বিদ্যুতের ভূতুড়ে বিল সমন্বয়ের নির্দেশ বিইআরসির

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল সংশোধন করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিইআরসি (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন)। গ্রাহকরা যাতে জুলাই মাসে প্রকৃত বকেয়া বিল জমা দিতে পারে।

বিইআরসির সদস্য মকবুল ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, সারচার্জ (বিলম্ব মাশুল) ছাড়া বিদ্যুৎ জমাদানের সময় জুলাই পর্যন্ত বাড়ানোর পাশাপাশি গ্রাহকদের অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোকে গ্রাহকের বিল সংশোধন করে পুনরায় পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

যদিও বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনায় অনেক আগেই কাজটি শুরু করেছে বিতরণ সংস্থাগুলো। তারা দাবি করেছে, যেসব গ্রাহক অভিযোগ করেছে তাদের বিলগুলো যাচাই করে সমন্বয় করা হয়েছে। তারপরও যদি কোনো গ্রাহকের বাড়তি বিলের বিষয়ে আপত্তি থাকে, আমাদের অবগত করলে যাচাই সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডেসকো ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমীর আলী বলেন, মার্চে ৮০ শতাংশ মিটারের রিডিং নিয়ে বিল করা হয়েছে। ২০ শতাংশ পূর্ববর্তী মাসে গড় বিল করা হয়েছে। একইভাবে এপ্রিলের বিলও ৮০ শতাংশ রিডিং নিয়ে করা হয়েছে। আমরা নিজেরাই শট আউট করেছি ৬’শ ইউনিটের বেশি ব্যবহারকারী ১ হাজার খানেক গ্রাহকের বিল বেশি হয়েছিল। আমরা সেগুলো সংশোধন করে দিয়েছি।

যারা বেশি ইউনিট ব্যবহারের বিল জমা দিয়েছেন, তাদের পরবর্তী মাসের বিলের সঙ্গে সমন্বয় করে দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে যারা যে স্লাব পাওয়ার কথা সেটিও সমন্বয় করে দেওয়া হচ্ছে। এখনও কোনো গ্রাহক যোগাযোগ করলে তার বিল সংশোধন করে দেওয়া হবে।

অতীতে অনেক বছর জুন মাসে এসে এমন ভুতুড়ে বিলের বিষয়ে কমবেশি অভিযোগ পাওয়া যেতো। কিন্তু এ বছর ব্যাপক আকারে এই অভিযোগ উঠতে থাকে। বিশেষ করে এপ্রিল ও মে মাসের বিল নিয়ে গ্রাহকরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। প্রথমে বিতরণ সংস্থাগুলো অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও পরে প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন।

বিদ্যুৎ বিভাগ বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। টাস্কফোর্সের তদন্তের ভিত্তিতে ভূতুড়ে বিলের দায়ে ডিপিডিসি একজন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত, ৩৬টি ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এছাড়া ১৩ জন মিটার রিডার এবং ডাটা এন্ট্রি অপারেটরসহ মোট ১৪ জনকে চুক্তি ভিত্তিক কাজ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। নেসকো ২ জন মিটার রিডারকে বরখাস্ত করেছে। একজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলি করেছে। ওজোপাডিকো ২২৩ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদ বলেছিলেন, সব মিলিয়ে ৬২ হাজার ৯৬ বিলে অসঙ্গতি পেয়েছে টাস্কফোর্স। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) দুই কোটি ৯০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৩৪ হাজার ৬১১ জনের অতিরিক্ত বিল করা হয়েছে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নয় লাখ ২৬ হাজার ৬৮৯ জন গ্রাহকের মধ্যে ১৫ হাজার ২৬৬ জন, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ১০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৫ হাজার ৬৫৭ জন, নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) ১৫ লাখ ৪৮ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ২ হাজার ৫২৪ জন, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এর ১২ লাখ ১৩ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ৫৫৬ জন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর ৩২ লাখ ১৮ হাজার ৫১৫ জনের মধ্যে ২ হাজার ৫৮২ জন অতিরিক্ত বিলের শিকার হয়েছে।

দুঃখ প্রকাশ করে সচিব বলেছিলেন, আমরা সব সময়ই গ্রাহক বান্ধব। আমরা যে আস্থা হারিয়েছি আশা করছি তা শিগগিরই পুনরুদ্ধার করতে পারবো। ভবিষ্যতে বিতরণ কোম্পানিগুলো এ ধরনের সংকট সমাধানে শতভাগ মিটার রিডিং নিয়ে বিল করবে। করোনার মধ্যে আমাদের মিটার রিডাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার রিডিং করতে পারেনি। এজন্য এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। করোনার মধ্যে ৬০১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এর মধ্যে ১২ জন বিদ্যুৎকর্মী মারা গেছেন।

পূর্ববর্তি সংবাদপাটুরিয়া ঘাটে পারের অপেক্ষায় ১৩ শতাধিক যান
পরবর্তি সংবাদযুক্তরাষ্ট্রের বন্দিশিবিরে মানবেতর জীবনযাপন বাংলাদেশসহ ৮ দেশের মানুষের