রায়হান মুহাম্মদ।।
সম্মতি ছাড়া স্ত্রীর সাথে সহবাসকে ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’, অর্থাৎ ‘ম্যারিটাল রেপ’ হিসেবে গণ্য করে আইন সংশোধনে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল (আইনি) নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. জাহিদ চৌধুরী জনি।
বৈবাহিক সম্পর্ক পৃথিবীর সবথেকে পবিত্র সম্পর্কের একটি। এই সম্পর্ককে ঘিরেই প্রতিষ্ঠিত হয় সভ্য ও সুস্থ সমাজ। এতো দিন বিবাহপূর্ব সর্ম্পকগুলোতে বিভিন্ন রকম ধর্ষণের কথা শোনা গেলেও হঠাৎ করেই বাংলাদেশে শোনা গেল ‘বৈবাহিক ধর্ষণে’র কথা। আইনজীবী ও শিক্ষত শ্রেণীর মুখে এমন কথা শোনে অবাক যেন দেশের তরুণ, যুবক ও সবশ্রেণীর মানুষ।
বাংলাদেশের সমাজ ও পরিবেশে ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ জাতীয় পাশ্চাত্য শব্দ ও এক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ, কী ধরনের প্রভাব ফেলবে দেশের সমাজ ব্যবস্থায় এবং বিষয়টা আসলে কতটা যৌক্তিক? জানতে চাইলে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আমিনুল হক বলেন, ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ বলতে ইসলামী জীবন বিধানে কোন পরিভাষা নেই। এই শব্দটি পুরোই নাস্তিক্যবাদ ও ধর্মবিরোধীদের তৈরী করা। এর ক্ষতি সুদূর প্রসারী। একটি দেশের সমাজ ব্যবস্থা নষ্ট করতেই চিহ্নিত কোন মহল এসব শব্দের প্রচলন করতে চায় বলে মত দিচ্ছেন তিনি।
ড. মুহাম্মদ আমিনুল হক বলছেন, ইসলামের বিধানগুলো সুসভ্য ও ন্যাচারাল। কারো উপর জোর ও অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়ার মতো কোন বিধান নেই ইসলামে। তাই ইসলামী জীবন বিধানে বৈবাহিক ধর্ষণের মতো বিষয়ে কোন ধরণের আইন প্রয়োগ করার প্রয়োজন নেই।
এছাড়া সন্তান প্রসব করার পর ও মাসের বিভিন্ন সময়ে নারীদের যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, সে সময়গুলোতে স্ত্রী সহবাসের ব্যাপারটি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে ইসলামি বিধান অনুযায়ী। তাই নারীর বিভিন্ন সমস্যার ধোয়া তুলে যারা ‘বৈাহিক ধর্ষণে‘র প্রচলন করতে চান তাদের সেই যুক্তিও ধোপে টেকে না বলছিলেন ড. মুহাম্মদ আমিনুল হক।
এদিকে বিষয়টিকে একটু বিশ্লেষণ করে কলামিস্ট ও পর্যবেক্ষক আতাউর রহমান গণী বলছেন, মুসলমানদের সভ্য ও সুস্থ জীবন ব্যবস্থাকে ধ্বসিয়ে দিতে এক নতুন পায়তারা করা হচ্ছে এর মাধ্যমে।
এই পর্যবেক্ষকের মতে, এজাতীয় আইন চালু হলে হলে বহুমুখী সমস্যার সম্মুক্ষীন হতে হবে পরিবারগুলোকে।
পারিবারিক বিভিন্ন মনোমালিন্যের সুযোগ নিয়ে স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে এই আইনের সূত্র ধরে অপরাধী গণ্য করা সহজ হবে। অনেক ক্ষেত্রে এসব কারণে স্বামীর জন্য হয়তোবা দ্বিতীয় বিবাহের বিষয়টি প্রাসঙ্গিক হয়ে আসতে পারে। কিন্তু যে স্ত্রী আগে থেকেই স্বামীকে ‘চাপ প্রয়োগ’ করতে তার গায়ে অপরাধের চিহ্ন এঁটে দিয়েছেন, স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহের ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রচলিত বিভিন্ন আইনে তিনি জটিলতা তৈরি করবেন না তার কী গ্যারান্টি রয়েছে- এমন প্রশ্ন তুলেছেন কলামিস্ট ও পর্যবেক্ষক আতাউর রহমান গণী।
আরো পড়ুন: “ম্যারিটাল রেপ”: আমাদের কবে বোধোদয় হবে!
সব জটিলতা পেরিয়ে স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করার পর সেই স্ত্রীও একই অভিযোগ করলে এক্ষেত্রে পরিবারটিতে শৃঙ্খলা বজায় রাখার কোন উপায়ই আর অবশিষ্ট থাকবে বলে ভাবা যায় কি? -প্রশ্ন পর্যবেক্ষক আতাউর রহমান গণীর।
আতাউর রহমান গণীর ভাষায়, শরয়ী বিধানের বাইরে গিয়েও যদি ‘বৈবাহিক ধষণে’র ব্যাপারটি চিন্তা করতে হয়, তাহলেও দেখা যাবে আমাদের দেশে এজাতীয় পাশ্চাত্য নীতি গ্রহণের পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলছেন, দেখুন, ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে নারীরা খোলামেলা চলার পরেও তাদের মাঝে সে পরিমাণ অপ্রীতিকর ঘটনা দেখা যায় না, যে পরিমাণ এশীয়ার বিভিন্ন দেশ ও বাংলাদেশে নজরে পড়ে। কারণ, সে দেশগুলোতে বিষয়টা স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তা সয়ে যাওয়ায়, কিন্তু আমাদের দেশে কোনভাবেই এব্যাপারগুলো স্বাভাবিক নয় এবং সয়ে যাওয়ার মতো নয়। তাই শরয়ী বিধানের বাইরেও এজাতীয় পাশ্চাত্য আইন বাংলাদেশে প্রয়োগের পরিবেশ নেই। দেশের সামাজিক ও মানুষের জীবন ব্যবস্থা বিবেচনায় এই আইনের প্রয়োগ হলে দেশের পরিবারগুলোতে এর ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে বলছিলেন পর্যবেক্ষক আতাউর রহমান গণী।
এছাড়াও পুরুষের বিরুদ্ধে ‘বৈবাহিক ধর্ষণে’র অভিযোগ করে নিজে শক্ত অবস্থান নেওয়ার মতো পরিবেশও নেই বাংলাদেশের নারীদের। তাই এজতীয় আইনের প্রয়োগ দেশের সুশৃঙ্খল পরিবার ব্যবস্থাকে একটি অন্ধকারের দিকেই ঠেলে দিবে বলে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
-এনটি
![](https://www.islamtime24.com/wp-content/uploads/2021/03/20210308_200803-scaled.jpg)