ইসরাইল-আমিরাত চুক্তি: লাভ-ক্ষতি মিলিয়ে শেষরক্ষা কি হবে?

মুফতী আবুল হাসান মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ।।

চলতি সপ্তাহের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সবচে আলোচিত ঘটনা নিশ্চয়ই সংযু্ক্ত আরব আমিরাত এবং ইসরাইলের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি। এখনো পুরো বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলোতে এই চুক্তি নিয়ে বিভিন্নমুখি আলোচনা-বিশ্লেষণ চলছে। এটা চলবে হয়ত আরো বহুদিন। গত ১৩ আগস্ট ২০২০ঈ. তারিখে হঠাৎ করেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ওভাল অফিস থেকে এই চুক্তির ঘোষণা দেন।

এখানে অনুধাবন করার মতো বিষয় হচ্ছে, চুক্তি হয়েছে ইসরাইল এবং আরব আমিরাতের মধ্যে এশিয়ায়। অথচ চুক্তির ঘোষণাটি এই দুই রাষ্ট্রের কেউই দেয়নি; দিয়েছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট তার অফিস থেকে। তিনি এটাকে ‘ঐতিহাসিক চুক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই চুক্তিতে বিশ্বের মুসলমানরা খুব স্বাভাবিক কারণেই ব্যথিত হয়েছে। শুধু মুসলমানরাই ব্যথিত হয়নি; বিশ্বের অন্য যারা শান্তিপ্রিয় লোক আছে, তারাও খুব অবাক হয়েছে আরব আমিরাতের এই কাণ্ডে। আরব আমিরাতের পক্ষে এই চুক্তিটি করেছেন সেদেশের ক্রাউন প্রিন্স বা যুবরাজ।

দেখার মতো বা হাস্যকর একটি বিষয় হলো, মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দুটি রাষ্ট্রই এখন যুবরাজদের কর্তৃক পরিচালিত। এক রাজার তো খবরই নেই, তিনি কোথায় আছেন। আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন যায়েদের অনেক দিন থেকে খবর নেই। হয়তো বা তিনি অসুস্থ। দেশ চালাচ্ছেন ছোট ভাই যুবরাজ। আবার তার পার্শ্ববর্তী সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রটি- সেই রাষ্ট্র আবার হারামাইন শরীফাইনেরও দায়িত্বে; সেটাও প্রকৃত অর্থে যুবরাজই চালান। সেই দুই যুবরাজের নামেরও মিল আছে এবং তাদের কর্মকাণ্ডও প্রায় একই স্টাইলে, একই ধরনে চলছে। অনেকে অনুরোধ করেছেন এই সম্পর্কে কিছু বলতে বা লিখতে। তাই এ লেখার অবতারণা।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ কর্তৃক এই চুক্তি করায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। কিন্তু আমি বা আমার মতো অনেকেই হয়তো খুব অবাক হয়নি এই চুক্তি দেখে। একটা গুঞ্জন ছিল এবং দীর্ঘদিন থেকেই অনেকেই বলাবলি করছিলেন। অনেকেই লেখালেখিও করছিলেন যে, গোপনে তাদের মধ্যে সম্পর্ক  অনেকদূর আগে থেকেই এগিয়ে ছিল। শুধু তারাই নয়; মধ্যপ্রাচ্যের আরো কোনো কোনো দেশেরও ইসরাইলের সাথে গোপনে সুসম্পর্ক চলছিল। শুধু তাদের দেশের নাগরিকরা তাদের বিরুদ্ধে রেগে যেতে পারে, ফুঁসে উঠতে পারে, এরকম আশংকা থেকে তারা এতদিন এগুলোকে প্রকাশ করেনি।

আরব আমিরাতের অবস্থান যে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের পাঠকদের হয়তো মনে আছে যে, মুসলমানদের উপরে দমন, নির্যাতন, নিপীড়নের ক্ষেত্রে একেবারে রেকর্ড সৃষ্টিকারী ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার যখন কাশ্মিরের মুসলমানদের উপর চরম নির্যাতন চালায়, কাশ্মিরকে প্রায় অবরুদ্ধ করে রাখে, এবং যখন ভারতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন পাশ করার পর সেদেশে ব্যাপকভাবে গণআন্দোলন চলছিল হিন্দুত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে, তখন সেই বেদনাদায়ক মুহূর্তেও ভারতীয় সরকার প্রধান নরেন্দ্র মোদিকে আরব আমিরাতে নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে এওয়ার্ড প্রদান করা হয় এই যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন জায়েদের হাতেই। যেটা মুসলমানদেরকে প্রচণ্ডভাবে মর্মাহত করেছিল এবং দেশে দেশে এর প্রতিবাদ হয়েছিল। সুতরাং সেই ব্যক্তি বা সেই সরকার কর্তৃক এই ধরনের আচরণ করা তেমন একটা আশ্চর্যের ব্যাপার ছিল না। কিছুটা অনুমিতও ছিল বিষয়টা যে, ইসরাইল ও আরব আমিরাতের মধ্যে এমন কিছু হয়তো ঘটতে পারে। শেষ পর্যন্ত তা-ই প্রকাশ্যে এসে গেছে।

