‘আমাদের বক্তব্যকে বিকৃতরূপে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা সাজানো হয়েছে ‘

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। সংগৃহীত।

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’র অভিযোগ এনে করা মামলা প্রসঙ্গে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেন, আমাদের বক্তব্যকে নিজেদের মতামত, মনগড়া ব্যাখ্যা ও  বিকৃতরূপে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা সাজানো হয়েছে।

সোমবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর নিজের ফেসবুক পেজে ‘ভাস্কর্য নিয়ে বিরোধ, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাসহ উদ্ভূত সার্বিক পরিস্থিতির’ ওপর বক্তব্য দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন মাওলানা মামুনুল হক।

মামলার প্রসঙ্গে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘বারবার বলছি, আমাদের বক্তব্যকে নিজেদের মতামত, মনগড়া ব্যাখ্যা ও  বিকৃতরূপে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা সাজানো হয়েছে।

এসময় তিনি বলেন, মদীনার সনদে দেশ চালানোর কথা বলায় মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর নামে রাষ্ট্রদ্রোহীর মামলা করা হয়েছে। এক সময় প্রমানমন্ত্রী নিজেও মদীনার সনদে দেশ চালানোর কথা বলেছিলেন, বর্তমানে যারা আলেমদের বিরুদ্ধে এই মামলা করেছেন কখনো হয়তোবা এরা প্রধানমন্ত্রীরও বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করতে পারেন। তিনি বলেন, এরা মূলত দেশকে একটা অস্থিতিশীল জায়গায় নিয়ে যেতে এইসব করছে।

তিনি বলেন, সারাদেশের আলেমরা বলছেন, আমাদের বক্তব্য কখনোই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নয়। বরং স্বাধীনতার মহান নেতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানকে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সকল বাংলাদেশি, সকল বাঙালী শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি। একজন মুসলিম হিসেবে তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি।’ তার মন্তব্য, ‘আমাদের সমস্ত বিরোধ হলো ভাস্কর্য তথা মূর্তি নিয়ে।’

‘বঙ্গবন্ধুর নামকে ভুঁইফোড় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ দেশের ইসলামবেত্তাদের মুখোমুখি করে দিতে চাইছে। এটি একটি সুপরিকল্পিত’ বলেও অভিযোগ করেন মাওলানা মামুনুল হক।

তিনি বলেন, এই কাজটি করার মূল উদ্দেশ্য হলো চেতনার ব্যবসা করা। তারা বঙ্গবন্ধুকে ইসলামের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ইসলামকে যেমন ঘায়েল করতে চায়, তেমনি বঙ্গবন্ধুর মহান ব্যক্তিত্বকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। তারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি চেতনার ব্যবসা করতে চায়।’

লাইভে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘কুষ্টিয়ায় রাতের অন্ধকারে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার মাধ্যমে একটি অনভিপ্রেত পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত, দুঃখজনক ও অত্যন্ত নিন্দনীয়। ভাস্কর্য ভাঙার সঙ্গে কেউ কেউ আমার নাম জড়ানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু অত্যন্ত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছি, আমার কোনও বক্তব্যের মাধ্যমে অথবা আমার কোনও কথায় এভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়ার কোনও কথা আমি কস্মিনকালেও বলিনি। দেশের আইনশৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল কোনও ব্যক্তি এমনটা কখনও করতে পারেন না।’

তিনি বলেন, ‘আমার বক্তব্য স্পষ্ট, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে ভাস্কর্য রাখা নাজায়েজ ও হারাম- সেটা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আমি জানিয়ে দিয়েছি। এবং আমরা আমাদের বক্তব্যে এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছি, যদি আল্লাহ কখনও আমাদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সক্ষমতা দান করেন তাহলে শরিয়াহর আলোকে সকল কার্যক্রম ঢেলে সাজাবো ইনশাআল্লাহ।’

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘সারা দেশে যত্রতত্র বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের প্রবণতা শুরু হয়েছে। আমরা ভাস্কর্য নির্মাণের বিষয়ে দ্বিমত করি। কোরআন সুন্নাহর আলোকে তা নাজায়েজ। মরহুম ব্যক্তিদের সম্মান ও মর্যাদার দৃষ্টিকোণ থেকে মনে করি যত্রতত্র ভাস্কর্য নির্মাণ এই ব্যক্তিদের সম্মানহানি হবে। যত্রতত্র এই ধরনের ভাস্কর্য করলে মানুষের মল-মূত্র ত্যাগ হবে, সেখানে মাথার উপর বিভিন্ন পাখি মলত্যাগ করবে। যত্রতত্র বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য করলে সম্মান বৃদ্ধি হবে না, সম্মানহানির পরিবেশ তৈরি হবে।’

প্রসঙ্গত, আজ সোমবার দুপুরে ঢাকার একটি আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ করে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা মামুনুল হক ও মুফতি ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে মামলা করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আমিনুল ইসলাম বুলবুল।

ফেসবুক লাইভের বক্তব্যে মাওলানা মামুনুল হক উল্লেখ করেন, ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের মাধ্যমে ইসলামবিরোধী পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিলো। হঠাৎ গজিয়ে উঠা ভুঁইফোড় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চও এইরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।

-এনটি

পূর্ববর্তি সংবাদইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা করলেন সৌদি যুবরাজ তুর্কি বিন ফয়সাল
পরবর্তি সংবাদকরোনা: ফের প্রধানমন্ত্রীর অনুদান পেলেন ২ হাজার শিল্পী ও চলচ্চিত্রকর্মী