মহামারীর কারণে তীব্র কবরস্থান সংকটে দিল্লী

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: ১৯৩০ সালে দিল্লির বাসিন্দাদের একটি নতুন হাসপাতালের প্রয়োজন ছিল। বিগত দশকের তুলনায় শহরটির জনসংখ্যা ৩০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে সংগ্রাম করছিল সিভিল হাসপাতালটি। বছরের মাঝামাঝি সময়ে শহরটির কর্মকর্তারা সিভিল হাসপাতালকে রাজধানীর জন্য মর্যাদাহানিকর হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। এরপর ভারত সরকার দিল্লি গেট ও কারাগারের মধ্যবর্তী পুরনো শহরের ঠিক দক্ষিণে নতুন জেনারেল হাসপাতাল তৈরির জন্য তহবিল অনুমোদন দেয়।

কর্মচারীরা নতুন হাসপাতালের ভিত্তি তৈরির সময় লক্ষ করলেন সেখানে একাধিক কবর ও পাথরের কাঠামো। এর পরই ছড়িয়ে পড়ল হাসপাতালের নির্মাণকারীরা মুসলিম কবরস্থানের শান্তি নষ্ট করছে। পাশাপাশি আরো ছড়িয়ে পড়ে, মৃতদেহগুলো তুলে পোড়ানোর প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে। এরপর মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন নিকটবর্তী জামা মসজিদ ও নির্মাণ সাইটে বিশাল জনসভা করে এবং এতে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্রিটিশ কর্মকর্তারা প্রায় এক দশক ধরে সেখানে কবরস্থান থাকার বৈধতা নিয়ে লড়াই করেছিলেন। ঘটনাটি তদন্ত করা প্রথম কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তিনি যখন নির্মাণকাজটি পরিদর্শন করেছেন এবং ভেঙে ফেলা উপকরণগুলো মূল্যায়ন করেছেন তখন এটা কোন ধরনের স্থাপনা ছিল তা বলা অসম্ভব ছিল। পরে তিনি বলেছিলেন, স্থাপনাটি কে বা কখন ভেঙেছে তা বলার উপায় নেই। নির্মাণ সাইটে মুসলিম কবরগুলোর উপস্থিতির ঔপনিবেশিক প্রশাসকরা আপাতবিস্মিত হলেও বেশির ভাগ প্রমাণ ব্রিটিশ রেকর্ড থেকেই এসেছিল। সরকারের নিজস্ব তদন্তে আশপাশের কবরস্থান চিহ্নিত করে ১৮৮০ সালে স্কেচ প্রকাশ হয়েছিল।

ভারতজুড়ে ঔপনিবেশিক শাসনবিরোধী প্রতিবাদ জোরালো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিল্লিতে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা স্থানীয় বাসিন্দা ও সম্প্রদায়ের নেতাদের মুখোমুখি হতে নারাজ ছিলেন। একজন প্রশাসক উত্তেজিত হয়ে যুক্তি দিয়েছিলেন, ‘দিল্লির লোকেরা যদি একমাত্র এ জায়গায় হাসপাতাল না চায় তবে তাদের কথা মেনে নেয়া উচিত এবং দিল্লির বাইরে হাসপাতালটি নির্মাণ করা উচিত।’ ঔপনিবেশিক ভারতের নতুন রাজধানী শহর হিসেবে ব্রিটিশদের এ ধরনের জমি ঘাটতির দাবি অযৌক্তিক ছিল। এ বিরোধের ফলে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা প্রকল্পটি সংশোধন করে কবরস্থান, মসজিদ ও নতুন হাসপাতালের স্থান সামঞ্জস্য করেন। শেষ পর্যন্ত দিল্লির মুসলিম নেতাদের দৃঢ় পদক্ষেপের ফলে নতুন সরকারি হাসপাতালটি (বর্তমানে লোক নায়েক জন প্রকাশ হাসপাতাল) কবরস্থানের সঙ্গে জায়গা ভাগাভাগি করতে বাধ্য হয়।

এখন এ মেগা শহরটি বর্তমান ও ভবিষ্যতের মৃতদের জন্য অত্যন্ত সংকীর্ণ হয়ে উঠেছে। ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, দিল্লির ৩০ শতাংশের বেশি মুসলিম কবর দখলের শিকার হয়েছে। অন্য কথায় ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক এমনকি সরকারি সংস্থাগুলো পর্যন্ত কবরস্থানের জায়গা দাবি করছে।

কভিড-১৯ মহামারী এ সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে করোনাভাইরাসে ভারতের মোট মৃত্যুর ৬ শতাংশই ঘটেছে দিল্লিতে। যদিও শহরটির জনসংখ্যা পুরো ভারতের ১ দশমিক ৫ শতাংশেরও কম। তার পরও সরকারিভাবে প্রাণহানির সংখ্যা কম গণনার অভিযোগ দিল্লি তথা ভারতকে জর্জরিত করেছে। বিশেষত হাসপাতালে উপচে পড়া ভিড়, কবরস্থানে মৃতদের সারি ও শ্মশানের সংকটগুলো দেখে এ অভিযোগগুলো জোরালো হয়েছে।

স্ক্রলডটইন

পূর্ববর্তি সংবাদআজারবাইজান চাইলে সমাঝোতা হতে পারে: আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তি সংবাদকরোনায় মানুষের আয় কমেছে ২০ শতাংশ: বিবিএসের জরিপ