এই চুক্তি নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করেছেন, বিভিন্ন কথা বলেছেন। বিশ্বব্যাপী বহুলোক বহু কিছু বলেছেন। ইসরাইল-আমেরিকার বিশেষ বন্ধুরা এটাকে ‘ঐতিহাসিক’ও বলেছেন। কেউ কেউ ‘গেম চেঞ্জ’ও বলেছেন। আর অন্যদিকে বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ এটাকে ধোঁকা, প্রতারণা, ধাপ্পাবাজি- হরেক রকমের বিশেষণে আখ্যায়িত করেছেন। সেসব কথায় আমরা যেতে চাচ্ছি না।

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল-ঘেঁষা রাজনীতির কারণ ও প্রেক্ষাপট

আমরা শুধু আজকে এটা দেখতে চাচ্ছি যে, চুক্তির প্রেক্ষাপটগুলো কী? যেই ইসরাইল খুব স্পষ্টভাবেই দখলদার। এই অঞ্চলে তাদের বাড়ি নয়। তারা এখানে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। আরবদের ভূমি জোর করে দখল করেছে। দীর্ঘদিন থেকে ফিলিস্তিনিদের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের রাষ্ট্রের বিশাল অঞ্চল। আরবদের সাথে তারা বারবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল ছিন্ন। যদিও দুটি রাষ্ট্রের সাথে বিভিন্ন সময় যুদ্ধ করে করে তারা আমেরিকাকে সালিশ বানিয়ে মিসর এবং জর্দানের সাথে তাদের সম্পর্ক তৈরি করেছে। ঘোষিতভাবে সকলেই জানত যে, ইসরাইল তাদের দুশমন। কিন্তু কার্যকরভাবে এখন দেখা গেল যে, ইসরাইলের সাথে তারা প্রকাশ্যেই পরিপূর্ণ বন্ধুত্ব কায়েম করছে। যদিও আগে থেকেই (একটু আগেই আমরা বলেছি) জানা যাচ্ছিল যে, ইসরাইলের সাথে ভেতরে ভেতরে তাদের অনেকেরই সম্পর্ক এখন চলছে। কেন এমন হলো? কেন তারা এত ইসরাইল-ঘেঁষা হলো? কেন তাদের আগের অবস্থান থেকে তারা সরে যাচ্ছে? এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার মতো বিষয়। পাশাপাশি এ চুক্তিতে কার কতো লাভ? এটাও একটু বিশ্লেষণ করে দেখা যেতে পারে।

যদিও আরব রাষ্ট্রগুলো বিশেষত সেই অঞ্চলের বড় রাষ্ট্রটি খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং তখনকার ইসলামবিরোধী পরাশক্তিদের সাথে হাত মিলিয়ে ক্ষমতায় বসেছে এবং সে সূত্রেই শুরু থেকে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক আমেরিকা-বৃটেনের সাথে খুব গাঢ় ছিল। আমেরিকানদের আধিপত্য তাদের উপরে ছিল। তথাপি তাদের মধ্যে দ্বীন-ঈমানের বিষয়গুলো, ধর্মীয় মূল্যবোধগুলো তখনো একেবারে হারিয়ে যায়নি। কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের শিক্ষা-সভ্যতা-সংস্কৃতি হয়ে ওঠে পশ্চিমাদের মতো এবং তারা নিজেদের সবকিছুকে, নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে সেদিকে ঝুঁকে পড়ে। যার খেসারত স্বরূপ তাদের মধ্যে ভীতি প্রবেশ করে। মুমিন যখন তার শ্রেষ্ঠ সম্পদ হারিয়ে ফেলে, যখন দুর্বল হয়ে যায় তার ঈমানি শক্তি, তখন তার মধ্যে ভীতির সঞ্চার হওয়া খুবই স্বাভাবিক। আর সেই ভীতিকে কাজে লাগিয়ে এবং সেই ভীতির আরো কিছু নতুন উপকরণ সৃষ্টি করে পরাশক্তিগুলো বিশেষত আমেরিকা আরব-ভূখণ্ডে নিজেদের জায়গা করে নেয়।

