আম্ফানের এক মাস: গ্রামগুলো এখনো জোয়ারের পানিতে ভাসছে

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আঘাত হানে ঠিক এক মাস আগে, গত ২০ মে। আজ ২০ জুন। এই এক মাসেও সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা, আশাশুনি, শ্যামনগরের অনেকগুলো গ্রাম জোয়ারের পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। জোয়ারে পানি বাড়ে, ভাটায় একটু কমে; আবার পরের জোয়ারে আবারও বাড়ে। দিনের ২৪ ঘণ্টায় দুই বার জোয়ার, আর দুই বার ভাটায় দেশের পশ্চিম উপকূলের মানুষগুলো ডুবছে। ঘরবাড়িগুলো ভেঙে পড়ছে, এলাকায় কাজ নেই, ঘরে খাবার নেই, পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রীও নেই; সবমিলিয়ে মানুষগুলো একেবারে দিশেহারা।

আম্ফানের দাপটে সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলার সদর, উত্তর বেদকাশী ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের কমপক্ষে অর্ধশত জায়গায় নদী-বাঁধে ফাটল ধরে, পানি উপচে আসে। উত্তর বেদকাশীর গাজীপাড়া, হাজতখালি, কাঠমার চর গ্রামে শনিবারও (২০ জুন) জোয়ারের পানি উঠেছে। কয়রা সদরের পাশ দিয়ে দক্ষিণমুখী কপোতাক্ষ, যা দক্ষিণ বেদকাশীর পাশ ঘেঁষে সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। অন্যদিকে, শাকবাড়িয়া নদীটি উত্তর বেদকাশীর পাশ দিয়ে দক্ষিণমুখো হয়ে সেই সুন্দরবন হয়ে সাগরে মিলেছে। নদী-বাঁধ ভাঙনে দিনের ২৪ ঘণ্টায় দুইবার জোয়ারের পানি এসে এলাকা তলিয়ে দেয়। ভাটায় পানি সামান্য কমে বটে, তবে জোয়ারে আবারও পানি বাড়ে। কয়েকদিন পানি আটকে থাকায় মাটির পোতা বাড়িগুলো ঝুপ-ঝুপ করে বসে যাচ্ছে। বসতি ধ্বংসস্তূপ, চারিদিকে নোনাপানি, সুপেয় পানির আকাল, দিন পার করার মতো খাবারেরও জোগাড় নেই। এই অবস্থায় জোয়ারের পানি আটকাতে মানুষগুলো স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বিকল্প বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি আটকানোর চেষ্টা করে। দিনের পর দিন হাতে হাতে কাজ করে বাঁধ আটকানো মানে জোয়ারের পানি আটকানোর চেষ্টা। এরই মাঝে আবার অমাবশ্যা; ১৫ দিন পর আবার পূর্ণিমার। এ সময় জোয়ারের চাপে মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমের বাঁধ আবারও ধসে যায়। আবারও সেই নোনাপানি; আবার তা আটকানোর চেষ্টা।

ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে জীবনের ছন্দপতন ঘটেছে পশ্চিম উপকূলের মানুষদের। কয়রার ছোট আংটিহারা গ্রামের আইয়ুব হোসেন তাঁর ধসে পড়া ভিটেয় দাঁড়িয়ে বলেন, জোয়ারের নোনাপানি ঠেকানোর চেষ্টা করতিছি, গ্রামের মানুষ মিলেমিশে বাঁধ দিচ্ছি, আর গোণের সুমায় তা ভাইঙ্গে যাচ্ছে। ঘর-বাড়ি ঠিক করতি পারতিছি না। টাকা নেই। ঘরে খাবার নেই। কাজ নেই। ত্রাণও নেই।

কয়রা সদরের যুবক ইমতিয়াজউদ্দিন বলেন, ত্রাণের আশায় প্রতিদিন কয়রা সদরে শত শত নারী-পুরুষ ভিড় করে। বেশির ভাগ সময়ই তারা কিছুই পান না। প্রায় একই কথা বলেন, দক্ষিণ বেদকাশীর আবু সাঈদ। তার মতে এলাকায় খুব অভাব। মানুষের কাজ নেই। চাহিদামতো ত্রাণও পাচ্ছেন না। ঝড়ে যার আশ্রয়টুকু ধসে গেছে, তিনি কিভাবে আবার তা গড়ে তুলবেন, তা তিনি জানেন না। তার কাছে প্রতিদিনের খাবার জোগাড় করাই প্রধান সমস্যা।

পূর্ববর্তি সংবাদবিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি, তীরবর্তী মানুষ আতঙ্কিত
পরবর্তি সংবাদক্রিকেটার এমপি মাশরাফি করোনায় আক্রান্ত