প্রজাতন্ত্র দিবস নাকি ভারতের ইতিহাসে লেপ্টে যাওয়া অন্যতম কালো দিন?

এস.এ জাহিদ।।

এবছর ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসকে দেশটির জনগণ একটি কালো দিন হিসেবে পালন করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পক্ষ থেকে চাপিয়ে দেওয়া আইনের বিরুদ্ধে সেদিন দেশটির রাজধানী দিল্লিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন লাখ লাখ মানুষ।

বিক্ষোভকারীদের ওপর দেশটির পুলিশ ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা পিছু হটার বদলে লাল কেল্লা দখল করে তার ওপর থেকে ভারতীয় পতাকা সরিয়ে সেখানে শিখদের পতাকা উত্তোলন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরিস্থিতিটির ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর কুচকাওয়াজ ছেড়ে তিনি নিজের বাসভবনে ফিরে আসেন। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে বিক্ষোভ সমাবেশে শুধু শিখ কৃষকরা নয়, তাদের সাথে সাধারণ জনগণও অংশ নিয়েছিল। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী তাদের সংখ্য লাখের উপরে ছিল। মুম্বাই এবং বেঙ্গালুরুতেও সেদিন বিক্ষোভ হয়েছে।

এটাই হল মোদী সরকার ও গণতান্ত্রিক ভারতের আসল চেহারা। যা প্রজাতন্ত্র দিবসে দেশের রাজধানী দখল করে পালন করলো দেশটির জনগণ।

ভারতের কৃষক ও সাধারণ জনগণের এই ঐতিহাসিক বিক্ষোভ পৃথিবীর সামনে মোদী সরকারের চেহারা থেকে পর্দা সরিয়ে দিল। এই দিন মোদী সরকারের চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের ধারাবাহিক বিক্ষোভের ৬২ তম দিন ছিল।

নরেন্দ্র মোদী যে আরএসএসের সংখ্যালঘু নীতি এবং হিন্দুত্ববাদের প্রচারকে তার প্রধান লক্ষ্য হিসাবে বিবেচনা করে তা প্রমাণিত হয়ে গেছে। বর্তমানে ভারতে মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান, দলিত শ্রেণীসহ কোন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ই নিরাপদ নয়। প্রজাতন্ত্র দিবসে জনগণের বিক্ষোভ মোদী সরকারের জন্য অত্যন্ত লজ্জার এবং এই বিক্ষোভ পুরো দুনিয়ায় ভারতের আসল অবস্থা তুলে ধরেছে।

শুধু দিল্লি নয় অধিকৃত কাশ্মীরেও সেদিন ভারতীয় বাহিনীর বর্বরতা অব্যাহত ছিল। এর মাধ্যমে ভারতের বর্বর চেহারা বিশ্বের সামনে আরো স্পষ্ট হয়েছে।

আমি এর আগেও অনেকবার লিখেছি যে, মোদী সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট নীতি ও কাজ-কর্ম ভারতকে ধ্বংস ও বিভক্তির পথে নিয়ে যাচ্ছে। সরকারি প্রজাতন্ত্র দিবস এবং জনগণের কালো এই দিনে দিল্লির লাল কেল্লা থেকে ভারতের জাতীয় পতাকা নামিয়ে সেখানে শিখদের পতাকা উত্তোলন তার স্পষ্ট প্রমাণ বহন করছে।

দিল্লিতে তথাকথিত প্রজাতন্ত্র দিবসে কৃষক এবং ভারতীয় জনগণের সাথে যা করা হয়েছিল, যুগ যুগ ধরে তার থেকেও কয়েকগুণ বেশি বর্বরতা চালানো হচ্ছে অধিকৃত কাশ্মীরের নিপীড়িত মানুষের সাথে। মোদী সরকারের এমন বর্বরতা পুরোপুরি হিটলারের সাথে মিলে যায়।

কাশ্মীরিদের জন্মভূমিতে হিন্দুত্ববাদের আধিপত্য বিস্তার করে সেখানে মুসলমানদের সংখ্যালঘু করে তাদের কোণঠাসা করার তোড়জোড় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মোদি সরকার। কিন্তু সবধরণের জঘন্য ও নৃশংস প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কাশ্মীরীদের স্বাধীনচেতা মনোভাবে ফাটল ধরানোর চেষ্টায় সফল হতে পারেনি মোদি প্রশাসন।

কয়েক দশক ধরে নিরস্ত্র-নিপীড়িত কাশ্মীরিদের নৈতিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিষয়ে সোচ্চার পাকিস্তান। পৃথিবীব্যাপী কাশ্মীরিদের আওয়াজ পৌঁছিয়ে দিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করে দেশটি। যদিও ভারত বরাবরই পাকিস্তানের দাবি অস্বীকার করে আসছে।

আজাদ কাশ্মীরের বর্তমান সরকারও সত্যিকার অর্থে অধিকৃত কাশ্মীরের মুসলিম ভাইদের পক্ষে আওয়াজ তুলছে। আজাদ কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী রাজা ফারুক হায়দার এবং তার মন্ত্রীরা অধিকৃত কাশ্মীরের মুসলমানদের ওপর ভারতীয় নৃশংসতা বিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য যথ্যসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যা বিশ্বের সামনে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, আজাদ কাশ্মীর ও ভারতের দখল করা কাশ্মীরের মধ্যে কতটা পার্থক্য রয়েছে।

একদিকে ভারতের দমন-নিপীড়নের কারণে অধিকৃত কাশ্মীরিদের জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে অন্যদিকে আজাদ কাশ্মীরের জনগণ তাদের নিজস্ব সংসদ এবং সরকার নিয়ে অবাধে স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করছে।

সম্প্রতি ভারত আরও একটি বড় ধাক্কা খেল। গত ১৫ বছর ধরে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রোপাগান্ডা চালিয়ে আসছিল তা পৃথিবীর সামনে স্পষ্ট হয়ে গেছে। সেই প্রোপাগান্ডাই এখন ভারতের গলায় কাটা হয়ে বিঁধছে।

ভারতের পক্ষ থেকে কাশ্মীরিদের অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বর্তমানে আওয়াজ তুলতে দেখা গেছে মার্কিন কংগ্রেস, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটিশ সংসদ, ওআইসি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিকে। এর ফলেই বর্তমানে ভারতকে জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে কাশ্মীর ইস্যু সমাধান করার এবং কাশ্মীরিদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর হাবভাবে দেখে মনে হয় তিনি বিশ্বের সামনে ভারতের ভাবমূর্তি আরো ক্ষুণ্ন করে ভারতকে টুকরো টুকরো করার সংকল্প হাতে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

ডেইলি জং থেকে অনুবাদ  রায়হান মুহাম্মদ।

-এনটি

পূর্ববর্তি সংবাদ২৪ ঘণ্টায় কমেছে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা, বেড়েছে শনাক্ত ও সুস্থতা
পরবর্তি সংবাদসেনা অভ্যুত্থান ও সু চির গ্রেফতার নিয়ে কী বলছে মিয়ানমারের বন্ধু চীন?