রায়হান মুহাম্মদ।।
সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ও কথিত সাম্প্রদায়িকতা বন্ধের নামে গত মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) শাহবাগে মশাল মিছিল করে বাম সংগঠনগুলো। সাম্প্রদায়িকতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের ব্যানারে কর্মসূচির কথা বললেও মশাল মিছিল শুরুর পরে এ মিছিল থেকে দেশের নবীপ্রেমীদের জাগরণের অন্যতম প্লাটফরম হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে সহিংস ও বিদ্বেষমূলক শ্লোগান দিতে শোনা গেছে। শুধু হেফাজতে ইসলাম নয় দেশের আপামর জনতার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ব্যক্তিত্ব আলেম-ওলামাদের নিয়েও বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে বামদের মশাল মিছিল নামক এই কর্মসূচি থেকে।
হেফাজতে ইসলাম- ইসলাম ও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবমাননাকারীদের রুখতে সংগঠনটির নেতৃত্বে সব সময় অভূতপূর্ব সাড়া দিতে দেখা গেছে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের। ফ্রান্সের ধৃষ্টতার প্রতিবাদে হেফাজতের ডাকা ফরাসি দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচিতেও পড়েছিল ব্যাপক সাড়া। এরপরই দেখা গেল সংগঠনটিকে নিয়ে বামদের এমন ঘৃণা ছড়ানো শ্লোগান ও আস্ফালন।
‘‘মৌলবাদকে ধোলাই করো, বাঁশের লাঠি তৈরি করো’’, ‘‘মৌলবাদিরা পাকিস্তানি, জানি জানি সবাই জানি’’, ‘‘হেফাজতে ইসলাম, মেড ইন পাকিস্তান’’, ‘‘জ্বালিয়ে পুড়িয়ে গুঁড়িয়ে দাও, হেফাজতের আস্তানা’’, মৌলবাদ যেখানে, লড়াই হবে সেখানে’’ এসব শ্লোগান দিতে শোনা গেছে তাদের।
হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীল হিসেবে ব্যাপারটাকে কিভাবে দেখছেন, জানতে চাইলে ইসলাম টাইমসকে সংগঠনটির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও লালবাগ মাদরাসার শিক্ষক মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাজি বলছেন, বামদের এমন শ্লোগান ও কথাবার্তা শুধু ইসলাম নয় দেশের জন্যও উস্কানি মূলক।
তার ভাষায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের যে অভিযোগ করেছে তারা, তা পুরোই সন্দেহ মূলক ও তাদের কল্পনা প্রসূত। পরস্পরে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি বজায় রেখেই এদেশের মানূষ বসবাস করে আসছে বহুকাল থেকে। সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের মিথ্যে অভিযোগের মাধ্যমে মূলত তারা দেশের স্থীতিশীল পরিবেশকেই ঘোলাটে করতে চায়। বিদেশী শক্তির কাছে দেশকে বিতর্কিত করতে চায়, তাই তাদের এসব কথাবার্তা শুধু ইসলাম নয় দেশের সার্বভৌমত্বের জন্যও হুমকি ও উস্কানিমূলক- মূফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাজির ভাষায়।
মূফতি সাখাওয়াত হুসাইন বলছেন,তারা নির্দিষ্ট কোন দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়নেই মশাল মিছিলের নামে এসব বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন, যা তাদের শ্লোগানের ভাষা থেকেই স্পষ্ট।
তাদের এসব শ্লোগান ও বক্তব্য হেফাজতে ইসলামের উপর কোন প্রভাব ও চাপ ফেলতে পারবে না বলে মনে করেন সংগঠনটির নির্বাহী কমিটির এই সদস্য।
এদিকে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলছেন, প্রতিবেশী দেশে যেভাবে মুসলিম সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে তা আমাদের দেশে কখনোই ঘটে না, আমাদের দেশের মুসলমানরা এমন ঘৃণিত কাজের কথা চিন্তাও করতে পারেন না। তাই বামদের এমন দাবিকে দুঃখজনক বলছেন হেফাজতে ইসলামের এই নেতা।
দুয়েকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা থাকতে পারে, এসবের তীব্র নিন্দা জানাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা ও দেশের সংবিধান অনুযায়ী অতীত, বর্তমানে কখনোই আমরা সাম্প্রদায়িক নির্যাতনকে সমর্থন করিনি, ভবিষ্যতে এসব সমর্থনের প্রশ্নই আসে না।
মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর ভাষায়, গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসেবে সবাই নিজের অধিকারের পক্ষে কথা বলতে পারেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, দেশের আপামর জনতার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার জায়গাটিকে বিতর্কিত করতে মিথ্যে দাবি তুলবেন, মানুষের মনে আঘাত করবেন, বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিবেন।
হেফাজতে ইসলামকে ‘মেড ইন পাকিস্তান’ বলার বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন, জানতে চাইলে মাওলানা আফেন্দী বলেন, ইসলাম ও মুসলমানের সাথে জড়িত বিষয়গুলোকে সব সময় এক শ্রেণীর মানুষ পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করার হীন চেষ্টা চালায়। তারা ভাবে এর মাধ্যমে হয়তোবা তারা ইসলামী দল ও আলেম-ওলামাদের বিতর্কিত করতে জনগণের কাছ থেকে একধরণের সহানুভূতি পাবেন। তবে তাদের এ ধারণা অলিক কল্পনারই অংশ বলে মনে করেন মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।
তিনি বলছেন, আলেম-ওলামা ও ইসলামী দলগুলো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে সব সময় ছিল এবং আছে এসত্য দেশের সব মানুষ জানেন এবং এটাই সত্য।
শাহবাগেে এমন অযৌক্তিক শ্লোগানদাতারা যে কোন একটা বিদেশী চক্র ও বলয়ের ইশারায় এই কাজগুলো করছেন তা স্পষ্ট। নইলে ইসলামী ইস্যূতে তারা হেফাজতে ইসলাম ও আলেম-ওলামাদের কেন শুধুমাত্র পাকিস্তানের সাথে সম্পৃক্ত করতে চান- প্রশ্ন তুলেন মাওলানা আফেন্দী।
তিনি বলেন, ইসলামের বিষয়গুলো তো সৌদি আরবের সাথেও জড়িত, সেদিকেও তারা ঈঙ্গিত করতে পারতো, কিন্তু তা না করে শুধু পাকিস্তানের দিকে নিয়ে বিষয়টিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা কেন? তবে তারা যত অপচেষ্টাই করুক না কেন, তা কখনো সফল হবে না- বলছিলেন হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহনগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।
-এনটি