করদাতাদের গোপনীয় তথ্য ভিয়েতনামের হাতে চলে যাওয়ার অভিযোগ

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: দেশের আয়কর ব্যবস্থা বিশেষত আয়কর রিটার্ন ও কর প্রদান পদ্ধতিকে অনলাইনভিত্তিক করতে সরকারের নেওয়া বিপুল ব্যয়ের একটি প্রকল্প দুই বছর আগে শেষ হয়েছে। তিন দফা মেয়াদ বাড়ানোর পর ৯ বছর শেষে মূল্যায়নে দেখা গেল, করদাতাদের অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলসহ সার্বিক কর ব্যবস্থাপনাকে অটোমেশনের আওতায় আনার ফল কার্যত শূন্য। লাখ লাখ রিটার্নের মধ্যে অনলাইনে রিটার্ন জমা হয়েছে মাত্র ৫ হাজার! কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই পুরো টাকা নিয়ে গেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ভিয়েতনামের প্রতিষ্ঠান এফপিটি ইনফরমেশন সিস্টেম।

শুধু তাই নয়, উলটো দেশের করদাতাদের এ সংক্রান্ত সব ধরনের গোপনীয় তথ্য এখন কোম্পানিটির হাতে। ভিয়েতনামে বসেই কোম্পানিটি এ কার্যক্রমের মধ্যে প্রবেশ করতে পারছে। এতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের সব করদাতার আয়, সম্পদের গোপনীয় ও স্পর্শকাতর তথ্য রয়েছে। অথচ করদাতার কর সংক্রান্ত তথ্য গোপনীয় রাখার বিষয়টি রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা স্বীকৃত।

প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আয়কর সংক্রান্ত করদাতার তথ্য রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, গোপনীয় ও সংবেদনশীল তথ্য। আইন দ্বারা এ তথ্যের গোপনীয়তার সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। করদাতারা তথ্য দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে প্রতিনিধিত্ব করে। এখানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের তথ্যসহ আয়কর তথ্য রয়েছে।

এখানে করদাতাদের সম্পদের তথ্য, বার্ষিক আয়সহ নানা স্পর্শকাতর তথ্য রয়েছে। এসব তথ্য তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে চলে যাওয়া ‘খুবই বিপজ্জনক’। এফপিটির কারিগরি টিম এই সংবেদনশীল তথ্যে ভিয়েতনামে থেকেই প্রবেশ করতে পারছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি রাষ্ট্রের গোপনীয় তথ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এটি বিদ্যমান আইনেরও পরিপন্থি।

গত বছরের নভেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। অথচ এফপিটি এনবিআরকে সমন্বিত কর প্রশাসন পদ্ধতি (বাইট্যাক্স) এখনো বুঝিয়ে দেয়নি। এনবিআরকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের লাইসেন্সও এখনো হস্তান্তর করেনি। প্রতিবেদনে বলা হয়, এনবিআরের পক্ষ থেকে ভিয়েতনামের ঐ প্রতিষ্ঠানটিকে এ বিষয়ে একাধিকবার অনুরোধ করা হলেও তারা পুরো ব্যবস্থাপনা বুঝিয়ে দিচ্ছে না। ফলে বাইট্যাক্স পদ্ধতিটি এফপিটি ছাড়া এনবিআরের পক্ষে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এটি এনবিআরকে জিম্মি করে রাখার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে প্রতিবেদনে আশঙ্কার কথা জানানো হয়।

প্রকল্পটি যে ব্যর্থ হতে যাচ্ছে তা নিয়ে এনবিআরের অভ্যন্তরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনা ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে আইএমইডি ও প্রকল্পে অর্থায়নকারী সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংককে (এডিবি) একটি চিঠি দিয়েছিলেন। ঐ চিঠিতে প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে না করার জন্য এফপিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করেছিলেন তিনি।

এনবিআরের সাবেক সদস্য ড. সৈয়দ মো. আমিনুল করীম ইত্তেফাককে বলেন, এই প্রকল্পের নামে কেবল অর্থ আর সময়ের অপচয় হয়েছে। কিন্তু যে লক্ষ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল তা হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকালে পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন এনবিআরের আয়কর বিভাগের চার জন সদস্য। তাদের মধ্যে দুই জন এখন অবসরে। পুরো কাজ বুঝে নেওয়ার আগেই ভিয়েতনামের ঐ প্রতিষ্ঠানের অর্থ পরিশোধ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এর মধ্যে এক জনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১১ সালে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। পরবর্তীতে তিন দফা সময় বাড়িয়ে তা শেষ হয় ২০১৮ সালে। যদিও শেষ পর্যন্ত তা ২০১৯ সাল পর্যন্ত গড়ায়।

প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজ করার সূচকে অগ্রগতি হওয়ার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু ৯ বছরেও অগ্রগতি না হওয়ায় এ সুযোগ হারিয়েছে বলে ইত্তেফাককে বলেন বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সাবেক সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ড. মাশরুর রিয়াজ। তিনি বলেন, এর মধ্যে অর্থ ও সময়ের অপচয় হয়েছে। কিন্তু একটি ভালো সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে।

পূর্ববর্তি সংবাদহজ্বের মওসুম: আল্লাহর হুকুমের সামনে যেন সমর্পিত হই
পরবর্তি সংবাদজিহ্বা নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন