আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসনের এক যুগ পূর্তি নিয়ে মাতামাতির দিন আজ। টানা শাসন ক্ষমতায় থাকলে রুটিন উন্নয়ন প্রকল্পে অগ্রগতি হয় স্বাভাবিক নিয়মে। স্বৈরশাসনে নিষ্ঠুর দমনে দৃশ্যতঃ স্থিতিশীল পরিবেশ থাকলে সুমধুর উন্নয়ন সংগীত ও লোপাট চলে সমানতালে। প্রতিবছর উন্নয়ন বাজেট করতে হয় যে কোন সরকারকেই। তা খরচ করার বাধ্যবাধকতায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা দৈনন্দিন কাজেরই অংশ। হয়েছেও তাই। অস্বীকারের উপায় নেই।
কিন্তু এক যুগে উন্নয়নের চেয়ে ঢের বেশি হয়েছে লোপাট। মেগা প্রকল্পের কয়েকটি কুমির ছানা যুগব্যাপী দেখিয়ে আর ক্ষমতার নিয়ামক শক্তিগুলোকে অবাধ সুযোগ সুবিধায় তুষ্ট করে তিন জাতীয় নির্বাচন পার করাটা অবশ্যই সাফল্য!
তবে এক যুগের যে সব সাফল্যগাঁথা (?) আজ গণমাধ্যমে উঠে আসতে পারতো তা না পেয়ে দারুণভাবে হতাশ হয়েছি! অবশ্য আমার হতাশায় কি যায় আসে। রঙিন ক্রোড়পত্রের নিচে দুর্নীতি, দুঃশাসন, অনাচার, সর্বব্যাপী লুটপাট চাপা পড়াই স্বাভাবিক। আবার এটাও ঠিক যে, বিরোধীদলহীন বাংলাদেশে এখনও গণমাধ্যম বিশেষত সংবাদপত্রইতো ছিটেফোটা হলেও তুলে আনে।
এক যুগের সাফল্যের তালিকায় ১৭ টাকা মোটা চাল ৬০ টাকায়, বিশ টাকার পেয়াজ ৩০০ টাকায়, ১৫ টাকার আলু ৫৫ টাকায়, ৬০-৭০ টাকার আদা-রসুন ২০০টাকায় খাওয়ানো কিংবা ৪৫০ টাকার আবাসিক গ্যাস ৯৫০ টাকায়, ১৪ টাকার পরিবহন সিএনজি ৪৩ টাকায়, ২.৫০ টাকার বিদ্যুৎ ৭টাকায় ব্যবহার করানোর মত সাফল্যগুলোর আলোচনায় না আসলে সরকারের প্রতি অবিচার করা হবে বৈকি!
দশ টাকার বাসভাড়া ৩০-৪০ টাকা, মোবাইল রিচার্জে শতকরা ৩৩টাকা কেটে নেওয়া, ধর্ষণকে মহামারি রূপ দেওয়া, দেশের বন্দর, নদী, সড়ক-রেলপথ প্রায় বিনা মাশুলে প্রতিবেশী দেশকে ব্যবহার করতে দেওয়া, দিনের ভোট আগের রাতে করে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে বনবাসে পাঠনো, সব টেলিভিশনকে বিটিভি বানানো, সংবাদপত্রকে নিজেদের প্রচারপত্রে রূপায়ণ, প্রশাসনের প্রতিটি স্তরকে দলীয় শাখা কার্যালয়ে বিবর্তন, বাহিনীগুলোকে ব্যক্তি ও দলের ক্যাডার গ্রুপে পরিনত করার মত সাফল্যতো অভূতপূর্ব!!
যাকগে, ১২ বছরের সাফল্যের ফিরিস্তিতো আর ১২ লাইনে দেওয়া সম্ভব নয়। তার চেয়ে আজ ৭ জানুয়ারি ২০২১ তারিখের জাতীয় সংবাদপত্রে যুগপূর্তির উচ্ছ্বসিত প্রশংসার ফাঁক গলে (এক দিনে) অন্যরকম যেসব সাফল্যচিত্র উঠে এসেছে তা দেখে নেওয়া যাক।
লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে
-এনটি