বিগত শতাব্দির শেষের দিকে ইরাকের বামপন্থী প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন কর্তৃক নাটকীয়ভাবে কুয়েত দখল করা, এরপর সেখান থেকে উৎখাত হওয়া এবং এই সুযোগে আমেরিকানদের মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সামরিক ঘাঁটি বানানো- একথাগুলো হয়ত অনেকের মনে আছে। সাদ্দামের পতনের পর নতুন জুজু তৈরি হয় ইরানভীতি। একদিক থেকে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন পরাশক্তির সাথে ইরানের সম্পর্ক। আমেরিকার বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান মধ্যপ্রাচ্যে তার আধিপত্য বাড়িয়ে যেতে পারছে।  অন্যদিক থেকে ইরানের সেই জুজুর ভয় দেখিয়ে আরব রাষ্ট্রগুলোতে আমেরিকা তাদের অস্ত্র বিক্রি করছে। তাদের ঘাঁটি ওখানে রাখার জন্য তারা বাধ্য হচ্ছে এবং বাধ্য করছে। আর তারই ধারাবাহিকতায় এখন তাদের চিরশত্রু ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক করতে তারা অনেকেই অগ্রসর হচ্ছে।

পরবর্তী কথায় যাওয়ার আগে একটি বিষয় সামনে আসা দরকার। তা হলো, মধ্যপ্রাচ্যের এ শিয়া রাষ্ট্রটির আচরণ এবং তাদের সাথে বিশ্বের অন্য শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্ক বরাবরই রহস্যজনক। সবকিছু দেখে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এগুলো অনেকটা কৃত্রিম। তলেতলে আমেরিকা এবং ইসরাইল ইরানের সাথেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। কারণ, তাদের তো মধ্যপ্রাচ্যে এমন একটি শক্তির প্রয়োজন, যে কিনা ঐ অঞ্চলের তেলসমৃদ্ধ ধনী রাষ্ট্রগুলোর জন্য দৃশ্যত ভীতির কারণ হতে থাকবে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তিগুলো বন্ধু সেজে মধ্যপ্রাচ্যে শেকড় গেড়ে বসেছে। আর যুদ্ধাস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।

বিষয়গুলো রাতারাতি ঘটেনি। একদিনে ঘটেনি। আমরা দেখতে পেয়েছি যে, যদিও আমেরিকাসহ অন্যান্য পরাশক্তি ও অমুসলিমদের সাথে অনেকদিন থেকে এ দেশগুলোর সখ্যতা ছিল, তারপরও তারা একইসাথেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইসলামী শক্তিগুলো- যারা ইসলামি নেযাম নিয়ে কাজ করেছে, এটা নিয়ে প্রচেষ্টা চালিয়েছে অথবা বিভিন্ন দেশে আন্দোলন বা বিপ্লবের মাধ্যমে ইসলাম কায়েমের চেষ্টা করেছে, তাদেরকে তারা সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়েছে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর থেকে দৃশ্যপট একেবারে পাল্টে গেছে। যাদেরকে তারা বিভিন্ন দেশে সমর্থন দিয়েছে, ঠিক তাদেরকেই তারা এখন সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিচ্ছে এবং তাদের দেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের মূলোৎপাটন করছে।

এই আরব আমিরাতের কথাই ধরা যাক। মিসরের ইতিহাসের সর্বপ্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য কে কী ভূমিকা রেখেছিল? ঐ অঞ্চলে প্রসিদ্ধ আছে এবং ব্যাপকভাবে একথা অনেকটা জানা যে, মুরসিকে উৎখাতের জন্য গ্রাউন্ড তৈরি করতে তখন প্লেন ভরে ভরে দেরহাম (আমিরাতের মুদ্রার নাম) গিয়েছিল কায়রোতে। সেখানে সভা-সম্মেলন ও অস্থিরতা তৈরি করে, কৃত্রিম আন্দোলন সৃষ্টি করে তাদের এখনকার বন্ধু সিসির ক্ষমতায় আসার রাস্তা যারা তৈরি করেছে, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল এই আরব আমিরাত।

