিছু ফন ( বিষয়) সংযুক্ত হয়। সাথে সাথে নতুন কিছু কিতাব। যে কোনো ফন এবং কিতাবের প্রাথমিক আলোচনাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাদরাসাগুলোতে উল্লেখযোগ্য সময় নিয়ে প্রাথমিক বিষয়াদি তথা মাবাদিয়াত পড়ানো হয়। তাই ছাত্রদের উচিত বাড়িতে সময় অপচয় না করে কিতাবের মাবাদিয়াতগুলো সাধ্যানুযায়ী হল করা উচিত। যেন মাদরাসা খোলার পর এগুলোতে সময় বেশি খরচ করতে না হয়।

ইসলাম টাইমস: কবে নাগাদ মাদরাসা খোলা হবে তা এখনও নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। এদিকে মাদরাসায় ভর্তি নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি কীভাবে দেখেন?

আল্লামা সাজিদুর রহমান: এটা একটা ভাল দিক। দীর্ঘদিন ছাত্ররা বাড়িতে থাকার কারণে মাদরাসা এবং উস্তাযদের সাথে তাদের যোগাযোগ কিছুটা কমে এসেছে। তাদের মাঝে কিছুটা অমনোযোগিতা বা উদাসীনতা দেখা যাওয়াটাও স্বাভাবিক। নতুন জামাতে ভর্তির মাধ্যমে ছাত্রদের মধ্যে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য জেগে উঠবে আশা করি। তারা পড়াশোনায় আগ্রহ ফিরে পাবে। রমযান থেকে আমাদের দায়য়িত্বশীলদের লক্ষ্য ছিল ছাত্রদের মধ্যে যেন উদাসীনতা ভর না করে। তাই আমাদের একান্ত চেষ্টা ছিল সরকারের সাথে আলাপ করে রমযানের পরে যেন অন্তত ছাত্রদের ভর্তি কার্যক্রম চালানো যায়।

ইসলাম টাইমস: আপনি যেমন বললেন, দীর্ঘদিন মাদরাসায় অনুপস্থিত থাকার কারণে উস্তাযদের সাথে ছাত্রদের যেগাযোগ কিছুটা কমে এসেছে। কেবল ভর্তি কার্যক্রম ছাড়া এটা কাটিয়ে তোলার বিকল্প কোনো পরামর্শ আছে কি না!

আল্লামা সাজিদুর রহমান: বিকল্প আছে। তবে ভর্তি কার্যক্রম এটার সহায়ক। আমাদের আবাসিক মাদরাসাগুলোতে বিভিন্ন জামাতের ছাত্ররা একেকজন উস্তাযের নেগরানিতে থাকেন। মাদরাসায় পরিভাষায় রুম জিম্মাদার বলা হয়। রুম জিম্মাদার উস্তাযগণ সর্বদা ছাত্রদের উৎসাহমূলক খোঁজখবর রাখবেন। দিক নির্দেশনা দিবেন। মাদরাসার দায়িত্বশীলদের এ ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিত। আমি আমার মাদরাসার উস্তাযদের এ বিষয়ে দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছি। নিঃসন্দেহে আমরা কঠিন পরিস্থিতির শিকার। সাধ্যানুযায়ী আমাদের সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।

ইসলাম টাইমস: ছাত্ররা দীর্ঘসময় ধরে বাড়িতে আছে। এ অবস্থায় তাদের প্রতি আপনার সাধারণ পরামর্শ কী থাকবে।

আল্লামা সাজিদুর রহমান: সময় খুবই মূল্যবান সম্পদ। ছাত্রদের বড় হতে হলে সময়ের কদর করেই বড় হতে হবে। আমার মনে পড়ে আমাদের সময়ে ছাত্ররা লজিং বাড়িতে যাওয়া আসার সময় কিতাব সাথে বহন করতেন। চলার পথে সাথীরা পরস্পরে মাসআলার আলোচনা করতেন। কারো কোনো বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকলে এ সময় আলোচনা করে হল করে নিতেন।

সময়ের প্রতি যত্নবান হওয়া প্রসঙ্গে হাসান বসরি রহ:-এর একটি বিখ্যাত উক্তি আছে। ‘প্রতিদিন সূর্য উদিত হওয়ার মাধ্যমে আমরা নতুন দিন একটি দিন নেয়ামত হিসেবে পাই। সুতরাং সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে এই নেয়ামতের কদর করা উচিত। কেননা সময় এমন নেয়ামত যা চলে যাওয়ার পর কখনো ফিরে আসে না’।

তাই আমাদের সকল তালেবে ইলম ভাইদের পরামর্শ থাকবে, কঠিন সময় উদাসীন না হয়ে আরও বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত।

পূর্ববর্তি সংবাদকরোনা সংক্রমিত শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ
পরবর্তি সংবাদটঙ্গীতে ট্রাকচাপায় মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু