শাইখুল হাদিস মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী রহ.: এক নজরে বর্ণাঢ্য জীবন

রায়হান মুহাম্মদ।।

শাইখুল হাদিস মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী রহ.। ১৯৪৬ সালের ১০ জানুয়ারি কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ থানার চড্ডা নামক গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি।

মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী রহ. একই সাথে  ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক, রাজনীতিবিদ ও আধ্যাত্মিক রাহবার। এছাড়াও তিনি প্রায় ৪৫টি মাদরাসা পরিচালনার কাজে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।

তিনি একাধারে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব, আল হাইআতুল উলয়ার সহ-সভাপতি, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা ও জামিয়া সোবহানিয়া মাহমুদ নগরের শায়খুল হাদিস ও মহাপরিচালক ছিলেন।

শিক্ষাজীবন

বাড়ির পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী রহ.-এর শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। এখানে চতুর্থ শ্রেনী শেষ করে চড্ডার কাশিপুর কাসেমুল উলুম মাদ্রাসায় ভর্তি হন তিনি। এরপর ভর্তি হন বরুডার আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসায়। এখানে হেদায়া পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।

এরপর তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে পড়ার উদ্দেশ্যে ভারতে যান। নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে না পেরে ভর্তি হন ভারতের সাহারানপুর জেলার বেড়ীতাজপুর মাদ্রাসায়। এখানে জালালাইন পড়ার পর দারুল উলুম দেওবন্দে চলে আসেন। দেওবন্দ মাদ্রাসায় ৩ বছর ইলমে দ্বীন হাসিলের সৌভাগ্য লাভ করেন। দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করে দারুল উলূমে আরবি সাহিত্য নিয়ে পড়েন মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী রহ.।

কর্ম-জীবন

ভারতের মুজাফ্ফরনগর জেলায় অবস্থিত মাওলানা কাসেম নানুতুবি রহ. কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মুরাদিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী রহ.-এর কর্মজীবনের সূচনা। এখানে ১ বছর শিক্ষকতার পর ১৯৭৩ সালের শেষ দিকে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এরপর শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার নন্দনসার মুহিউস সুন্নাহ মাদ্রাসায় শায়খুল হাদিস ও মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় চলে যান। এখানে তিনি ৪ বছর শিক্ষকতা করেছেন এবং মাদরাসার দারুল ইকামাহ ছিলেন। ১৯৮২ সালে তিনি মাওলানা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ. প্রতিষ্ঠিত জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগে চলে আসেন।

এরপর ১৯৮৮ সালে তিনি জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা এবং ১৯৯৮ সালে জামিয়া সোবহানিয়া মাহমুদ নগর প্রতিষ্ঠা করেন মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী রহ.। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের শায়খুল হাদীস ও মহাপরিচালক ছিলেন। এছাড়াও তিনি প্রায় ৪৫টি মাদ্রাসা পরিচালনার কাজে যুক্ত ছিলেন।

আরো পড়ুন: চলে গেলেন হেফাজত মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী

২০২০ সালের ৩ অক্টোবর তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। একই সাথে তিনি আল হাইআতুল উলয়ার সহ-সভাপতি ছিলেন।

২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব নির্বাচিত হন। এর পূর্বে তিনি হেফাজতের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি ছিলেন।

১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি খতমে নবুয়ত আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন।

রাজনীতি

১৯৭৫ সালে মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী রহ. জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে চলে আসেন এবং ৭ নভেম্বর ২০১৫ সালে তিনি এর মহাসচিবের দায়িত্ব লাভ করেন।

পরিবার

মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী রহ. পারিবারিক জীবনে ২ ছেলে মাওলানা যুবায়ের হুসাইন ও মাওলানা জাবের কাসেমী এবং দুই মেয়ের জনক ছিলেন।

-এনটি

পূর্ববর্তি সংবাদসোমবার সকাল ৯টায় জাতীয় ঈদগাহে মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর জানাজা
পরবর্তি সংবাদপ্যারিসে ম্যাক্রোঁর বিরুদ্ধে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ, আটক ১৫০