তো এটা তাদের এখনকার ভূমিকা। অথচ আগে তারা ইখওয়ান ও হামাসসহ অন্য আরো বহু আরব সংগঠনকে এবং অনারব আরো বহু ইসলামি দল-সংস্থাকেও বিভিন্নভাবে সাহায্য, সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়ে এসেছিল। কিন্তু এখন তাদের সাথে এদের সম্পর্ক দমন-পীড়ন ও তাদেরকে শেষ করে দেওয়ার।

আমরা দেখছি যে, নতুন করে এখন তাদের আরেকটা ভীতি তৈরি হয়েছে। সেই ভীতি হলো, না জানি আবার আরব রাষ্ট্রগুলোতে খেলাফত ফিরে আসে। যদিও কাছাকাছি সময়ে খেলাফত ফিরে আসার আলামত দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু তারা এ বিষয়টা নিয়ে ভয় পাচ্ছে। ওদিকে তুরস্ক থেকে এরদোগান সাহেব মাঝে মাঝে গরম কথা বলেন। তিনি আবার ভিন্ন ব্লক তৈরি করতে চাচ্ছেন মুসলিম দেশগুলোর। আওয়াজ তুলছেন। ইসলাম নিয়ে কথা বলছেন। ফলে আরব রাজা-বাদশাহদের মধ্যে ভয় তৈরি হয়েছে, না জানি আবার ওসমানি খেলাফতের মতো কিছু তাদের উপর চলে আসে। এজন্যই কিছুদিন আগে লিবিয়া নিয়ে এরদোগানের কথা বলাতে সংযুক্ত আরব আমিরাত তাকে হুমকিও দিয়েছে যে, তুরস্ক যেন আরবদেরকে নিয়ে মাথা না ঘামায়। পুরান কথা যেন ভুলে যায়। ওগুলো (খেলাফতের যুগ) অতীত হয়ে গেছে। অর্থাৎ কোনো খেলাফত নয়। আবার কোনো ইসলামী তরিকায় ফেরত যাওয়া নয়। বরং তার থেকে ইসরাইল এবং আমেরিকাই বেশি প্রিয়। এসমস্ত ভীতি-চিন্তাই হয়ত তাদেরকে দিশেহারা করে তুলছে।

তাদের সেই পুরান পরাজয়ের কথা এবং পুরো আরব এলাকা ‍মুসলিম খেলাফতের তত্ত্বাবধানে চলে আসার কথা, শতশত বছর পর্যন্ত সেই খেলাফতের তত্ত্বাবধানে থাকার কথা হয়তো তাদের মনে পড়ে গেছে। সেই ভীতিও তাদের মধ্যে সঞ্চার হয়েছে। তারা মনে করেছে, যদি খেলাফত হয়েই যায় কখনো, সে খেলাফতের তত্ত্বাবধানে কেন তারা যাবে? এরচে ভালো তো ইসরাইল-আমেরিকাই। তবুও তাদের রাজত্ব টিকে থাকুক। এই হচ্ছে তাদের চিন্তা। এই চিন্তা থেকেই হয়তো তারা এই চুক্তিতে গিয়েছে। তারা জানতো যে, এটা অ-জনপ্রিয় চুক্তি। তাদের জনগণের একটা বিশাল অংশ এটাকে পছন্দ করবে না। তারপরও তারা এ চুক্তিতে গিয়েছে। এ চু্ক্তিতে যাওয়ার পিছনের কারণগুলো সম্ভবত এরকমই।

আমিরাত-ইসরাইল চুক্তি: কার কত লাভ হলো?

এখন আমরা আসি যে, এ চুক্তিতে লাভ কার কত হলো? আমরা যদি প্রথমে খুঁজি আমেরিকার লাভ, তো এক্ষেত্রে আমেরিকার লাভ খুব স্পষ্ট। সেটা হলো, মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ‘স্বার্থ-রক্ষাকারী বন্ধু’ হলো ইসরাইল। সেই ইসরাইলের জন্য তারা রাস্তা খুব পরিষ্কার করল। দখলদার ও অবৈধ এ রাষ্ট্রটির শক্তি-সামর্থ ও বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্র থেকে স্বীকৃতি কোনো কিছুরই তো কমতি নেই। কিন্তু দুটি ছাড়া সকল আরব রাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ-পাকিস্তানসহ প্রায় সকল মুসলিম রাষ্ট্র কর্তৃক তাদেরকে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং দখলদার ও নির্যাতনকারী হিসাবে চিহ্নিতকরণ অব্যাহত থাকায় নৈতিকভাবে তারা বরাবরই দুর্বল ছিল। এখন সে জায়গায়ও তারা ভাঙন তৈরি করে দিল। এর ফলে ইসরাইলকে নিয়ে আমেরিকা অস্ত্রের ব্যবসাসহ অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য সেখানে জমজমাট করতে পারবে এবং এ অঞ্চলের ধনী রাষ্ট্রগুলো থেকে তারা বিলিয়ন বিলিয়ন পেট্রো-ডলার উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।

