মাওলানা তারিক জামিল।।
আমার ভাইয়েরা! আল্লাহর নবীর জীবনে বিশেষভাবে দু’টি জিনিস আমরা দেখতে পাই। এক: ইবাদত দুই: সৎব্যবহার। ইবাদতের তুলনায় সৎব্যবহারের পাল্লা সবচেয়ে ভারী। কারণ, ইবাদত না করার ক্ষতি নিজের সাথে সম্পৃক্ত আর ব্যবহার খারাপ হওয়ার ক্ষতি পুরো সমাজে ছড়িয়ে যায়।
আল্লাহ না করুন, (মনে করুন) আমি নামাজে উদাসীন, তাহলে এটা আমার নিজের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু যদি আমার মুখের ভাষা কঠোর হয়, তাহলে আমার স্ত্রী আমার কারণে পেরেশান। মা আমার কারণে পেরেশান। বাপ আমার কারণে পেরেশান। সন্তানরা আমার কারণে পেরেশান। ভাই পেরেশান। বন্ধুরা পেরেশান। আর যদি আমার মুখের ভাষা মিষ্টি হয়, তাহলে স্ত্রীও খুশী, বাপও খুশী, মাও খুশী, ভাইও খুশী, আত্মীয় স্বজনরাও খুশী।
যদি আমি মানুষকে মাফ করতে পারি, তাহলে আমি মানুষের অন্তরে জায়গা তৈরি করতে থাকবো। আর যদি মাফ করতে না পারি, তাহলে আমি ধন-দৌলত দিয়ে কারো অন্তর ক্রয় করতে পারবো না। গতকাল এক জায়গায় আমি আমার সাথী ভাইদের সাথে আলোচনা করছিলাম যে, পুরো কোরআনের মাঝামাঝি স্থানে একটি শব্দ এসেছে وليتلطف । অর্ধেক কোরআন এদিকে আর অর্ধেক ওদিকে। এর মাঝে একটি শব্দ এসেছে যা পুরো কোরআনকে এভাবে বরাবর করেছে, পাল্লার মাঝখানের কাঁটা যেমন দুই দিককে বরাবর করে। পুরো কোরআনকে বরাবর করেছে একটি শব্দ, وليتلطف। পুরো কোরআনের হৃদয় হলো একটি শব্দ, وليتلطف। পুরো কোরআনের মধ্যমণি হলো وليتلطف। পুরো কোরআনের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে وليتلطف। পুরো কোরআনের হৃদয়ের স্থানে রয়েছে وليتلطف।
পুরো কোরআন এদিক থেকে ওদিকে জমা করো, অথবা ওপাশ থেকে এপাশে জমা করো, পুরো কোরআনকে জমা করে একটি শব্দে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “নম্র ব্যবহার করো” “নম্র ব্যবহার করো” “লুত্বফের আচরণ করো”। লুত্বফ কাকে বলে? সাধারণ মানুষ, মা-বাপ, স্ত্রী, ভাই, সন্তান, বন্ধু, ছাত্র, বড়-ছোট সবার সাথে এমন আচরণ করা, যা হৃদয়ের গভীরে গিয়ে জায়গা তৈরি করে নেয়। এটাকে বলে লুত্বফ। وهو اللطيف الخبير । আললাত্বীফ বলা হয় যিনি হৃদয়ের গভীরে অবস্থান করেন। এই জন্য লাত্বীফ শব্দের সাথে খাবীর ( সর্ব বিষয়ে অবগত) শব্দও যোগ করা হয়েছে। কারণ, যিনি হৃদয়ে অবস্থান করবেন, তিনি তো (হৃদয়ের কথা) জেনেই যাবেন। তাই লুত্বফ বলা হয় ঐ আখলাককে, যা হৃদয়ের ভেতরে প্রভাব ফেলে। তুমি এরকম আচরণ করো যে, স্ত্রী আকৃষ্ট হয়ে তোমাকে চাইবে। স্ত্রী এমন আচরণ করবে যে, স্বামী মুগ্ধ হয়ে তাকে চাইবে। সন্তান এমন আচরণ করবে যে, মা-বাবা খুয়ে হয়ে তাকে চাইবে। মা-বাপ এমন স্নেহ করবে যে, সন্তানরা তাদেরকে ভালোবাসবে। শিক্ষকগণ এতোটা স্নেহ করবে যে, ছাত্ররা শিক্ষককে নিজেদের পিতা ও পরম ভরসাস্থল মনে করবে। পড়শীদের সাথেও এরকম মহব্বত তৈরি হবে।
আহ! আমার নবী বলেছেন, “আমার আল্লাহ পড়শীদের ব্যাপারে এতোবার বলেছেন,,, এতোবার বলেছেন,,, এতোবার বলেছেন যে, আমার ভয় হয়েছে না জানি উত্তরাধিকার সম্পত্তিতেও তাদেরকে অংশীদার করে দেন। আরো বলেছেন, “সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ ঐ ব্যক্তি, যে পেটপুরে আহার করে অথচ তার পড়শী ক্ষুধার্ত থাকে”। আরো বলেছেন, “আল্লাহর কসম! ঐ ব্যক্তি ঈমানদার নয়, আল্লাহর কসম! ঐ ব্যক্তি ঈমানদার নয়, আল্লাহর কসম! ঐ ব্যক্তি ঈমানদার নয়”। তিনবার বললেন। বলা হলো, “হে আল্লাহর রাসূল! কে সেই ব্যক্তি?” যে নামাজ পড়ে না, রোজা রাখে না, হজ্ব করে না, যাকাত দেয় না, মদপান করে, ব্যভিচার করে, জুয়া খেলে, সে? তিনি বললেন, “না, না, না, যেই ব্যক্তি পড়শীকে কষ্ট দেয়, সে ঈমানদার নয়, সে ঈমানদার নয়, সে ঈমানদার নয়”। হে আমার ভাইয়েরা! আমরা আমাদের নবীজির জীবনে এই দু’টি জিনিস বিশেষভাবে দেখতে পাই। একটি হলো নামাজ, যিকির, তিলাওয়াত, রোজা, হজ্ব, যাকাত, ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক। ইবাদত তো নির্দিষ্ট করা আছেই। আর দ্বিতীয়টি হলো আখলাক ও সৎব্যবহারের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দাদের সাথে সম্পর্ক। আমার নবী বলেছেন, “আমার সবচেয়ে বেশি মহব্বত ঐ ব্যক্তির সাথে, যার আখলাক ভালো। আর আমি সবচেয়ে বেশি অসন্তুষ্ট ঐ ব্যক্তিদের ব্যাপারে, যাদের আখলাক মন্দ হয়।”
অনুবাদ: শাহাদাত হুসাইন