‘সচেতনতা ও সহমর্মিতা বন্ধ করতে পারে করোনাকালে অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো’

রায়হান মুহাম্মদ।।

বেড়েই চলেছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। থামার যেন নাম নেই। প্রতিনিয়ত বাড়ছে মুত্যুর সংখ্যা, সাথে বাড়ছে সুস্থতার সংখ্যাও। ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে ঘটছে বিভিন্ন ঘটনা। কোনটা মানবিকও হ্যদত্যপূর্ণ, কোনটা আবার অমানবিকতা ও নিষ্ঠুরতায় ভরপুর। রোগ হিসেবে নতুন হওয়ায় শুরুর দিকে কিছু ঘটনা ঘটেছিল অনেকটা আতঙ্ক ও অসচেতনতা থেকে। তবে সময় গড়ার সাথে সাথে এ রোগ সম্পর্কে মানুষের মাঝে সচেতনতা ও অযথা আতঙ্ক দূর করতে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও দেশের স্বাস্থ্য অধিদফতর।

করোনায় আক্রান্তদের সাথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বৈষম্যমূলক আচরণ না করার আহ্বানও জানান তারা। কিন্তু মানুষ যেন আটকে আছে এক বৃত্তে। স্বাস্থ্য বিভাগের এসব সচেতনতা থোড়াই কেয়ার করছেন তারা। তাই প্রতিদিনই খবরের কাগজে দেখতে হচ্ছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। একেকটি ঘটনা অন্যটির থেকে আরো বেশি নির্মমতায় ভরপুর।মানুষের এমন আচরণ অবাক করছে সবাইকে।

সুনামগঞ্জে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া যুবেকের লাশ বহনে মসজিদের খাটিয়া ব্যবহার করতে না দেওয়া, নারায়ণগঞ্জে উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া গৃহবধুর লাশ এলাকায় দাফন করতে না দেওয়া, আক্রান্ত স্ত্রীর লাশ হাসপাতালে ফেলে স্বামীর নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া, করোনা সন্দেহে গভীর রাতে মাকে জঙ্গলে ফেলে আসার লোমহর্ষক ঘটনাগুলো ছাপিয়ে ইদানিং সবাইকে মর্মাহত করেছে করোনা আক্রান্ত ছেলেকে রাতের অন্ধকারে মা বাবার বাঁশ বাগানে ফেলে যাওয়ার ঘটনা। এছাড়াও আলোচনায় এসেছে  ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে পলিথিনে মোড়ানো করোনা আক্রান্ত ছেলের লাশ ফেলে যাওয়া এক বাবার ঘটনা। সেই বাবা অবশ্য বলেছেন,এলাকাবাসী  করোনা আক্রান্ত ছেলের লাশের সৎকার করতে দেবেন না এই আশঙ্কায় তিনি লাশ ফেলে গেছেন রাস্তার পাশে। অথচ করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির লাশ থেকে মৃত্যুর তিন ঘন্টা পর কোন রকম ভাইরাস ছড়ায় না বলে বারবার বলা হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে।

এই ঘটনায় অসচেতন এলাকাবাসীর পক্ষ লাশ সৎকারে বাধাগ্রস্ত হওয়ার ব্যাপারটি একটি সম্ভবনা মাত্র। কিন্তু সন্তানের প্রতি এক বাবার এমন নিষ্ঠুর আচরণ চমকে দিয়েছে সবাইকে। করোনা যেন চামরার আবরণে লুকিয়ে থাকা কিছু  মানুষের ভেতরের এক পৈচাশিক মুখোশ খুলে দিচ্ছে। সাথে চরম বিপদের সময় একান্ত আপনজনও  ছুড়ে ফেলতে পারে এমন বার্তাও দিচ্ছে আমাদের। কেয়ামতের ময়দানে ছেলে বাবাকে চিনবে না, বাবা পিতৃত্বের পরিচয় দিতে চাইবেন না, করোনাকালে ঘটে চলা ঘটনাপ্রবাহগুলো যেন কুরআনে বর্ণিত হওয়া সেসব আয়াতেরই প্রতিচ্ছবি।

‘ঘটনা বহুল পৃথিবীতে বিভিন্ন পরিস্থিতি আসতে পারে, এই পরিস্থিতিগুলোতে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা ও সহমর্মিতার পথ অবলম্বনই মানুষকে এসব অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে রক্ষা করতে পারে’ বলেছেন মারকাযুদ্দাওয়ায় আল ইসলামিয়ার উস্তায, মাসিক আল কাউসারের সহ-সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ্।

এছাড়া করোনা নিয়ে আশাব্যঞ্জক প্রচারণার মাধ্যমে এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা কমাতে মিডিয়া বড় ধরণের ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও মত দিচ্ছেন মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ্।

আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে সমাজে যে সব বিভৎস ঘটনা জন্ম  নিচ্ছে এক্ষেত্রে তিনি বলেন, এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও  মানুষের এই অমূলক ভীতি কোন ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ নয়। তার ভাষায় স্বাস্থ্যবিদদের নির্দেশিত সামাজিক দূরত্বের মর্ম বুঝতেই  যেন  অক্ষম হচ্ছে মানুষ।

এসব অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াও করোনাকালে সম্প্রীতি ও মহানুভবতার শত শত ঘটনা রয়েছে, সেগুলোর প্রচারণার মাধ্যমে মানুষের মাঝে ভাল কিছু করার আগ্রহ বাড়বে, এমন কথাই বলছিলেন মারকাযুদ্দাওয়ায় আল ইসলামিয়ার উস্তায, মাসিক আল কাউসারের সহ-সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ্।

পূর্ববর্তি সংবাদসাবেক চিপ হুইপ আব্দুস শহীদ করোনায় আক্রান্ত
পরবর্তি সংবাদচট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় অনীহা দেখানোয় ১০ চিকিৎসককে অব্যাহতি