কোরআনকে গভীরভাবে আঁকড়ে ধরাই হচ্ছে এখন সময়ের দাবি

মাওলানা শাহাদাত সাকিব ।।

কোরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত ঐশী বাণি। জীবনপথের নির্দেশিকা। মুসলমানদের শাশ্বত জীবনবিধান। এ গ্রন্থ আলোর পথ দেখায়। জীবনকে সত্যের পথে পরিচালিত করে। এ গ্রন্থে যা কিছু রয়েছে, সব সত্য, অমোঘ। তাতে কণামাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। কোনো বিকৃতি একে স্পর্শ করতে পারে না। স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই এর হেফাযতের দায়িত্ব নিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে- إنا نحن نزلنا الذكر وإنا له لحافظون

নিশ্চয়ই আমি এ উপদেশ (কুরআন) নাযিল করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষণকারী। (১৫/৯)

সম্প্রতি সুইডেনে কোরআন অবমাননার বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে। নিঃসন্দেহে এটা যেকোনো মুসলিম হৃদয়কে পীড়া দেবে। অন্তর থেকে রক্ত ঝরাবে। এটাই ঈমানের দাবি। এটুকু না হলে নিজেকে মুসলিম পরিচয় দেওয়া মানায় না।

কোরআনের প্রতি বিদ্বেষের এ কোনো নতুন ঘটনা নয়। যুগ যুগ ধরে একদল বিকৃত মনের মানুষ এ কাজ করেছে। কারণ, তারা ভালোভাবেই জানে, কোরআনই হচ্ছে সেই মহাগ্রন্থ, যা আঁকড়ে ধরলে মুসলমানরা পৌঁছে যাবে নেতৃত্বের আসনে। সমাসীন হবে পৃথিবী পরিচালনার মঞ্চে।

ফ্রান্সের এক বিচারক আলজেরিয়া অঞ্চলে তাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে বলেছিল, ‘মুসলমানদের অস্তিত্ব থেকে আমাদের কোরআনকে মুছে দিতে হবে। তাদের মুখ থেকে আরবি ভাষা কেড়ে নিতে হবে। তবেই আমরা তাদের উপর চূড়ান্ত জয়লাভ করতে পারব।’

বিশিষ্ট খ্রিস্টান পাদ্রী উইলিয়াম জি ফোর্ড বলেছেন, ‘যখন আরব অঞ্চল থেকে কোরআন ও মক্কা নগরীর বিলুপ্তি ঘটবে তখন আমরা দেখতে পাব, আরবরা ধীরে ধীরে মুহাম্মাদ ও তার গ্রন্থ থেকে দূরে সরে পাশ্চাত্য সভ্যতার পথে হাঁটতে শুরু করেছে।’

শুরু থেকে এটাই হচ্ছে পশ্চিমাদের ইচ্ছা। কুরআন থেকে দূরে সরে পাশ্চাত্য স্রোতে মুসলমানরা ভেসে যাক- এই তাদের স্বপ্ন। এজন্যই তাদের এত ষড়যন্ত্র, এত নীলনকশা, আর এত বিষোদগার। তবে এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় কোরআনকে আরো শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার বিকল্প নেই আমাদের। কোরআনকে জড়িয়ে নিতে হবে বুকের সাথে। কোরআনকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসতে হবে। কুরআনকে আপন করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা কয়েকটি কাজ করতে পারি।

এক. নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করা। কোরআনকে ভালোবাসার কথা মুখে মুখে বললেও তা কর্মে বাস্তবায়ন করে না অনেকেই। কোরআনকে ভালোবাসার সর্বনিম্ন দাবি হলো, নিয়মিত বিশুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করা।

দুই. কোরআনের বিধান জীবনে বাস্তবায়ন করা। কুরআন হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া বান্দার জীবন বিধান। জীবনের সকল অঙ্গনে দিক-নির্দেশনা দিতে কোরআন নাযিল হয়েছে। জীবনে কোরআনের বিধান বাস্তবায়ন করা কুরআন অবতরণের অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই কোরআনের আইন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কোরআনের ভালোবাসার দাবি বড়ই দুর্বল দাবি।

তিন. সবার মাঝে কোরআনের শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা করা। কোরআন সবার জন্য। তাই ছোট, বড়, যুবক, বৃদ্ধ, নারী, পুরুষ- সকলকে কোরআন শিখতে হবে। কোরআনের অর্থ ও মর্ম বুঝতে হবে। হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। কোরআনের শিক্ষার গভীরে পৌঁছার চেষ্টা করতে হবে। সবাই কিভাবে কোরআন শিখতে পারে সেই চেষ্টা করার দায়িত্ব আমাদের সবার।

সুইডেনের ঘটনা নিঃসন্দেহে আমাদের হৃদয় থেকে রক্ত ঝরিয়েছে। এর প্রতিবাদে যা কিছু করা দরকার তা করতে হবে আমাদের। কিন্তু সেই সাথে এই করণীয় কাজগুলো আমরা যেন ভুলে না যাই। কোরআন থেকে দূরে সরে শুধু কোরআন অবমাননার প্রতিবাদ করা যথেষ্ট নয়। তা কাঙ্খিত সুফলও বয়ে আনবে না আমাদের জন্য। তাই পবিত্র কোরআনকে আরো গভীরভাবে আঁকড়ে ধরাই হচ্ছে এখন সময়ের দাবি।

পূর্ববর্তি সংবাদসুপ্রিম কোর্টের নতুন দুই বিচারপতির শপথগ্রহণ
পরবর্তি সংবাদলাদাখের ১ হাজার বর্গ কিলোমিটার এখন চীনের দখলে