ইসলাম টাইমস ডেস্ক: ঢাকার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েক হাজার বস্তির অবস্থা জাগতিক দিক থেকে যেমন পিছিয়ে তেমনি ধর্মীয় দিক থেকেও পিছিয়ে। গ্রাম থেকে শহরের বস্তিতে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোর জাগতিক প্রয়োজন পূরণের টোপ দিয়ে তাদের মাঝে বিভিন্ন ধর্ম প্রচার করা হচ্ছে। ঢাকার যাত্রাবাড়ির ধলপুর ও আশপাশের বিভিন্ন বস্তিঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
ধলপুর সিটিপল্লীর বস্তি পাড়া যেমন পোড়া বস্তি, কলা পট্টি, মধ্য এলাকা,নবুর বস্তি,আয়নালের বস্তি,সিটি গল্লি,ছিয়ানব্বই ঘর, ছত্তিসগড়, আদর্শ এলাকা কয়েকদিন ধরে ঘুরেছেন তরুণ আলেম মাওলানা আরমান। মাওলানা আরমান জানান, ধলপুর সিটিপল্লীতে (বস্তি এলাকা) ও এনজিওদের শখানেক স্কুল আছে। স্কুলে মুসলিম বাচ্চাদের পড়ানো হয় খ্রিস্টানদের বাইবেল।
এক বাচ্চাকে জিজ্ঞাসা করলাম, সে আল্লাহর নাম, নবীর নাম তো বলতে পারেনি। কিন্তু যীশুর ইংরেজি কঠিন নাম জেসাস ক্রাইস্ট খুব সুন্দর ভাবেই বলল- বলেন আরমান।
বস্তিগুলোর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এবং লোকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই পুরো বস্তি এলাকা জুড়ে এনজিওদের স্কুল আছে প্রায় ২০০। ছোট ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন নাম দিয়ে খুলেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে রয়েছে ব্রাক, আশা, ফুলতড়ি, ইউসেফ, তেলগু, ইত্যাদি। স্কুলগুলোতে মুসলিম বাচ্চাদের কিতাবুল মুকাদ্দাস পড়ানো হয়। বাইবেলকে বাংলা করে খ্রিস্টানরা নাম দিয়েছে কিতাবুল মুকাদ্দাস। সেটা সেখানে শিক্ষা দেয়া হয়। দীক্ষা দেয়া হয় কিভাবে যীশুর নিকট প্রার্থনা করবে।
এখানে এনজিওরা খাবার পোশাক বই খাতা ইত্যাদি সবকিছু দিচ্ছে। বিনিময়ে তারা স্কুলে স্কুলে মুসলিম বাচ্চাদের শেখাচ্ছে বাইবেলের অনুবাদ। তাদের কাছে মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী মানার পরিবর্তে যীশুকে প্রভু মানার আকীদা শেখানো হচ্ছে।
আরো অবাক হওয়ার মত বিষয় হল, এনজিওদের এত সংখ্যক স্কুলের বিপরীতে এখানে পুরো এলাকায় মসজিদ আছে মাত্র চারটি। এবং একটিতেও মক্তব চালু নেই। ইমাম মুয়াজ্জিন সাহেবদের সাথে আলাপ করে বোঝা গেল, তাদের সময় নেই পড়ানোর। এবং অন্য কেউ পড়াক এ ব্যাপারে তারা ততটা আন্তরিক নন।
জিজ্ঞেস করে জানা গেছে, বস্তির বাচ্চারা মসজিদ ময়লা করে ফেলবে শুধু এই ভয়েও মক্তব পড়ানো থেকে বিরত থাকেন কেউ কেউ। কিভাবে বস্তিতে মক্তব চালু করা যায়, যাতে করে বস্তির বাচ্চারা কুরআন শিখতে পারে এনিয়ে কয়েকদিন ঘুরে দায়িত্বশীলদের সহযোগিতা না পেয়ে ফিরে এসেছেন মাওলানা আরমান।
মাওলানা আরমানের দেখা চিত্র এবং তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বস্তির শিশুদেরকে কুরআন শেখানোর ক্ষেত্রে কী কৌশল অবলম্বন করা যায় এনিয়ে কথা হয়েছিল মিরপুরের মুঈনুল কুরআন মাদরাসার পরিচালক মুফতি হাবিবুর রহমানের সাথে। মাদরাসা পরিচালনার পাশপাশি আল মুঈন সংস্থার মাধ্যমে তিনি বস্তির শিশুদের মাঝে কুরআন শেখানোর মেহনত করে থাকেন।
তিনি জানালেন, তারা প্রথমে বস্তি এলাকা ঘুরে দীনদার লোক খোঁজেন। তাদেরকে প্রথমে কুরআনের গুরুত্ব বোঝান। পরে যখন তাদের দিল তৈরি হয় তাদেরকে ফ্রি কুরআন শেখার ব্যবস্থা করার কথা বলেন। তারা এলাকার দ্বীনদার লোকদেরকে দিয়ে ৩ জনের একটা কমিটি বানিয়ে দেন। এই কমিটি নিয়ে এলাকার ইমামদের দারস্থ হন মক্তব প্রতিষ্ঠা করার জন্যে। তখন এলাকার ইমামরা তাদের আব্দার ফেলে দিতে পারেন না। এভাবে এলাকার ইমামগণও মক্তবের খেদমতে যুক্ত হয়ে যান।
তিনি আরো জানান, বস্তিবাসীর মাঝে মিশনারিগুলোর এই কার্যক্রম শুধু ধলপুরেই নয় বরং দেশের প্রায় সব বস্তিতেই। আমারা সব সময় আরামে থাকতে চাই। আমাদের গায়ের জামার যেন ভাজ না ভাঙ্গে, আমাদের পায়ে যেন কাঁদা না লাগে আমাদের টার্গেট থাকে এটা। আমাদের এই আরাম প্রিয়তার সুযোগে এনজিওরা বস্তির মাঝে তাদের অর্থ দিয়ে খাবার দিয়ে পোশাক দিয়ে তাদের মতাদর্শ প্রচার করে চলেছে। একের পর এক খৃস্টান মিশনারীদের দখলে চলে যাচ্ছে বস্তিগুলো। আমাদের এখনই তড়িত পদক্ষেপ নিতে হবে। নয়তো বস্তির শিশুদের মাঝে আর ঈমানদার যুবক খুঁজে পাওয়া যাবে না, যোগ করেন মুফতি হাবিব।
