আমিও একদিন চলে যাব

মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব।।

কুরআন মাজীদে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, (অনুবাদ) প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে। নিশ্চয় কিয়ামতের দিন তোমাদের সকলকে (তোমাদের কর্মের) পুরোপুরি প্রতিদান দেওয়া হবে। তখন যাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই সফলকাম। আর এই পার্থিব জীবন তো প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছু নয়।-সূরা আলে-ইমরান, আয়াত : ১৮৫

এই আয়াত বহুবার পড়েছি। বহুবার আয়াতটির অনুবাদ করেছি। মর্ম বক্তব্য নিয়েও ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু আজ যেন নতুন করে আয়াতটির বার্তা-বাণী হৃদয়জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করল। দীর্ঘক্ষণ কল্পনা জগতে অন্যরকম আবহ বিরাজ করল। আয়াতের বক্তব্য তো পরিষ্কার। তবু চোখে দেখা মৃত্যুর দৃশ্য কেমন যেন অন্যরকম অনুভূতি জাগিয়ে দেয়।

জীবন্ত মানুষ। খাওয়া দাওয়া হাসি আড্ডায় একেবারে স্বাভাবিক। স্বপ্ন কল্পনার গল্পকথায় আমাদের মতোই উজ্জীবিত। জীবন মরণের চিরায়ত বিশ্বাসও তার মুখে বহুবার শোনা। আরও শোনা স্মৃতিকথার কতো দীর্ঘ উপাখ্যান। কিন্তু হঠাৎ তার নিহত নিদ্রা। নীরব নিথর বাস্তবতা। চোখের সামনে চেনা চেহারা। হাসি আড্ডার সেই মানুষটি। সবার সম্মতিতে তাকে রেখে দেওয়া হচ্ছে মাটির গর্ভে। পূর্ব অভিজ্ঞতা বলছে, সে আর উঠে আসবে না। আর কখনো দেখা হবে না তার সাথে। কথা হবে না সকাল সন্ধ্যায়। সাক্ষাত করা যাবে না। ফোনেও কথা হবে না কখনো। চোখের সামনেই সবকিছু হলো। তবু অবিশ্বাস্য। তার ভিডিও চিত্রগুলো প্রমাণ করে- সে আছে, সে ছিল। কতো চেনা কণ্ঠ। স্পষ্ট হাতের নড়াচড়া। মাথা দোলানো। পরিচিত শব্দের ব্যবহার। পরিচিত হাসি। কথা বলার সেই ধরন। সবই আছে। জীবন্ত। এরপরও কিভাবে বিশ্বাস করি, সে নেই। কোথাও নেই। আসবে না কোনোদিন। কোনোদিন দেখা হবে না, কথা হবে না…

শুধু তাই নয়। নিশ্চিত জানি- একদিন আমিও তার মতো হবো। তার মতো নীরব নিথর হয়ে পড়ে থাকব। সম্মিলিত আয়োজনে রেখে দেওয়া হবে মাটির গর্ভে। আমিও আর কোনোদিন ফিরে আসব না। দেখবো না এই পরিচিত ঘরদোর। চিরচেনা আশপাশ। নিত্যদিনের এ পথ প্রান্তর। দেখা হবে না কারো সাথে। মা বাবা আপনজন কিংবা সাথী সঙ্গী-কারো সাথে। আমার ভিডিও চিত্রগুলো আগের মতোই দেখা যাবে। সেখানে দেখা যাবে আমার নড়াচড়া, কথা বলা, অবিকল সবকিছু। তখন যুক্তি দিয়ে কাউকে বোঝানো যাবে না- আমি নেই। অথচ একথা নিশ্চিত, আমি কোনোদিন ফিরে আসবো না। কথা বলতে পারব না আগের মতো। হাসি গল্পে আর কেউ কোনোদিন পাবে না আমাকে।

এই তো বাস্তবতা। এ-ই যে চিরসত্য। তবু যেন মন মেনে নিতে চায় না।

সেদিন যে একজন চলে গেল। কত ঘনিষ্টজন। চোখের সামনেই হলো তার কাফন দাফন। এরপর, আজ কতদিন তাকে দেখি না। ধীরে ধীরে যেন ভুলেই গেছি। মাঝে মধ্যে কোনো স্মৃতি মনে হলেও ব্যস্ততার কারণে আর ভাবা হয় না তাকে নিয়ে।

ঠিক একই ঘটনা ঘটবে আমার সাথে। আমি চলে গেলেও এমনই ভুলে যাবে সবাই। মাঝে মধ্যে মনে হলেও ব্যস্ততার চাপে ভাবার সুযোগ হবে না কোনোকিছু। ভাবলেই বা কী হবে? আমি তো নেই। আমার তো আর ফেরা হচ্ছে না। আমাকে নিয়ে তাদের ভাবনা আলোচনাও আমার কোনো কাজে আসছে না।

এসবই যেন নিঠুর বাস্তবতা। দ্বিধা সংশয়ের উর্ধ্বের কিছু বিষয়।

তাহলে দুনিয়ার এই যে এত কিছু, এত সব? কোরআন বলছে,

এই পার্থিব জীবন তো প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছু নয়।

হাদীস শরীফে হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إِذَامَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ: إِلَّامِنْ صَدَقَةٍجَارِيَةٍ،أَوْعِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ،أَوْوَلَدٍصَالِحٍ يَدْعُولَهُ

মানুষ যখন মারা যায়, তিনটি আমল ছাড়া সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। আমল তিনটি হলো, সাদাকায়ে জারিয়া, যে ইলম দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়। এবং যে নেক সন্তান তার জন্য দুআ করে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ১৬৩১

পূর্ববর্তি সংবাদবিক্ষোভের মুখে অবশেষে পুলিশ সংস্কারের নির্বাহী আদেশে সই করলেন ট্রাম্প
পরবর্তি সংবাদসিজারে প্রসূতি নারীর মৃত্যু, আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে ডাক্তারকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