রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেভাবে পালিত হল ঈদুল আজহা

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পালিত হয়েছে ঈদুল আজহা। সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পের কয়েকশ’ মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিওর এবং ব্যক্তিগত পশু কোরবানি দেওয়া হয়। এর আগে, সরকারিভাবেও রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য পশু কোরবানির ব্যবস্থা করা হয়।

উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আয়ুব আলী মাঝি জানান, ‘ঈদুল আজহার নামাজ ক্যাম্পে সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নামাজ শেষে এনজিওদের দেওয়া কোরবানির পশু জবাইয়ের পর আমার আওতাধীন সব রোহিঙ্গা পরিবারের মধ্যে তা বণ্টন করেছি। আল্লাহর রহমতে আজ খুব খুশি।’

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং টিভি টাওয়ার সংলগ্ন বটতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘এক ব্যক্তি আমাদের দুই মাঝির জন্য একটি ছোট কোরবানির পশু দান করেছেন। এই পশু জবাইয়ের পর আনুমানিক ৮০ কেজি গোশত পাওয়া যায়। এসব গোশত প্রায় চারশ’ পরিবারের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয়। এতে প্রতি পরিবার আড়াইশ’ গ্রাম করে পেয়েছেন।’

একই ক্যাম্পের আরেক রোহিঙ্গা মাঝি মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘আমাদের দেশ মিয়ানমারের চেয়ে বাংলাদেশে আমরা ভালো আছি। মিয়ানমারের আমরা ভালোভাবে নামাজ পড়তে পারিনি, কোরবানি করতে পারিনি। আজ আমরা বাংলাদেশে এসে সব কিছু করতে পারছি। এতে আমরা খুশি।’

এদিকে কোরবানি হলেও ক্যাম্পের অনেকে গোশত পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গা যুবক আবু তাহের বলেন, ‘কোরবানির ঈদে আমরা খাওয়ার জন্য কিছু গোশত পেলেও, ক্যাম্প-১ এর সি-ব্লকের রোহিঙ্গারা কোনও গোশত পাননি। কোন এনজিও এবং সংস্থা সেখানে গরুর গোশত বিতরণ করেনি।’

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান জানান, ‘কক্সবাজারের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক হাজার ২০টি মসজিদ ও ৫৪০টি নুরানী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও টেকনাফের নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫টি, অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২৪৫টি ও ২০টি নুরানী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব মসজিদ ও নুরানী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঈদের জামাত আদায় করেছেন মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। এতে কোনও অসুবিধা হয়নি।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘আজকের কোরবানির ঈদে রোহিঙ্গাদের মধ্যে যথাসম্ভব গোশত বিতরণ করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত বিভিন্ন এনজিও, সংগঠন থেকে ও ব্যক্তিগতভাবেও কোরবানির পশু দান করা হয়েছে। পশুগুলো কোরবানির নামাজের পর পরই জবাই করে পরিমাণ মতো গোশত বিতরণ করা হয়েছে।’

গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাদের নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণসহ নানা নির্যাতন থেকে বাঁচতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ৯ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা। এর আগে ২০১৬ সালে ৭৫ হাজারসহ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা সদস্য। এসব রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি ক্যাম্পে আছে। সে থেকে এখনও আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনী।

পূর্ববর্তি সংবাদসৌদিতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের রাজনীতি ও সাংবাদিকতা নিষিদ্ধ
পরবর্তি সংবাদভারতের পর এবার টিকটক নিষিদ্ধ করল আমেরিকা