গভীর খাদের কিনারে তরুণ সমাজ: কথায় কথায় আত্মহত্যার পরিমাণ বাড়ছে

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবে তরুণ সমাজ যে কত গভীর খাদের কিনারে চলে গেছে  তা প্রায় প্রতিদিন সংবাদপত্রে প্রকাশ পায় কিন্তু আসল সমাধানের দিকে যেন কারো চোখ নেই। কথায় কথায় আত্মহত্যা করছে, তুচ্ছ কারণে নিজের গায়ে আগুন ঢেলে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে বেঁচে থাকাটাই যেন অনেকের নিকট আযাব হয়ে গেছে।

এই গতকাল রাতে  প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ক্ষোভে, দুঃখে, হতাশায় সিলেটের এক যুবক ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করেছেন।  বুধবার রাত ৯টার দিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মোগলাবাজার থানার আলমপুরস্থ ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে।  এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

আলহাজ উদ্দিন (১৯) জকিগঞ্জ উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের দরগাবাহারপুর গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে। তিনি গতবছর আলমপুরস্থ সিলেট সরকারি কারিগরি ইনস্টিটিউট থেকে এসএসসি পাস করেন।

তবে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার প্রায় ঘণ্টা খানিক আগে একটা মেয়েকে দায়ী করে যুবকটি আবেগঘন ফেসবুক পোস্ট দিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়েটির পরিচয় পাওয়া না গেলেও যুবকের সাথে একটা ছবি মিলেছে।

মেয়েটির ছবি সংযুক্ত ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন- ‘কিছু মানুষ নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে। তারা অনেক স্বার্থপর হয় প্রিয় মানুষটার বিষয়ে। সবকিছু দিয়ে তাদের পেতে চায়। আর আমি কোনোভাবে পাইনি। চলে যাচ্ছি না ফেরার দেশে। ভালোবেসো না ঠকে যাবে। ’

এ স্ট্যাটার্স দেবার প্রায় ঘণ্টা সময় পর লাইভে এসে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন আলহাজ উদ্দিন।

অনেকে যুবকের এ আত্মহত্যার ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন।

নিহতের চাচা আফজল হোসেন জানান, রাতে বাসায় নিহত আলহাজের মা ও বোন ছিলেন। ছেলেটি তার মাকে চা বানানোর কথা বলে রুমে চলে যায়। রুমের ভেতরে সাউন্ডবক্স দিয়ে গান বাজিয়ে আত্মহত্যা করায় কেউ কিছু বুঝেননি।

আত্মহত্যার কারণ তিনি বলতে চাননি। তবে ফেসবুক লাইভে ‘তুমি সুখে থাকো’ এ কথা বলে আত্মহত্যা করেছে এমনটি নিহত আলহাজের চাচার দাবি।

এদিকে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আত্মহত্যার লাইভ দৃশ্যটি তাৎক্ষণিক সরিয়ে নিয়েছে। তবে কয়েকজন ভিউয়ার্স জানিয়েছেন, আত্মহত্যার লাইভ চলাকালে সাউন্ডবক্সে গান বাজতে শুনতে পেয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে সিলেট মোগলাবাজার থানার ওসি সাহাবুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।  তিনি জানান, ফেসবুক লাইভে এসে এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন। প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে ধারণা হচ্ছে, প্রেমঘটিত কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে সাধারণ একটি কথায় শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে খুলনার এক গৃহবধূ। গণমাধ্যমে প্রকাশ, ‘তুই আমাকে কতটুকু ভালোবাসিস তার প্রমাণ দিতে পারবি? তাহলি নিজের গায় কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরায় দে তো কী রকম পারিস?’ স্বামী প্রদীপের এমন চ্যালেঞ্জের পর ভালোবাসার প্রমাণ দিতে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ পুতুল রাণী।  পরে ভালোবাসার প্রমাণ দিতে পুতুল গায়ে আগুন ধরালেও সেই আগুন নেভানোর চেষ্টা করেননি ভালোবেসে বিয়ে করা স্বামী প্রদীপ। ভালোবাসার এই আগুনে পুড়েই গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় পুতুল রাণীর।

প্রদীপের বিরুদ্ধে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ তোলায় পুলিশ তাকে আটক দেখিয়েছে। প্রদীপ পুলিশের প্রহরায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুতুলের কাকা সঞ্চয় কুমার সাংবাদিকদের কাছে এমন তথ্যই তুলে ধরে বলেন, মৃত্যুর আগে পুতুল কথাগুলো তাকে বলে গেছেন। তিনি এ ঘটনার বিচার দাবি করে বলেন, ‘তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া, মারামারি হতো। গত রাতেও তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। তারপর প্রদীপের ভালোবাসার প্রমাণ দিতে পুতুল এ ঘটনা ঘটায়। অথচ গায়ে আগুন ধরানোর পর প্রদীপ তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি। আমি এর বিচার চাই।’ এ ঘটনায় ঝিকরগাছা থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কাউরিয়া দাসপাড়ায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টায় আগুনে দগ্ধ হন পুতুল রাণী। তার স্বামী প্রদীপও (২০) দগ্ধ হয়েছেন। প্রথমে প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে ঝিকরগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। দগ্ধ পুতুল রাণীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকেরা তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। তবে স্বজনেরা তাকে নিয়ে যান খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তার মৃত্যু হয়।যশোর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আহম্মেদ তারেক শামস চৌধুরী জানান, রাত ৩টার দিকে দগ্ধ দম্পতিকে হাসপাতালে আনা হয়। পুতুলের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাতেই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করা হয়। এছাড়া আহত প্রদীপের দুই হাত, চোয়াল ও মাথার চুল পুড়ে গেছে। তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রদীপ জানান, পারিবারিক বিষয় নিয়ে পুতুলের সঙ্গে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে পুতুল ঘরের বাইরে যেতে চাইলে তিনি বাধা দেন এবং দরজা আটকে শুয়ে পড়েন। পুতুল ক্ষিপ্ত হয়ে পাশের ঘরে গিয়ে নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন। তিনি আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। এতে তার দুই হাত পুড়ে যায়। পরে প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। ঝিকরগাছা থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রদীপকে আটক দেখিয়ে পুলিশের পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সামাজিক অস্থিরতার এসব ঘটনা প্রমাণ করছে, মানুষ দিন দিন আত্মিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হল, দেহের যেমন পরিচর্যা করতে সেভাবে অন্তরেরও পরিচর্যা করতে হয়। অন্তরের সঠিক পরিচর্যা হলেই কেবল এধরণের ঘটনা কমতে পারে।

পূর্ববর্তি সংবাদশ্বশুরের সম্পত্তির লোভে নিস্পাপ শিশু শ্যালককে হত্যার চেষ্টায় জামাতার বিরুদ্ধে মামলা
পরবর্তি সংবাদপদ্মা সেতুর ৩৬তম স্প্যান বসতে পারে আজ