অ-কাশ্মীরীকে নাগরিকত্ব প্রদান: উপত্যকায় হিন্দুত্ববাদী প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ

তারিক মুজিব ।।

কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদানকারী ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে চলতি মাস শেষে। ভারতের ক্ষমতাসীন কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারকে সারাবছর জুড়ে লকডাউন এবং উপত্যকা অবরোধ করে রাখা ছাড়া বড় কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা না গেলেও বছরপূর্তির আগে গত দুই মাসে কাশ্মীরে হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের প্রথম ধাপ চূড়ান্ত করে ফেলেছে।

গত মে মাস থেকে এ পর্যন্ত পঁচিশ হাজারের বেশি বাইরের লোককে কাশ্মীরের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়েছে। এ নিয়ে যেন কোনো প্রতিবাদ না হয় সেজন্য পুরো জুন মাসজুড়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী উপত্যকায় চালিয়েছে সাঁড়াশি অভিযান। প্রায় প্রতিদিনই কয়েকজন স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরী নিহত হওয়ার খবর গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া গেছে।

বাইরের লোকদের নাগরিকত্ব প্রদান করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট কাশ্মীরে ‘ডেমোগ্রাফিক চেঞ্জ’ আনতে যাচ্ছে ভারত সরকার। যেটি উপত্যকায় হিন্দুত্ববাদী প্রকল্প বাস্তবায়নের দৃশ্যমান প্রথম ধাপ। ডেমোগ্রাফিক চেঞ্জ বিশ্বব্যাপী জায়নবাদী প্রকল্প হিসেবে পরিচিত। ইয়াহুদিরা এই কৌশল প্রয়োগ করেই ফিলিস্তিনের বৃহৎ ভূমি নিজেদের দখলে নিয়েছে।

১৯৪৯ সালে কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করে ৩৭০ অনুচ্ছেদ ভারতের সংবিধানে যুক্ত হয়। এই অনুচ্ছেদ অনুসারে, কাশ্মীরের নিজস্ব সংবিধান থাকবে। সামরিক, যোগাযোগ এবং পররাষ্ট্রনীতি ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কেন্দ্রীয় সরকার উপত্যকায় কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। সংবিধানের এই ধারা অনুসারে পৃথক আইনকানুন দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের নাগরিকত্ব, সম্পদের মালিকানা, মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা হচ্ছিল। অন্য রাজ্যের অধিবাসীরা সেখানে জমি কিংবা সম্পদ কিনতে পারতো না।

কিন্তু দ্বিতীয় দফায় হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে গত বছরের ৫ আগস্ট কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদানকারী সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে। ফলে এখন বাধাহীনভাবেই বাইরের লোকেরা কাশ্মীরের ভূমি ক্রয়, নাগরিকত্ব গ্রহণ, স্থায়ী বসবাস এবং সরকারি চাকরির আবেদর করতে পারবে।

নতুন আইন অনুযায়ী কেউ কাশ্মীরে ১৫ বছর ধরে বসবাস করলে বা উপত্যকায় সাত বছর ধরে পড়াশোনা করে কিংবা দশম বা দ্বাদশ শ্রেণী উত্তীর্ণ হলেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে। ভারতীয় সরকারি কর্মচারীদের যারা কাশ্মীরে দশ বছর পরিষেবা দিয়েছে, তারাও এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করতে পারবে।

সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের প্রতি কাশ্মীরীদের বিশেষ আস্থা কোনোকালেই ছিল না। বিশেষ মর্যাদা আইন বহাল থাকা অবস্থায়ও উপত্যকায় নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। কাশ্মীরীরা সব সময় আযাদি তথা স্বাধীনতার সংগ্রাম করে এসেছে। তাদের সংগ্রাম সাত দশকের। ৩৭০ অনুচ্ছেদের ‘বিশেষ মর্যাদা’কে তারা প্রাপ্তির কিছু মনে করত না।

তবুও ভারতীয় সংবিধানের এই অনুচ্ছেদটি উপত্যকায় ভয়ঙ্কর হিন্দুত্ববাদী প্রকল্প বাস্তবায়নের কাগুজে বাধা ছিল।

গত বছরের ৫ আগস্ট অমিত শাহের উত্থাপিত বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বিলটি যেদিন পাস হয় সেদিন থেকেই কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের ভয়ঙ্কর রূপটি নতুন করে প্রকাশ হতে শুরু করে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা কাশ্মীরের নারীদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য এবং নিজেদের ‘পপুলেশন’ বৃদ্ধির ঘোষণা তখন থেকে প্রকাশ্য সমাবেশে হর হামেশায় দিয়ে আসছে। বিল পাসের পরদিন থেকেই শুরু হয়েছে ভিন্ন রাজ্যের লোকদের কাশ্মীরে জমি কেনার হিড়িক। যেন ইসরায়েলের বর্বরতম কায়দার পুনঃপ্রদর্শন করেছে ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা।

সর্বশেষ পঁচিশ হাজার বাইরের লোককে কাশ্মীরের নাগরিকত্ব প্রদানের মাধ্যমে ইয়াহুদিদের অনুসরণে হিন্দুত্ববাদী প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রথম ধাপের চূড়ান্ত সূচনা করা হল।

এ ঘটনার পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো কাশ্মীরকে ফিলিস্তিনের সাথে তুলনা করে খবর প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক একাধিক পত্রিকায় খবর ছাপা হয়েছে- ‘কাশ্মীর হচ্ছে দ্বিতীয় ফিলিস্তিন’।

পূর্ববর্তি সংবাদপর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হল কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
পরবর্তি সংবাদরোগী ভর্তি না নেওয়ায় টঙ্গীতে হাসপাতালে তালা দিয়ে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