আর অনেকেই ভাবছেন, এখানে হয়ত নগদ একটা লাভের কথা ডোনাল্ড ট্রাম্প চিন্তা করেছেন। সেটা হলো, আমেরিকার সামনের নির্বাচন খুবই কাছে। সে নির্বাচনে উতরে যাওয়া। কোভিড-১৯ এর কারণে আমেরিকাতে বেহাল অবস্থা চলছে। এখনো হাজার হাজার লোক মারা যাচ্ছে। দেড় লাখের বেশি ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে। ফলে অনেকে ভাবছেন, সেইসব কারণে আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই সামনের নির্বাচনে জেতা কঠিন হয়ে পড়েছে তার জন্য। সেখানে যদি এই বিষয়টাকে সামনে নিয়ে আসা যায় এবং ইসরাইলের সাথে আরব আমিরাতের সম্পর্ক করিয়ে দিয়ে নিজ দেশের জনগণের কাছে এটা প্রচার করে নির্বাচনে জেতার একটা রাস্তা হয়ত তৈরি হবে ট্রাম্পের জন্য। এমনটাই অনেকে মনে করেন। একথা মনে করার স্পষ্ট কারণও আছে। চুক্তি হয়েছে দু’দেশের মধ্যে। কিন্তু তার প্রচার করেছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিজে। তো এগুলো হচ্ছে বিশেষ কিছু লক্ষ্যণীয় বিষয়।

আমেরিকার লাভ তো খুব স্পষ্ট। আর ইসরাইলের লাভ কী? সেটাও খুবই পরিষ্কার। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এটাকে ‘ঐতিহাসিক চুক্তি’ বলে টুইট করেছেন তৎক্ষণাত। ইসরাইল যাদের জমি দখল করেছে, স্পষ্টতই সে আরবরা তাদের প্রধান শত্রু হওয়ার কথা। তাদেরকে তারা বন্ধু বানাতে পেরেছে এবং আরবদের মধ্যে ভাঙন তৈরি করে দিতে পেরেছে এই চুক্তির মাধ্যমে। ফলে ইসরাইলের লাভ তো খুব স্পষ্ট। ফিলিস্তিনিদের একঘরে করে ফেলতে পেরেছে। তাদের আধিপত্য আরো দ্রুত বিস্তার হবে এই এলাকায়। অস্ত্র ব্যবসা, প্রযুক্তি ব্যবসা, অন্যান্য ব্যবসা জমজমাট করতে পারবে। সকল বাধাই তাদের অনেকটা দূর হয়ে গেল এই চুক্তি দ্বারা। অনেকদিনের গোপন গোপন বিষয় প্রকাশ্যে এসে যাওয়াতে অনেক কিছুই তারা এখন প্রকাশ্যে করতে পেরেছে। ইতিমধ্যেই ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান আরব আমিরাত সফরও করে গেছে। অনেকে বলছেন, গোপনে গোপনে নেতানিয়াহুও নাকি আরব আমিরাত সফর করে গেছেন। তো ইসরাঈলিদের তো আনন্দ-খুশির শেষ নেই এর দ্বারা। তাদের লাভ খুব স্পষ্ট।

