‘সাহেদ স্টাইলে’ প্রতারণা: হবিগঞ্জে যুবক গ্রেপ্তার

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে ছবি তুলে সেসব দেখিয়ে সুবিধা আদায় ও প্রতারণার আদর্শ ব্যক্তি মোহাম্মদ সাহেদ। রিজেন্ট হাসপাতালে করোনার ভুয়া সনদ বিক্রির অভিযোগে যিনি বর্তমানে গ্রেপ্তার রয়েছেন। একই কায়দায় প্রতারণা করে হবিগঞ্জে গ্রেপ্তার হয়েছেন আরেক যুবক।

মন্ত্রী, এমপি ও সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করাই ওই যুবকের পেশা। অবশেষে গোপনে জেলা প্রশাসকের বাসভবনের ড্রয়িংরুমে ঢুকে ছবি তুলে ফেইসবুকে পোস্ট করে ধরা পড়েন তিনি।

এই প্রতারকের নাম শাহ আফজল হোসেন (২৮)। প্রতারণায় শিকার হওয়া দুই ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ থানায় মামলায় করেছেন। মঙ্গলবার রাতে হবিগঞ্জ সদর থানা পুলিশ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। শাহ আফজাল হোসেন সদর উপজেলার আউশপাড়া গ্রামের আব্দুল হেকিমের ছেলে। বুধবার তাকে কারাগারে পাঠান হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত ৮টার দিকে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে গোপনে জেলা প্রশাসকের বাংলোতে প্রবেশ করেন আফজাল হোসেন। বাংলোর ড্রয়িংরুমের চেয়ারে বসে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় ছবি তুলে ফেইসবুকে পোস্ট করে। রাতেই বিষয়টি নজরে আসে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে প্রতারক আফজালের মোবাইল ট্র্যাকিং করে অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তাকে ফোন করা হলে তিনি ভুয়া ঠিকানা জানান।

এরপর মঙ্গলবার দুপুরে প্রশাসনের লোকজন কৌশলে আফজাল ও তার সহযোগীদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হাজির করেন। ভুল স্বীকার করে মুচলেকা দিলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে প্রতারক আফজাল আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রতারণার শিকার লোকজন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে সদর থানা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হাজির হন।

হবিগঞ্জ  সদর মডেল থানার ওসি মো. মাসুক আলী ও ওসি (তদন্ত) দৌস মোহাম্মদের নেতৃত্বে পুলিশ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। সন্ধ্যায় আফজাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

ওসি (তদন্ত) দৌস মোহাম্মদ জানান, হবিগঞ্জ সদর থানায় প্রতারণার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন শায়েস্তানগর এলাকার ঠিকাদার মোহাম্মদ টিপু ও ফারুক মিয়া নামে এক ব্যবসায়ী। টিপু অভিযোগে উল্লেখ করেন যে, শহরে বড় কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন প্রতারক আফজাল।

ব্যবসায়ী ফারুক মামলায় উল্লেখ করেন, তার স্ত্রীকে চাকরি দেওয়ার নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আফজাল।

এদিকে আফজালের আটকের পর মুখ খুলতে শুরু করেন প্রতারণার শিকার লোকজন। অভিযোগে বেরিয়ে আসে তার প্রতারণার বিভিন্ন কাহিনি।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী সাংবাদিকদের জানান, আফজাল রাজনৈতিক নেতা, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কৌশলে ছবি তুলে তা ফেইসবুকে প্রচার করতেন। মানুষকে বোঝাত তাদের সঙ্গে তার সখ্য রয়েছে। চাকরি, বদলি, ঠিকাদারি পাইয়ে দেওয়া, জামিনসহ বিভিন্ন তদবিরের নামে লোকজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিত আফজাল।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, রুমেল নামে আরেক যুবক সরকারি ও দেশের একটি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানে  চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করছে। সে-ও একই কায়দায় বড় বড় রাজনৈতিক নেতা, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে মোবাইলে ছবি তুলে বিভিন্ন তদবিরের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।

সূত্র জানায়, রুমেলের সঙ্গে আফজলের সখ্য রয়েছে। রুমেলের বাড়িও হবিগঞ্জ সদর উপজেলায়।

পূর্ববর্তি সংবাদপুরো কাশ্মির-গুজরাটের জুনাগড়কে পাকিস্তানের অংশ বলে মানচিত্র প্রকাশ,যা বলছে ভারত
পরবর্তি সংবাদসিনহার মৃত্যু বিচ্ছিন্ন ঘটনা, দুই বাহিনীর সম্পর্কে চিড় ধরবে না: দুই বাহিনীর প্রধান