ওয়াজ মাহফিলে কোরআন-হাদীসের রেফারেন্স চেয়ে আইনি নোটিশ: কিছু সত্য কথন

মাওলানা সাঈদ আহমদ ।।

এ কথা ঠিক যে কিছু বক্তা কাল্পনিক গল্প, ভুল কথা ইত্যাদি বলে থাকে। কিন্তু নির্ভরযোগ্য উলামায়ে কেরাম সর্বদা কোরআন-হাদীসের আলোকেই আলোচনা করেন। শুধু তাই নয়, তাঁরা এ বিষয়ে সবাইকে দিকনির্দেশনা দেন ও সতর্ক করে থাকেন।

দীনি বয়ান ও আলোচনার নীতিমালা ও আদবকেতা কী তা তাঁরাই জানেন, তাঁরাই প্রয়োগ করেন, তাঁরাই অন্যদের শেখান। দীনি পত্রিকাগুলোতে “প্রচলিত ভুল” জাতীয় বিভাগগুলো, “এসব হাদীস নয়” জাতীয় বইগুলো এবং উসূলুল ইফতার বইগুলো এ শিক্ষাই বহন করে যে দীনি বিষয়ে ভুল আকিদার-বিশ্বাস প্রচার-পোষন করা যাবে না, ভুল কথা বলা-গ্রহণ করা যাবে না, ভুল ফতওয়া দেওয়া-গ্রহণ করা যাবে না, ভুল হাদীস-কিসসা শোনানো-গ্রহণ করা যাবে না। এ ছাড়া উক্ত বিষয়ে উলামায়ে কেরামের আরো বহু উদ্যোগ-আয়োজন রয়েছে।

সুতরাং এ বিষয়টি মূলত তাঁদেরই দেখার। এটি আইনজীবির বিষয় আসলে নয়, আইনি নোটিশের ব্যাপার নয়।

***

এখানে দায় কি শুধু বক্তা-ওয়ায়েজের? আর কারো কোন দায় নেই? নির্ভরযোগ্য আলিম যখন সমাজ ও রাষ্ট্রের সামনে কোরআন-হাদীসের আলোকে শরয়ী বক্তব্য পেশ করলেন, তখন তা মানার ও গ্রহণ করার দায় কি তাদের নেই? অবশ্যই রয়েছে। অতএব উক্ত বক্তব্য সবাইকে মানতে হবে ও মাথা পেতে নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী হোক বা প্রধান বিচারপতি, সরকার হোক বা জনগন, সবল হোক বা দুর্বল— সবাইকে কোরআন-হাদীসের কথা মানতেই হবে।

বিশেষত তার প্রকাশ্য বিরোধিতা কোনভাবেই করা যাবে না।

অতএব কোরআন-হাদীসের আলোকে বক্তব্য দেওয়া যেমন বক্তার দায়, ওই কথা মানা ও মাথা পেতে নেওয়া সকলের দায়।

সুতরাং এ ব্যাপারে যদি আইনি নোটিশ দিতেই হয় তাহলে বলা দরকার— আলোচনা কোরআন-হাদীস মোতাবেক হতে হবে এবং তা সবাইকে মানতে হবে। কেউ এমন কথার বিরোধিতার ধৃষ্টতা করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

একটি উদাহরণ- প্রাণীর ভাষ্কর্য তথা মূর্তির বিরুদ্ধে আলিমগণ যে বক্তব্য দিয়ছেন ও দিচ্ছেন তা শতভাগ কোরআন-হাদীসের আলোকেই।অথচ কিছু মানুষ এর প্রকাশ্য বিরোধিতা করছে। কই, এসব তো নোটিশ প্রদানকারীর নজরে পড়ছে না? অথচ তিনি নাম নিচ্ছেন ইসলামের, পেয়ার দেখাচ্ছেন কোরআন-হাদীসের!!

***

নোটিশে বলা হয়েছে, রাস্ট্রধর্ম ইসলাম।অতএব ইসলামি বিধানের সঠিক প্রচার-প্রসার সরকারের পবিত্র দায়িত্ব।

আসলে প্রচারের আগে সরকারের দায়িত্ব— নিজে শরীয়ার বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া, সমাজ ও রাষ্ট্রে তা কায়েম করা, শরীয়াবিরোধী সবকিছ দূরীভূত করা এবং …..

