আজকের বাছাই ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে পাকিস্তানকে চাপ দিচ্ছে কি সৌদি?

ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে পাকিস্তানকে চাপ দিচ্ছে কি সৌদি?

 ইসলাম টাইমস ডেস্ক: ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে টিভিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কিছু বক্তব্য নিয়ে সপ্তাহ-খানেক ধরে দেশের ভেতর এবং বাইরে তুমুল চর্চা চলছে।

পাকিস্তানের বেসরকারি জিএনএন টিভি চ্যানেলে দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে এক প্রশ্নের উত্তরে ইমরান খান স্পষ্ট ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে পাকিস্তানের ওপর চাপ রয়েছে।

“আমেরিকায় ইসরায়েলের গভীর প্রভাব রয়েছে যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় আরো বেড়েছে … চাপটা সেখান থেকেই।“

মধ্যপ্রাচ্যের “ভাতৃপ্রতীম“ মুসলিম দেশও কি পাকিস্তানকে চাপ দিচ্ছে – এমন প্রশ্নে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেলেও তা সামলে ইমরান খান উত্তর দেন, “সব কথা সব সময় বলা যায়না। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো।“

ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিনিময়ে কেউ কি পাকিস্তানকে কোনো লোভ দেখাচ্ছে ? – এই প্রশ্নে বিব্রত ইমরান খান উত্তর দেন, “বাদ দেন এসব প্রশ্ন, অন্য কথা বলেন। আমাদের দেশ যখন নিজের পায়ে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারবে, তখন এসব প্রশ্ন করবেন।“

তবে পরপরই ইমরান খান বলেন, ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ বিকিয়ে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক তৈরি নিয়ে তিনি ভাবছেন না। “যতক্ষণ না ন্যায়সঙ্গত এমন কোনো মীমাংসা হয় যা ফিলিস্তিনিদের মন:পুত হয় ততক্ষণ আমার ভেতর দ্বিতীয় কোনো চিন্তা নেই।“

অবশ্য সেই সাথে ইমরান খান বলেন, বৃহত্তর স্বার্থে অনেক সময় আপোষ করতে হয়। তিনি বলেন, নবীও বৃহত্তর স্বার্থে হুদাইবিয়ার চুক্তি করেছিলেন।

এই সাক্ষাৎকার প্রচারের সাথে সাথেই ইমরান খানের এসব কথা নিয়ে পাকিস্তানের ভেতর এবং বাইরে কাঁটাছেড়া চলছে। ইসরায়েলের বড় বড় সংবাদ মাধ্যমেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কথার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ চলছে।

হৈচৈ দেখে সাক্ষাৎকারটি প্রচারের দুদিন পরেই ১৭ই নভেম্বর পাকিস্তানের সরকার এক বিবৃতি জারী করে বলে, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে পাকিস্তানের ওপর কোনো চাপ নেই।

সেই মুসলিম দেশ কোনটি

তবে তাতে বিতর্ক আলোচনা থেমে নেই। বিশেষ করে ‘ভাতৃপ্রতীম‘ মুসলিম রাষ্ট্রের কাছ থেকে চাপ তৈরির যে প্রশ্ন ইমরান খান এড়িয়ে গেছেন সেই দেশটি কে হতে পারে তা নিয়ে বিশ্লেষণ হচ্ছে।

পাকিস্তানের সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক কানওয়ার খুলদুন শহিদ ইসরায়েলি দৈনিক হারেতজে এক মন্তব্য প্রতিবেদনে লিখেছেন – চাপ দিচ্ছে এমন যে “ভাতৃপ্রতীম মুসলিম দেশের নাম ইমরান খান করতে চাননি সেই দেশটি সৌদি আরব।“

কানোয়ার শহিদ বলেন, তাদের ওপর পাকিস্তানের অর্থনৈতিক নির্ভরতার সুযোগ সৌদিরা নিতেই পারে। পাকিস্তানের প্রায় ২০০ কোটি ডলারের জরুরী ঋণ সাহায্য সৌদি আরব আটকে রেখেছে যা পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

ঐ সাংবাদিক আরো লিখেছেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও ইসরায়েলের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের পক্ষে কারণ, তার মতে, সেনাবাহিনী মনে করে তাতে ভারত-ইসরায়েল কৌশলগত সম্পর্কে কিছুটা হলেও ভারসাম্য আনা যাবে। সৌদি আরবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর “অর্থনৈতিক স্বার্থের“ কথা উল্লেখ করে পাকিস্তানী ঐ সাংবাদিক ইঙ্গিত করেন যে সেনাবাহিনীর মাধ্যমেও হয়ত সৌদি আরব ইসরায়েল নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থান বদলের চেষ্টা করছে।

কিন্তু এই বিশ্লেষণের সাথে সবাই অবশ্য একমত নন।

পাকিস্তানের বর্ষীয়ান রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হাসান আসকারি রিজভি বিবিসি বাংলাকে বলেন, সৌদি আরব পাকিস্তানের ওপর এসব স্পর্শকাতর ইস্যুতে কতটা চাপ দিতে পারে তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।

বরঞ্চ, তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম বিশ্বের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক তৈরিতে প্রধান ভূমিকা রাখছে, ফলে ওয়াশিংটন যদি এ নিয়ে পাকিস্তানকে কিছু বলে থেকে তাতে তিনি অবাক হবেননা।

“নানা কৌশলগত ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসনের সাথে অব্যাহত কথাবার্তা পাকিস্তানের হয়। সে সব যোগাযোগের সময় ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক নিয়ে কিছু পরামর্শ, প্রস্তাব আসতেই পারে। এটাকে অনেকে চাপ হিসাবেও দেখতে পারেন …আমি এতে বিস্মিত নই।“

সূত্র: বিবিসি

ইজে

পূর্ববর্তি সংবাদস্বর্ণের দাম ভরিপ্রতি আড়াই হাজার টাকা কমল
পরবর্তি সংবাদসাজা বাড়ার পরও ধর্ষণ কমেনি