বন্যায় বিপর্যস্ত সিরিয়া, শরণার্থীদের করুণ হাহাকার

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: করুণ অবস্থার মধ্য দিয়ে কাটছে উত্তর সিরিয়ার শরণার্থীদের দিনগুলো৷ তীব্র শৈত্য প্রবাহ, ঝড়ো-হাওয়া ও অবিরাম বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় ধ্বসে পড়েছে তাদের একমাত্র আশ্রয়ের শত শত তাবু৷ মাথা গুঁজার মতো সামান্য ঠাঁইটুকু পাচ্ছে না সেখানকার বাসিন্দারা।

স্থানীয় সূত্র আল-কুদস কে জানায়, অবিরাম বৃষ্টিপাত এবং বন্যার ফলে ইদলিব পল্লীতে ভেঙে পড়েছে শরণার্থীদের শিবিরগুলো। এর ফলে একটি শিশু মারা যায় এবং তিনজন গুরুতর আহত হয়৷ পানি আর কাদায় শরণার্থীদের চলাচল দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে৷ তাবুর সাথে সংযুক্ত ৮ কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তাবু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে৷

ফলে আহত ও অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার জন্য কোনো গাড়ি তাবু পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না৷ সেদিন এক বৃদ্ধা মহিলা প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়লে কম্বলে পেচিয়ে কাঁধে করে কাদা-পানির দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছিল৷

সূত্রটি আরো জানায়, ইদলিবের উত্তরের পল্লীতে ‘নাগরিক প্রতিরক্ষা’ দলগুলি তাঁবুগুলোর ধ্বংসস্তূপ অপসারণে কাজ করছে। আহতদের কাছাকাছি মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করার চেষ্টা করেছে।

তাদের বিবৃতি অনুসারে, গত তিনদিন ধরে লাগাতার বৃষ্টিপাতের ফলে শুধু ইদলিব এবং আলেপ্পো গ্রামাঞ্চলেই ১৬৯ টিরও বেশি তাঁবু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ লেবাননেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতশত আশ্রয় শিবির৷

আল-জাজিরার তথ্যমতে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ও বস্তিচ্যুত হয়।

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শিবিরগুলির একজন কর্মী ‘রামি আল-আসাদ’ ‘‘আল-কুদস আল-আরবী’’ কে জানান, কাদা আর পানিতে তাঁবুগুলির অবস্থা অত্যন্ত পর্যদুস্ত৷ আর্থিক সংকটের কারণে ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁবুর কোনো পরিবর্তন ও উন্নতি করা সম্ভব হয়নি ৷ প্রতি বছরই রোদ বৃষ্টি ও ঝড়-বাতাসে তারা প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷

এই তাঁবুগুলো প্রবল বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ার মোকাবেলায় টিকে থাকতে সক্ষম নয়৷

তিনি আরো জানান, উত্তর সিরিয়ার আবহাওয়া অনেক অঞ্চল থেকে একদম ভিন্ন৷ তিন-চার দিন যাবত এখানে লাগাতার মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে৷ এর সঙ্গে প্রচন্ড শৈত্য প্রবাহ৷ শীতবস্ত্র ও উষ্ণ উপকরণের অভাবে সেখানে বিভিন্ন রোগ ও মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে ৷ সেই সাথে রয়েছে পানি ও খাদ্যর সংকট৷

রামি আসসায়্যিদ বলেন, লোকেরা নাইলনের ব্যাগ, জাইতুনের ডাল ও পরিত্যাক্ত জীর্ণ কাপড় দিয়ে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে।

তিনি আরো বলেন, আজ ১০ বছর হলো সিরিয়া জ্বলছে৷ লক্ষ লক্ষ গৃহচ্যুত মানুষ খাদ্য ও নিরাপত্তার অভাবে চরম দুর্ভোগ ও দুর্দিনের মধ্যে দিয়ে কালাতিপাত করছে৷ অতি শীঘ্রই এর একটা স্থায়ী সমাধান বের করা অত্যন্ত জরুরী৷

আলবালাদ আরবী সংবাদপত্রের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইদলিবের পল্লিগুলোতে “সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্থ তাঁবুর সংখ্যা ২৭৮ টিরও বেশিতে গিয়ে পৌঁছেছে৷ আর ৫১৩ টি তাঁবু আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷

এদিকে ‘শরণার্থী অধিকার সংস্থা’ জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সংস্থাগুলি, পাশাপাশি আরব স্টেটস লিগ এবং মানবাধিকার বিষয়ে কর্মরত সকল পক্ষকে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার শিবিরগুলি সহ অন্য সকল বিপদগ্রস্ত শরণার্থীদের সহায়তায় অতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে৷

আল-কুদস ও আলজাজিরা আরবি থেকে অনুবাদ: ইয়াহইয়া বিন আবু বকর

-এমএসআই

পূর্ববর্তি সংবাদনবম-দশম শ্রেণি থেকে ডারউইনের বিবর্তনবাদ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে: চরমোনাইর পীর
পরবর্তি সংবাদঅগ্নিকাণ্ডে সেরামের কয়েকটি ফ্লোর পুড়ে ছাই, ৫ জনের লাশ উদ্ধার