ধর্ষণের খবর প্রচারেও দরকার সতর্কতা

ওয়ারিস রব্বানী ।।

সিলেটের এমসি কলেজ ও নোয়াখালীর একলাসপুরে পরপর দুটি ভয়াবহ ধর্ষণ ঘটনার খবর সামনে আসার পর এজাতীয় নারকীয় ঘটনার সংবাদ প্রকাশের যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। একেকদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘটিত নির্যাতন ও বর্বরতার চার-পাঁচটি করে নিউজ প্রচার হচ্ছে। এসব খবর বা নিউজ কোনোটাই মিথ্যে নয়। কিন্তু হঠাৎ করেই লাগাতার বীভৎস খবরের ধারাবাহিকতা সমাজ ও মানুষের মানসিকতাকেই যেন আরো অসুস্থ করে তুলছে।

অনেকেই বলছেন, সমাজের চিত্রটা ভয়াবহ হলে খবর বা নিউজ তো ভয়াবহ হবেই। এজন্যই নারী নির্যাতনের এসব খবর সামনে আসছে। কারণ নির্যাতন-ধর্ষণ তো হচ্ছে। কথা সত্য। কিন্তু হঠাৎ করে এরকম বীভৎস ঘটনার অব্যাহত প্রচার অনেক সময় স্বাভাবিক সুস্থ-মনস্তত্ত্বের ওপরও বড় রকম আঘাত তৈরি করে। শিশু, কিশোর ও কিশোরীদের জন্যও সতর্কতা দরকার। কিন্তু এজাতীয় ঘটনার অতি প্রচারে তাদের মনের নরম জমিনটা ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকে। মন বিষিয়ে ওঠে। এতে অনেক রকম মনোবৈকল্যেরও জন্ম হতে পারে।

এর একটি কারণ, ধর্ষণের খবর পরিবেশনায় অনেক গণমাধ্যমের ভাষা ব্যবহারে এক ধরনের অসংযত বা ‘প্রকাশ প্রবণতা’ লক্ষ করা যায়। অনেক সময় ঘটনার খবরে বিস্তারিত বর্ণনা থাকে। যেটা এজাতীয় সব খবরের ভাষায় না থেকে শুধু আদালতের যুক্তি-তর্কে থাকলেই বেশি উপযোগী হতো।

নেতিবাচক ঘটনা বা চরিত্রের খবর বেশি বেশি প্রচারে এবং অসংযত ভাষায় প্রচারে কোমলমতিদের প্রভাবিত হওয়ার ঘটনা বারবার প্রমাণিত। কিছুদিন আগে দেখা গেল, ইভটিজিংয়ের ঘটনায় স্কুলের মেয়েদের আত্মহত্যার খবর প্রচার হচ্ছে। এরপর হঠাৎ করে এজাতীয় ঘটনা বেড়ে গেল। ইভটিজিং এবং আত্মহত্যা যেন পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগলো। তখন অনেকেই আত্মহত্যার খবরে রাশ টানতে উদ্বুদ্ধ করলেন। কারণ, অনেক অল্পবয়সী মেয়েদের আবেগের জায়গায় কোনো আঘাত লাগলেই তারা গণমাধ্যমের ‘দেখানো’ পথে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বসতো। একসময় এজাতীয় খবর কমলো, ঘটনাও কমল। অথবা ঘটনা কমলো, ফলে খবরও কমলো।

আরো পড়ুন: সমাজচিত্র: উপড়ে ফেলতে হবে এই ঔদ্ধত্যের শেকড়

‘আমরা গ্যারান্টি দিচ্ছি, শরীয়া আইনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে এমন জঘন্য ঘটনা বারবার ঘটবে না’

ইভটিজিং, আত্মহত্যা, ধর্ষণ, ধর্ষণ পরবর্তী বর্বরতা- কোনোটাই সংকট হিসেবে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু এজাতীয় সংকটের খবর প্রচারে গণমাধ্যমগুলো যদি অসংযমের প্রতিযোগিতায় নেমে যায়, তাহলে সমস্যার অন্য একটি এলাকা তৈরি হয়। তাই গণমাধ্যমের উচিত, বীভৎস ঘটনা এবং ঘটনা বর্ণনার ভাষায় সংযম রক্ষা করা। সমাজে মন্দ ঘটনা বেড়ে গেলে সেই মন্দের ছাপ বা মন্দ ঘটনার ছাপ গণমাধ্যমে পড়বেই। কিন্তু এই ছাপ পড়ার ব্যাপারটি যেন উল্লাস বা উপভোগের আমেজ নিয়ে না আসে। বরং এসব ঘটনার বর্ণনায় যেন কান্না ও প্রতিবাদের ধ্বনিই বড় হয়ে উঠে। পর্দাবৃত ঘটনার ডিটেলস বা সবিস্তার বর্ণনা পরিবেশকে আরো বেশি দূষিত করে  তুলে। ধর্ষণ ও ব্যভিচার এখন এক বুকজোড়া বেদনার নাম। এ বেদনার গল্প যত কম সামনে আসে তত ভালো। এ বেদনার ঘটনা যত কম ঘটে কিংবা একদমই না ঘটে- তত ভালো।

তবে এত কিছুর সঙ্গে এটাও সত্যি যে, নারীর নিগ্রহ ও সীমালংঘনের অপরাধে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার শালীন প্রতিটি সংগ্রামই মানব জীবনের জন্য, জীবনের পথচলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

পূর্ববর্তি সংবাদথাইল্যান্ডে যাত্রীবাহী বাসে ট্রেনের ধাক্কা, নিহত কমপক্ষে ১৮
পরবর্তি সংবাদকাতারে তুরস্কের সামরিক উপস্থিতির সমালোচনায় আমিরাত