সাংবাদিক না অন্ধ দলীয় কর্মী!

শরীফ মুহাম্মদ ।।

দলবাজ সাংবাদিক। এটা একটা পরিচিতিমূলক শব্দবন্ধ। যে সাংবাদিক দলবাজি করে তার জন্য এবং তাকে এটা বলা হয়। অর্থাৎ তার আসল পরিচয় সাংবাদিক, এর সঙ্গে সে কিছুটা দলবাজিও করে।

আরেকটা হচ্ছে, মিডিয়াবাজ দলীয় কর্মী। এই লোকটা আসলে সাংবাদিক না, তার প্রধান পরিচয় হলো, সে দলের অন্ধ-কর্মী। তবে দলবাজি করার জন্য সাংবাদিকতার অঙ্গনটাকে সে বেছে নিয়েছে। তার নিবেদনের জায়গা অন্ধ রাজনীতি। সাংবাদিকতা সেই রাজনীতির ব্যবহারের হাতিয়ার।

এখানে ‘মৌসুফ-সিফাতের’ ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটার মধ্যে ‘সাংবাদিক’ মৌসুফ, ‘দলবাজ’ তার সিফাত। দ্বিতীয়টার মধ্যে দলীয়কর্মী মৌসুফ, মিডিয়াবাজ তার সিফাত। মৌসুফ মুখ্য, সিফাত তার অনুষঙ্গ। মৌসুফ বিশেষ্য আর সিফাত হচ্ছে বিশেষণ। মৌসুফ- সিফাত উলটপালট হয়ে গেলে পরিচিতির মূল প্রবাহটাই ওলট-পালট হয়ে যায়।

সাংবাদিকতায় দলবাজির চর্চাটা আগে থেকেই ছিল। তবে গতকাল থেকে আমাদের দেশে মৌসুফ- সিফতের ওলট-পালটটা বেশি পরিমাণে দেখছি। কিছু রাজনৈতিক অন্ধ কর্মী ও টাউট যেন সাংবাদিকতায় ঢুকে গেছে! স্পর্শকাতর সময়ে সাংবাদিক সুলভ নির্লিপ্ততার লেশমাত্র তারা রাখতে পারছে না। দলবাজির ‘হক’ আদায় করেই সফল সাংবাদিক হয়ে যাচ্ছে!

দলবাজ সাংবাদিকের জায়গায় মিডিয়াবাজ রাজনৈতিক কর্মীর প্রাবল্য দ্বন্দ্বমুখর এ পরিস্থিতিটাকে আরো ঘোলাটে করে তুলেছে। সাংবাদিকের দলবাজি একটা স্বতন্ত্র সমস্যা; যে কোনো দেশে এটা বড় রকম অবক্ষয় ও পতনের সূচক। কিন্তু তবু একটা সান্ত্বনার জায়গা এই ছিল যে, দলবাজি করলেও তার মূল পরিচয়টা সাংবাদিক। সাংবাদিকতা ও দলবাজি কখনো মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেলে যে মানুষটা ন্যূনতম সাংবাদিক, সে সাংবাদিকতার পক্ষে নিজেকে দাঁড় করায়। দলবাজির চাদর কিছুক্ষণের জন্য শরীর থেকে সে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।

অপরদিকে যে লোকটা আগাগোড়াই অন্ধ রাজনৈতিক কর্মী, ধান্ধা, পেশা ও জীবিকার ক্ষেত্র হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নিয়েছে, সাংবাদিকতার জন্য তার পক্ষ থেকে কোনো সুসংবাদ নেই। অন্ধ দলবাজি কখনো সাংবাদিকতার মাথায় কুঠারাঘাত করলেও সে ফেরাতে আসে না, ব্যথিতও বোধ করে না। সাংবাদিকতার জন্য তার মমতা নয়, সাংবাদিকতা কেবলই তার ব্যবহারের বিষয়, তার মমতা ও সমর্পণ সবটুকুই অন্ধ দলবাজির পায়ের কাছে।

এক সময় দেশে দল ও রাজনীতির সাথে যুক্ত সাংবাদিক থাকতো, এখন সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত অন্ধ রাজনীতিকের ভিড় বেড়ে গেছে। মৌসুফ- সিফাত ওলট- পালট হয়ে গেছে। সাংবাদিকতা ও দলবাজির এই বিবর্তন ও বিকৃতি দেশের ‘পোকায় খাওয়া সাংবাদিকতা’কে ভবিষ্যতে কোথায় নিয়ে ফেলবে দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

-এমএসআই

পূর্ববর্তি সংবাদইসরাইলের ও আরবদের সখ্যতায় ভূমিকা রাখায় নোবেলের জন্য মনোনীত ট্রাম্প জামাতা
পরবর্তি সংবাদবৃহস্পতিবার হেফাজতের কেন্দ্রীয় পরিচিতি সভা, উপস্থিত থাকবেন মাওলানা বাবুনগরী