পাকিস্তানে সামাজিক মাধ্যমে রাসূল অবমাননা: তিনজনের ফাঁসির আদেশ

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে সামাজিক মাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে ধৃষ্ঠতাপূর্ণ কন্টেন্ট প্রচার সংক্রান্ত মামলায় তিন আসামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে দেশটির সন্ত্রাসবিরোধী একটি আদালত।

আদালত অবমাননার দায়ে অপর একজন আসামিকে দশ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার রায় ঘোষণা করে সন্ত্রাসবিরোধী আদালতের বিচারক রাজা জাওয়াদ আব্বাস হাসান বলেছেন, তিন আসামি আবদুল ওয়াহেদ, রানা নোমান রাফাকাত ও নাসির আহমেদের বিরুদ্ধে রাসূল অবমাননার অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়েছে।

আদালত আসামীদের মৃত্যুদণ্ড এবং তাদের প্রত্যেককে ১ লাখ রুপি জরিমানা করেছে। আর ধর্ম অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত অধ্যাপক আনোয়ার আহমেদকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং এক লক্ষ রুপি জরিমানা করেছে। মামলায় অন্য চার পলাতক আসামির জামিন-অযোগ্য স্থায়ী গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

পলাতক আসামিরা হলেন, তৈয়ব সরদার, রাও কায়সার শেহজাদ, ফরাজ পারভেজ এবং পারভেজ ইকবাল। যাদের বিরুদ্ধে আদালত অ-জামিনযোগ্য স্থায়ী গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। মামলার বাদী হয়ে হাফিজ মালিক মাজহার জাভেদ অ্যাডভোকেট, এফআইএর পক্ষে চৌধুরী মুহাম্মদ শফাকত অ্যাডভোকেট এবং আসামিদের পক্ষে আসাদ জামাল ও সৈয়দ হাসান আব্বাস অ্যাডভোকেট আদালতে হাজির হন।

এই মামলার বাদী ছিলেন হাফিজ এহতেশাম। মামলার বাদীর উকিল হাফিজ মালিক মাজহার জাভেদ অ্যাডভোকেট, ডিডব্লিউকে মামলার বিবরণ দেওয়ার সময় বলেন, “২০১৭ সালে যখন ইসলামের বিরুদ্ধে ধৃষ্ঠতাপূর্ণ বিষয় সংক্রান্ত মামলা হয়েছিল, তখন আমার বাদী এফআইএর কাছে গিয়ে অভিযোগ করেছিলেন যে, এই ধরনের লোকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হোক, যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলামের বিরুদ্ধে অবমাননার কন্টেন্ট আপলোড করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা না করলে আমরা ইসলামাবাদ হাইকোর্টে রুজু করি। ইসলামাবাদ হাইকোর্ট মামলাটি নিবন্ধ করার নির্দেশ দেয় এবং আদালতের আদেশে হাফিজ এহতেশাম মোহাম্মদের অভিযোগের ভিত্তিতে ১৯ মার্চ, ২০১৭  তারিখে মামলাটি এফআইএ ইসলামাবাদে দায়ের করা হয়েছিল। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে এই বিচারকার্য অব্যাহত থাকে। ডিসেম্বর মাসে মামলার রায়টি সংরক্ষণ করে নেওয়া হয়েছিল, যা আজ ঘোষণা করা হল।

তিনি আরও বলেন, ‘আসামিদের একজন নাসির আহমদ নবুওয়াত দাবি করেছিলেন। আর আসামি আবদুল ওয়াহেদ ও রানা এবং নোমান রাফাকাত জনৈক হিন্দু লেখকের বইয়ের অনুবাদ করেছিলেন, যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে ছিল। জুরআত-এ-তাহকিক নামে সামাজিক যোগাযোগের পেজে এটি আপলোড করা হয়। এই পৃষ্ঠাগুলিতে আরও অবমাননাকর বিষয়বস্তু আপলোড করা হয়েছিল।’

তিনি বলেন, এ মামলায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও অ্যান্টি-সাইবার ক্রাইম আইনের প্রাসঙ্গিক বিধানও জারি করা হয়েছিল। যার ভিত্তিতে আবদুল ওয়াহেদ ও রানা নোমান রাফাকাত উভয়কে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদেরকে জরিমানাও করা হয়েছে।

মামলার বাদী হাফিজ এহতেশাম গণমাধ্যমকে বলেন, “মামলাটি এফআইএ সাইবার ক্রাইম সার্কেল ইসলামাবাদে দায়ের করা হয় এবং এটি রিসালাত অবমাননা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সংক্রান্ত প্রথম মামলা, যেখানে আসামিদের সাজা শোনানো হল।’

তিনি এই ধারণাটি উড়িয়ে দেন যে, আসামীরা হিন্দু লেখকের বইটির অনুবাদ করেননি। তিনি বলেন, একথা আসামীপক্ষের লোকজন বলছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা শুধু অনুবাদই করেনি; বরং জিজ্ঞাসাবাদের সময় এটাও সামনে এসেছে যে, তারা  আরও বেশি ধৃষ্ঠতাপূর্ণ কন্টেন্ট আপলোড করেছে।

ডি ডব্লিউ, বিবিসি    থেকে ভাষান্তর: সাইফুল ইসলাম

-এমএসআই

পূর্ববর্তি সংবাদগৃহবধূকে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ, নাটোরে আ’লীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ২
পরবর্তি সংবাদতুরস্কের কট্টর সমালোচক ব্রেট ম্যাকগার্ককে মধ্যপ্রাচ্যের সমন্বয়ক নিয়োগ দিয়েছেন বাইডেন