কোরআন-হাদীসের আইন ও বিধিবিধান নিজে মানে না, শুধু প্রচার করে, কেবল অন্যকে মানতে বলে— এর কোন সুযোগ নেই।

***

আইনজীবি সাহেব কেবল দীনি মাহফিলের ক্ষেত্রে ইসলামের প্রয়োগ চান কেন? এর বাইরেও সমাজ ও রাষ্ট্রে যে বহু বহু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র রয়েছে সেখানে ইসলাম চান না কেন? তিনি যদি

أفتؤمنون ببعض الكتاب و تكفرون ببعض؟

-এই দলের না হয়ে থাকেন, তবে তার বলা উচিত— ইসলাম রাস্ট্রধর্ম এবং এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান, অতএব রাস্ট্রের সকল ক্ষেত্রে ইসলাম কায়েম করা সরকারের পবিত্র দায়িত্ব। আইনব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, অর্থব্যবস্থাসহ যাবতীয় ক্ষেত্রে ইসলাম কায়েম করতে হবে, তবেই কেবল এটি একটি কল্যাণময় রাস্ট্রে পরিণত হবে।

বিশেষত নোটিশ প্রদানকারী কি তার নিজ কর্মক্ষেত্র অর্থাৎ আইন-আদালতপাড়ায় এবং গোটা আইনব্যবস্থায় ইসলামের প্রয়োগ চাবেন এবং এ দাবি তুলবেন— কোরআন-হাদীসের আইন চাই? না চাইলে তো বলতে হবে—— “দাল মে কালা হাঁয়”!!!

 

***

নোটিশে বলা হয়েছে, আলেমরা নাকি বিভিন্ন সময় রাস্ট্রবিরোধী বক্তব্য দেন।এটা পরিহারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত!

মুলত সরকার ও তার কার্যক্রমের সমালোচনা করা আর রাস্ট্রবিরোধী বক্তব্য দেওয়া এক কথা নয়।একজন সাধারণ সচেতন নাগরিকও এ কথা বোঝে।বোঝে না শুধু চাটুকাররা।গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগন ও নাগরিকদের পূর্ণ অধিকার আছে সরকার ও তার কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করার এবং তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার।

দ্বিতীয়ত, আলিমরা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন কখন? কোন কারণ ছাড়াই?

তা নয়। বরং সরকার যখন ইসলাম বিরোধী, কোরআন-হাদীস বিরোধী আইন করে বা এ ধরণের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে তখনই আলিমগণ ইসলামের পক্ষ নেন ও ইসলামি দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন, যা অবধারিতভাব সরকারের কারণেই তার বিরুদ্ধে যায়।সুতরাং এটা কোরআন-হাদীসেরই পক্ষাবলম্বন। নোটিশ প্রদানকারী বারবার ইসলামের পবিত্রতার কথা বলেও এর বিরুদ্ধে যান কেন?

সুতরাং তার বলা উচিত— রাস্ট্রধর্ম ইসলাম। অতএব সরকার ইসলাম বিরোধী কোন আইন করতে পারবে না এবং কোরআন-হাদীস বিরোধী কোন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে না এবং কাউকে করতে দেবে না।

এমন করা হলে কোন আলিম আর সরকার বিরোধী বক্তব্য কখোনই দেবেন না।কিন্তু তা না হলে আলিমরা অবশ্যই ইসলামের পক্ষাবলম্বন করবেন।এতে কার বিরোধিতা হলো না হলো তার পরওয়া তারা করবেন না। আর এটাই তাদের প্রতি কোরআন-হাদীস প্রদত্ত গুরু দায়িত্ব।

আশ্চর্য, ইসলামের নাম নিয়ে নোটিশ প্রদানকারীর নজরে আলিমদের সরকার বিরোধী বক্তব্য ধরা পড়ে। কিন্তু সরকারের ইসলাম বিরোধী কার্যক্রম ধরা পড়ে না।

আসলে নোটিশের শেষাংশ দ্বারাই বোঝা যায়, নোটিশ প্রদানকারী এই আইনজীবির “মহব্বতের” মূল জায়গা ইসলাম ও কোরআন-হাদীস, না সরকার ও সরকারি দল!!!

ইসলামের নাম নিয়ে কী ধোঁকাপূর্ণভাবে সরকারের চাটুকারিতা!!!!!

লেখক: শিক্ষক, মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া ঢাকা

 

পূর্ববর্তি সংবাদরুশ গোয়েন্দাদের ৪০ বছর প্রচেষ্টার ফসল ডোনাল্ড ট্রাম্প: গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন
পরবর্তি সংবাদচৌর্যবৃত্তির শাস্তি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মামলা করবেন ক্ষুব্ধ সামিয়া!