এই চুক্তিতে ক্ষতি কী হলো? প্রথম ক্ষতি তো খুবই স্পষ্ট যে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্ন অনেকটা ধুলোয় মিশে যাচ্ছে। কারণ, ফিলিস্তিনের প্রতি আরবদের যে একটা অন্তত নামেমাত্র হলেও তো সহানুভূতি ছিল। ইসরাইলরা দখলদার হিসেবে পরিচিত ছিল। নৈতিক শক্তি তাদের দুর্বল ছিল। সেটাতে একেবারে স্পষ্টতই ভাঙ্গন ধরল। চিড় ধরল। এজন্যই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট এবং আরব আমিরাত থেকে তাদের দূতকেও তারা দেশে চলে যেতে বলেছে। অনেকেই মনে করছেন, এই চুক্তি শুধু আরব আমিরাত পর্যন্তই থেমে যাবে না। হয়ত তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে আরবের অন্য রাষ্ট্রগুলোও। ট্রাম্প জামাতা কুশনার যে এই চুক্তির মিশনে ছিলেন, যিনি ট্রাম্পের উপদেষ্টাও বটে- তিনি তো স্পষ্টই বলে দিয়েছেন, কয়েকদিনের মধ্যেই হয়তো দেখা যাবে, আরেকটি আরব দেশ একই পথে হাঁটছে। অনেকে মনে করছেন সেটি হয়ত বাহরাইন। এবং বাহরাইনের সাথে ওমানও এপথে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আর ঐ অঞ্চলের প্রভাবশালী রাষ্ট্রটি যে তলেতলে এসবে নাটের গুরুর ভূমিকা পালন করছেন সেকথাও অনেকে বলছেন। দেখাও তো গেছে, যখন গত বছর ট্রাম্প ‘শতাব্দি-চুক্তি’ নামে তথাকথিত ইসরাইল-আরব শান্তির ফর্মূলা পেশ করেছেন। সেটা মানতে প্রভাবশালী বড় রাষ্ট্রটির যুবরাজ চাপ দিয়েছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে। না মানলে বরং বকবক বন্ধ করতে বলেছেন। সেগুলো নিয়ে আরব দেশগুলোতেও এবং ঐদেশেই জনগণের মধ্যে চাপা উত্তেজনাও তৈরি হয়েছিল। পরবর্তীতে ফিলিস্তিনিদের জন্য কিছু ত্রাণ টাকা-পয়সা পাঠিয়ে সেগুলোকে প্রশমিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এজন্য আলোচিত চুক্তির কারণে ফিলিস্তিনিদের শক্তি যে আরো দুর্বল হয়ে গেল, এটা তো খুবই স্পষ্ট। আর সবচে বড় কথা হলো, দখলদাররা যাদের এলাকা দখল করেছে, এখন তাদের থেকেই স্বীকৃতি পেয়ে যাচ্ছে। তো ক্ষতির পরিসংখ্যান বা ফিরিস্তি যদি টানা হয় সেটা অনেক লম্বাই হবে।

দ্বীন এবং ঈমানই হলো আসল সম্পদ; ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ টেকে না

সেই যাই হোক, কী প্রমাণিত হলো? এই যে এখন আবার আরব-ইসরাইল সম্পর্ক হচ্ছে, আরবদের মধ্যে ভাঙন তৈরি হচ্ছে। আগেও হয়েছিল। আরবরা দ্বিধাবিভক্ত। সেখানে বামপন্থী, ডানপন্থী, রাজতন্ত্র, সেখানে কেউ কারো এলাকা দখল করছে। আবার অন্যদেরকে এনে এদেরকে প্রতিহত করা হচ্ছে। সেই গত শতাব্দির শেষের দিকের সাদ্দাম যুগ, কুয়েতের ঘটনা অন্যান্য বিষয়- এগুলো কী প্রমাণ করে? খুব স্পষ্টত যে জিনিসটি পরিষ্কার প্রমাণিত হচ্ছে তা হলো, ভাষাভিত্তিক জাতিয়তাবাদ টেকে না।

আরবলীগ, আরব-জাতীয়তাবাদ কত কী শোনা গেল! কত মিটিং ও সিদ্ধান্ত দেখা হলো! কিন্তু কী হলো? সেই জাতীয়তাবাদ কোথায় গেল? আরবরা তো একে অন্যকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। যে যার মতো করে চিন্তা করছে। জাতীয়তাবাদ ভাষাভিত্তিক ছিল। কিন্তু দেখা গেল, প্রভাবশালী আরব রাষ্ট্র কয়েকটা মিলে তাদের আরেক রাষ্ট্র কাতারকে টুটি চেপে ধরল। তাদের বিরুদ্ধে অবরোধ তৈরি করল। এর আগে এক আরব রাষ্ট্র আরেক আরব রাষ্ট্র দখল করল। সেই দখলমুক্ত করার জন্য আবার বাহিরের লোকদেরকে ডেকে আনা হলো। তো এই হচ্ছে ভাষাভিত্তিক জাতিয়তাবাদ। আরবরা ইসলামকে ছেড়ে দিয়ে ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনকে সামনে না রেখে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ তৈরি করেছে। সেটা কিন্তু টিকেনি। ধুলোয় মিশে গেল। ফলে ইসলামের শিক্ষাই সামনে আসল যে, ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ের ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদ টিকবে না।

