ভারতে কলকাতাসহ আরো চারটি রাজধানী করার দাবি মমতার

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ভারতের রাজধানী একটি নয়, চারটি হওয়া উচিত। তার মধ্যে একটি হওয়া উচিত কলকাতা। শনিবার নেতাজি জয়ন্তীতে এমনই দাবি তুললেন।

তার এই ‘আক্রমণ’ মোদি সরকারের ‘দিল্লিকেন্দ্রিকতা’র বিরুদ্ধে। সেই দিল্লিনির্ভরতার বাইরে বেরিয়ে কলকাতাসহ দেশটির চার প্রান্তে চারটি রাজধানী করার দাবি তুলেছেন মমতা। এ নিয়ে সংসদে দলীয় সাংসদদের সক্রিয় হওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।

এমন দাবি দেশটির ইতিহাসে সাম্প্রতিককালে কেউ করেছেন বলে তথ্যাভিজ্ঞরা মনে করতে পারছেন না। রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে মমতার কলকাতাকে গুরুত্ব দেয়ার এই দাবি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ও বটে।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে শনিবার শ্যামবাজার থেকে রেড রোড পর্যন্ত দীর্ঘ পদযাত্রা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মিছিলের শেষে বক্তৃতাও করেন তিনি। সেখানেই তিনি দাবি তোলেন, ‘ভারতের দক্ষিণ, উত্তর, পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব— এই চারটি প্রান্তে চারটি রাজধানী হোক।’

তার প্রশ্ন, ‘দিল্লিতে কী আছে? কেন একটা জায়গায় সংসদ সীমাবদ্ধ থাকবে?’

দেশে চার রাজধানীর পাশাপাশি সংসদের অধিবেশনেরও বিকেন্দ্রীকরণ চেয়েছেন মমতা। তার দাবি, ‘ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারটি জায়গায় অধিবেশন হোক। আমরা সকলের জন্য বলছি। দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। ওয়ান লিডার, ওয়ান নেশনের মূল্য কী আছে?’

মমতার বক্তব্যের মূল লক্ষ্য যে প্রধানমন্ত্রী মোদি, তা রাজনৈতিক মহলের কাছে স্পষ্ট। বক্তৃতায় স্বাধীনতার সময় থেকে কলকাতার গুরুত্ব তুলে ধরেন মমতা। সেই সাথে দেশে নবজাগরণ, স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার গৌরবময় ভূমিকার কথাও টেনে এনে কলকাতাকে ভারতের অন্যতম রাজধানী করার দাবি করেন।

নতুন ওই দাবির পিছনে যুক্তিও তুলে ধরেছেন মমতা। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নিয়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে পুরনো অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নেতাজির ভাবনাপ্রসূত যোজনা কমিশন তুলে দেয়া হয়েছে। এখন তৈরি হয়েছে নীতি আয়োগ। এখন কেন্দ্র আর রাজ্যের সাথে কোনো বিষয়ে কথা বলে না। আলোচনা করে না। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।’

এই সূত্রে আরো একবার যোজনা কমিশন ফিরিয়ে দেয়ার দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

ইতিহাসের দৃষ্টান্ত দিয়ে মমতা জানিয়েছেন, নেতাজির আইএনএ ফৌজে সারা দেশের সব জাতি অংশগ্রহণ করেছিল। নেতাজি ইংরেজদের তৈরি করা ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি ভেঙে দিয়েছিলেন। সেই প্রেক্ষিত টেনে ‘বৈচিত্রের মধ্যে দেশের ঐক্য’ লুকিয়ে, এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

নেতাজির জন্মদিনকে ‘জাতীয় ছুটি’ ঘোষণার জন্য আগেই মোদিকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছিলেন মমতা। শনিবার আবারো ওই দাবিতে জোর দিয়েছেন তিনি। সেই সাথে নেতাজি সম্পর্কিত তথ্যও প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছেন।

নেতাজির জন্মদিনকে ‘পরাক্রম দিবস’ হিসাবে ঘোষণা নিয়ে মমতার আপত্তি ছিলই। ‘পরাক্রম দিবস’কে কার্যত অগ্রাহ্য করে তিনি নেতাজির জন্মদিনকে ‘দেশনায়ক দিবস’ হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। সমস্ত সরকারি কর্মসূচিতেও ২৩ জানুয়ারিকে ‘দেশনায়ক দিবস’ হিসেবেই উল্লেখ করা হচ্ছে।

শনিবার রেড রোডে নেতাজি মূর্তির অদূরের মঞ্চ থেকে সেই সূত্রেই মমতা বলেছেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম নেতাজিকে ‘দেশনায়ক’ হিসেবে আখ্যা দেন। আমরা রবীন্দ্রনাথ আর নেতাজিকে মিলিয়ে দিয়েছি।’’

রাজ্যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নামে ‘ডক’ তুলে দেয়া নিয়েও কেন্দ্রকে বিঁধেছেন মমতা। পাশাপাশিই, রাজ্যে আইএনএ স্মরণে শহিদস্তম্ভ তৈরির কথাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

পূর্ববর্তি সংবাদকাশিমপুর কারাগারে প্রভাবশালী আসামির ‘নারীসঙ্গ’: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, জঘন্য
পরবর্তি সংবাদএবার নওফেল বললেন: ‘মাদ্রাসা শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানের করতে কাজ করছি’