সামাজিক মাধ্যমে শিশুদের তথ্য ও ছবি: নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ‍উপর জোর দিলেন বিশেষজ্ঞগণ

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: ফেসবুকে ছবি আপলোড করার বাতিক আজকাল অনেকের মধ্যেই দেখা যায়, যা পরিহারযোগ্য। যেটা ব্যক্তিগত সেটা ব্যক্তিগতই রাখা উচিত। তাছাড়া নিজের সবকিছু শেয়ার করা ব্যক্তির নিরাপত্তা সম্মান সম্ভ্রমের জন্যও হুমকি হতে পারে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের একজন খেলোয়াড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের শিশুকন্যার ছবি শেয়ার করে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সূর্যমুখী ফুলের এক বাগানে পরিবার নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ওই ক্রিকেটার। সেখানে তার শিশুকন্যার কয়েকটি ছবি তুলে নিজের ভেরিফায়েড ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে তিনি আপলোড করেন। মুহূর্তেই ওই ছবির নীচে অসংখ্য কমেন্ট পড়তে থাকে। এর মধ্যে কয়েকটি মন্তব্য ছিল বেশ খারাপ ইঙ্গিতপূর্ণ।

এই কমেন্টগুলোর স্ক্রিনশট শিশুটির ওই ছবির ওপর বসানো একটি পোস্ট ফেসবুকে দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। এর আগে আরেক ক্রিকেটারের মেয়ের ছবিতেও এমন আপত্তিকর মন্তব্য দেখা গিয়েছিল। এ ধরণের একের পর এক উদাহরণ   থেকে শিক্ষা নিয়ে অনেকেই নিজের ও নিজের সন্তানের ছবি এখন শেয়ার করতে সতর্ক হচ্ছেন।

গণমাধ্যমের সাথে কথা প্রসঙ্গে এক বাবা বললেন, “আমার সন্তানের বয়স এক বছর। খুব ইচ্ছা হয় তার সব মুহূর্তের ছবি আপলোড দিতে। কিন্তু খোলোয়াড়দের মেয়ের ছবির সাথে যা হয়েছে, সেটা থেকে শিক্ষা নিলাম। মানুষ অনেক জাজমেন্টাল। কিছু না ভেবেই যাচ্ছেতাই মন্তব্য করে দেয়। বাচ্চা মোটা কেন, শুকনা কেন, কালো কেন?’

বাংলাদেশে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে পৃথক আইন আছে। কিন্তু সেখানে কোথাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিশু সুরক্ষার বিষয়টি আলাদাভাবে উঠে আসেনি।

আরো পড়তে পারেন:স্মার্টফোনে ‘ব্যক্তিগত’ ছবি: আমাদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বলা আছে, কেউ কোন ডিজিটাল মাধ্যমে আক্রমণাত্মক তথ্য প্রকাশ করে যদি কাউকে অপদস্থ করেন তাহলে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড, তিন লাখ টাকার অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড দেয়া হবে।

এই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকার অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড দেয়া হবে।

এছাড়া অনুমতি ছাড়া কারও পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহারের অপরাধে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, পাঁচ লাখ টাকার অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান আছে।

এই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকার অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড দেয়া হবে।

কিন্তু এই আইনও তেমন কাজে আসবে যদি না আপনি সচেতন হন।

সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনার আ.ফ.ম. আল কিবরিয়া বলেন “আপনি যদি ভিকটিম হন, আপনাকেই পুলিশের কাছে আসতে হবে। মামলা করতে হবে। পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে যে করে না তা নয় তবে প্রতিকার আপনাকেই চাইতে হবে। তারপর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

বাংলাদেশে কোটি কোটি ফেসবুক আইডি আছে। এরমধ্যে অনেক অপরাধ সংঘটিত হয় ফেইক বা ভুয়া আইডি থেকে হয়। সবটা পুলিশি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নজরদারিতে আনা প্রায় অসম্ভব বলে জানিয়েছেন কিবরিয়া।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশুদের ছবি বা যেকোনো তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হওয়ার ওপর সেইসঙ্গে এসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ নিয়ে আরও বেশি প্রচারণার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢালাওভাবে শিশুদের ছবি ও তথ্য শেয়ার করলে এর বিরূপ প্রভাব শিশুটির বর্তমান ও ভবিষ্যতের ওপর পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

পূর্ববর্তি সংবাদউইঘুর মুসলিমদের নিপীড়ন করলেও পাকিস্তানীদেরকে ভাই আখ্যা দিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট
পরবর্তি সংবাদকরোনাভাইরাস রুগ্ণ সংবাদপত্রশিল্পের জন্য আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে: নোয়াব