এই দ্বীন-ঈমান থেকে যত দূরে সরে যাবে, যত নিজেদের তাহযীব-তামাদ্দুন হারাবে, অন্যদেরটা ধরবে, তত বেশি ভয়-ভীতি ভেতরে ঢুকবে। আরবরা তাদের দেশে আল্লাহর দেওয়া মহাসম্পদ তেল-সমৃদ্ধ হয়েও সারাজীবন ভীতিতেই কাটাচ্ছে। কখনো তাদের ঘরের ভীতি। একবার সাদ্দামের ভয়, একবার ইরানের ভয়, কখনো আবার তুরস্কের ভয়। আবার তাদের নিজেদের দেশের লোকদের ভয়। ইসলামপ্রিয়দের ভয়। এত ভয় এত ভীতি! তাদের রাজা-বাদশাহ ও ক্ষমতাবানদের এত ভীতি! এই ভীতিই তাদের শত্রু। তাদের এলাকার দখলদার। আল্লাহ কর্তৃক ঘোষিত ‘মাগদূব আলাইহিম’দের সাথে তাদের বন্ধুত্ব- ‘তথাকথিত বন্ধুত্ব’; খুব স্পষ্ট যে, এটা আসলে বন্ধুত্ব নয়। এটা হলো হার মেনে নেওয়া। নতজানু হওয়া। যদিও বলা হচ্ছে বন্ধুত্ব। কিন্তু এটা হয়ে যাচ্ছে অলিখিত প্রভুত্ব বনাম দাসত্ব। সেটা তারা বানিয়েছে।

এটার মূল কারণ হলো আসলে এই ভীতি তাদের ভেতর তৈরি হয়েছে। যদি ঈমানদার তার ঈমানকে মূল সম্পদ না বানায় তাহলে তার মধ্যে ভীতি কাজ করে। তার মধ্যে রুউব ঢুকে যায়। হাদীস-কুরআন পড়লে এরকম কথা পাওয়া যায় যে, অন্তরে রুউব আসবে। ভীতি সঞ্চার হবে। শত্রুদের রুউব। ভয় অন্তরে ঢুকবে। তো সে ঢোকাই কাজ করেছে আরব রাষ্ট্রগুলোকে এই ইসারাইলের দিকে আকৃষ্ট হতে। তারা ভাবছে যে, ইসরাইল এই এলাকার শক্তিশালী রাষ্ট্র হয়ে উঠছে। তাদের সাথে হাত মেলালে তারা তাদের শত্রুদের থেকে রক্ষা পাবে। তাদের পারিবারিক রাজত্ব টিকে থাকবে। কিন্তু যার সাথে বন্ধুত্ব করছে সে তাদেরকে রক্ষা করবে কিনা সেটাই তো বুঝার বিষয়।

শেষরক্ষা কি হবে?

না, হবে না। কারণ, কোনো জাতিই এভাবে পরনির্ভরশীল হয়ে নিজেদের শেষরক্ষা করতে পারেনি। ইউএই বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের আলোচিত চুক্তিটির দিকে আমরা একটু খেয়াল করি। এই চুক্তি করে তারা খুব বাহাদুরি দেখালো। একদিক থেকে ট্রাম্প সাহেব বললেন। আরেক দিক থেকে ইউএই-এর যুবরাজ যিনি আরব আমিরাতের পক্ষে চুক্তি করেছেন। তারা বললেন যে, এর দ্বারা ফিলিস্তিনিরা লাভবান হবে। কারণ, ইসরাইল পশ্চিম তীরে পূর্ব জেরুজালেমে তাদের ইয়াহুদি বসতি স্থাপন করা বন্ধ করবে। তাদের এ প্রকল্প বাতিল করবে। তারা আর অগ্রসর হবে না।

বাস্তবে কী হলো, এদিকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যদিও ঐতিহাসিক বললেন চুক্তিটাকে; কিন্তু তিনি বললেন যে, না, আমাদের বসতি স্থাপনের বিষয়টা ওটা আমরা বাতিল করিনি। ওটাকে আমরা স্থগিত করেছি। মুলতবি করেছি। অর্থাৎ যেকোনো সময় আবার হয়তো বসতি স্থাপন শুরু হয়ে যাবে। তো এই চুক্তিকারীদের জন্য তো এটা স্পষ্ট চপেটাঘাত। এবং তখন কী দাঁড়াবে এই চুক্তি নিয়ে। তারা কোথায় মুখ দেখাবে? অবশ্য তারা মুখ দেখাবার অতো চিন্তা করে বলে মনে হয় না।

