স্কুলের নতুন কারিকুলামে ধর্ম শিক্ষাকে পাবলিক পরীক্ষার আওতায় আনা হোক

মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী ।।

দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। দশম শ্রেণী পর্যন্ত বিভাগ তুলে দেয়া হচ্ছে। পাবলিক পরীক্ষাও হবে একবারই। ২০২২ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার এই কারিকুলাম চালু হবে। নতুন যে পরিবর্তন করা হচ্ছে, সেখানে দশম শ্রেণী শেষে ওই শ্রেণীর পাঠ্যসূচির ওপর প্রথম পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী শেষে দু’টি পাবলিক পরীক্ষা হবে, দু’টি মিলিয়ে হবে চূড়ান্ত ফল। আর তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শতভাগ শ্রেণীতে মূল্যায়ন হবে। পাঠদানের সময় ‘ধারাবাহিক মূল্যায়ন’ (শ্রেণীকে মূল্যায়ন) ও বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে ‘সামষ্টিক মূল্যায়নের’ ভিত্তিতে শিক্ষার্থী পরবর্তী শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হবে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এরই মধ্যে বিষয়টি সংসদে তুলে আলোচনাও করেছেন।

এ ছাড়া মাধ্যমিক স্তর (দশম শ্রেণি) পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে একই ধরনের বিষয় পড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এ বিষয়ে চূড়ান্ত হলে এখনকার মতো নবম শ্রেণি থেকে একজন শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ভাগ করা হবে না। এই ভাগ হবে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে গিয়ে। মূল্যায়নের ব্যাপারে রূপরেখায় বলা হয়েছে, নতুন কারিকুলামে সব শিক্ষার্থীকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ১০টি বিষয় পড়তে হবে। এর মধ্যে পাঁচটি বিষয় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞানে ৫০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও ৫০ শতাংশ পাবলিক পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া বাকি পাঁচটি বিষয়- জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ভালো থাকা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতিতে থাকবে শুধু ধারাবাহিক শিখনকালীন মূল্যায়ন। এসব বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। ২০২৫ সালে এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর একাদশ শ্রেণী শেষে ও দ্বাদশ শ্রেণী শেষে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর সম্মিলিত ফলের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। এই স্তরে ৩০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও ৭০ শতাংশ পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে।

মূল্যায়নের রূপরেখা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দশম শ্রেণিতে যে পাঁচটি বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে তার মধ্যে ধর্ম শিক্ষা বিষয়টি নেই। যার ফলে বিষয়টি শিক্ষার্থীদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে, যা কিছুতেই কাম্য নয়। অন্তত মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি ও গণিতসহ অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ধর্ম শিক্ষাকে সমান গুরুত্বের সঙ্গে পাঠদান করানো জরুরি। কারণ, এর মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী নিজের ধর্ম সম্পর্কে জানার পাশাপাশি নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের চর্চাও উত্তমরূপে করে নিতে পারে। ধর্ম শিক্ষা ছাড়া নৈতিকতা ও মূল্যবোধের পাঠদান আদতে সম্ভবপরও নয়। তাই দশম শ্রেণির মূল্যায়নের পরিবর্তিত পদ্ধতিতে পাবলিক পরীক্ষার জন্য যে ৫টি বিষয় রাখা হয়েছে, সেখানে ধর্ম শিক্ষা বিষয়টিও আলাদাভাবে গুরুত্বের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক।

আমাদের মনে রাখতে হবে, কোমলমতি শিশুদের জন্য ধর্ম শিক্ষা আবশ্যিক একটা বিষয়। বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের চেয়েও এ বিষয়টা ক্ষেত্রেবিশেষে তাদের জন্য বেশি জরুরি। অথচ আমরা সচরাচর যেটা দেখে আসছি, বছরের পর বছর ধরে অবহেলার শিকার হয়ে আসছে এ শিক্ষাটি। এখন নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতিতেও মাধ্যমিক পর্যায়ে ধর্ম শিক্ষার বিষয়টি গুরুত্বহীন থেকে যাচ্ছে। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের উচ্চপদস্থদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ধর্মকে বাদ দিয়ে বা ধর্ম শিক্ষাকে গুরুত্বহীন রেখে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সিলেবাস অপূর্ণাঙ্গই থেকে যায়। কারণ, মানবিকতা ও নৈতিক মূল্যবোধ ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে যেভাবে শেখা যায়, অন্য কোনো পন্থায় তা সম্ভবপর নয়। তাই আমাদের পাঠ্যসূচিতে ধর্ম শিক্ষার পাঠকে গুরুত্বের সঙ্গে এবং আরও গঠনমূলক পন্থায় অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের অপরিহার্য দাবি।

বাংলাদেশ মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশ। ঐতিহ্যগতভাবে এ দেশের মানুষ ধর্মভীরু। তাই মুসলমানদের সন্তানরা তাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও সংস্কৃতিতে ইসলামকে জানা ও শেখার সুযোগ পাবে—এটাই স্বাভাবিক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও নবনিযুক্ত ধর্মমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সবিনয় অনুরোধ, আমাদের পাঠ্যসূচিতে ধর্ম শিক্ষার পাঠকে গুরুত্বের সঙ্গে এবং আরও গঠনমূলক পন্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

লেখক প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক

-এমএসআই

পূর্ববর্তি সংবাদদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়, চট্টগ্রামে ফ্লাইট চলাচল ব্যাহত
পরবর্তি সংবাদমূর্তি ভাঙার কথা কোরআনের কোথাও বলা নেই: ডা. জাফরুল্লাহ