নতুন করে যে খবর আসলো, তাতে দেখা গেল, ইসরাইলিরা বাধা দিচ্ছে আমেরিকাকে আরব আমিরাতের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করতে। বাধা তো তারা আগেও দিয়েছিল। কিন্তু এখন তো তারা বাধা দেওয়ার কথা না। কারণ তাদের তো ‘বন্ধু রাষ্ট্র’ হয়ে গেছে আরব আমিরাত। অথচ তারা হুঁশিয়ার করে দিচ্ছে আমেরিকাকে যেন শক্তিশালি অস্ত্র আমিরাতকে বিক্রি করা না হয়। তো এবার আমিরাত কী বুঝল এর দ্বারা? বন্ধুত্ব মানা হলো, নাকি সেই পুরনো শত্রুতা ও সন্দেহ থেকে গেল?

এভাবেই হয়ত নতজানু আরবরা একে একে ইসরাইলকে স্বীকার করে নেবে। আর ইসরাইল তাদের আধিপত্য সে অঞ্চলজুড়ে কায়েম করবে। আল্লাহ না করুন, ধীরে ধীরে তখন আরবদের আরো কী দশা হবে। আরো কত এলাকা দখল হয়ে তাদের মধ্যে যাবে। সেটার জন্যই হয়ত খুশিতে অপেক্ষা করছে ইসরাইল, আমেরিকা এবং বিশ্বের তাবৎ মুসলিমবিদ্বেষী শক্তিগুলো।

আরেকটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, এধরনের অনৈতিক চুক্তির ফলে যে ঐসব শক্তির আরো দ্রুত উত্থান ও প্রসার হবে যাদেরকে তারা চরমপন্থী বা জঙ্গি আখ্যা দিয়ে থাকে। নওজওয়ান মুসলিমরা তাদের সরকারগুলোকে এভাবে মুসলিম বিদ্বেষীদের দিকে ঝুঁকে পড়তে দেখে হতাশাগ্রস্ত হয়ে অনেকেই নেমে পড়বে স্বতন্ত্র গোপন মিশনে। এছাড়া এক সময় দ্বীনদার গণমানুষের জাগরণও হয়ে উঠতে পারে এসব রাজা-বাদশাহদের পতনের কারণ। যেমনটি দেখা গিয়েছিল কয়েক বছর আগে আরব বসন্তের সময়। আর মুসলমান হিসেবে আমাদের বিশ্বাস-আমাদের ঈমান, কোনো না কোনোভাবে অন্ধকার কাটবে ইনশাআল্লাহ। বাতিল শক্তিগুলো, অমুসলিম কুফুরি শক্তিগুলো এবং তাদের দোসরদের পতন অবশ্যম্ভাবী হবে। আল্লাহর দ্বীন আবার পুনরায় কায়েম হবে ইনশাআল্লাহ। إن الباطل كان زهوقا

মুমিন হিসেবে এই বিশ্বাস আমাদের আছে। অতো ঘাবড়ে যাবার কারণ নেই। দীর্ঘদিন থেকেই শোনা যাচ্ছিল যে, ভেতরে ভেতরে তাদের মিতালি চলছে। সেই মিতালিরই হঠাৎ বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে দিয়েছে ইউএই। অন্যরাও যদি এরকম প্রকাশ করে তবে মুসলমানদের তাতে হতাশাগ্রস্ত হওয়ার দরকার নেই। মুসলমানদের দ্বীন ও ঈমানের উপর মজবুত থাকা হলো জরুরি। নিজেদের, নিজেদের সন্তানাদির, আশপাশের প্রতিবেশির তাহযীব-তামাদ্দুন ঠিক রাখার দিকে মনোযোগ দেওয়া আবশ্যক।

ولا تهنوا ولا تحزنوا وأنتم الأعلون إن كنتم مؤمنين.

‘আর তোমরা ভীত হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না। তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি প্রকৃত মুমিন হও।’ -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৩৯

 

 

পূর্ববর্তি সংবাদআদালত অবমাননা: ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পেলেন আইনজীবী
পরবর্তি সংবাদকরোনায় মারা গেলেন সিনিয়র সাংবাদিক আবদুস শহিদ